ভারতের প্রথম অলিম্পিক পদকজয়ী তিনিই। অথচ পরবর্তীকালে মাঠ ছেড়ে পেশা হিসেবে বেছে নেন অভিনয়। খেলাধুলোর মতো অভিনয় জগতেও বেশ নাম করেন কলকাতার এই ক্রিড়াবিদ। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অলিম্পিকে পদক জেতার স্বপ্ন প্রায় সব খেলোয়াড়ের মনেই থাকে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত ইভেন্টে পদক জেতা। এমনটা করতে পারলে,সেই ক্রীড়াবিদকে ঘিরে সকলের উত্তেজনা থাকে তুঙ্গে। যে সম্মান পেয়েছেন অভিনব বিন্দ্রা, নীরজ চোপড়া থেকে শুরু করে আরও অনেকেই। তবে এর শুরুটা হয়েছিল স্বাধীনতারও বহু আগে। প্রথমবার ১৯০০ সালে ব্যক্তিগত ইভেন্টে দেশের জন্য পদক জিতেছিলেন নরম্যান প্রিচার্ড। তাও এবার একটা নয়, একজোড়া পদক জিতে ঘরে ফিরেছিলেন কলকাতার ছেলে। তবে স্রেফ খেলোয়াড় হিসেবেই যে তিনি বিখ্যাত এমনটা নয়। অভিনয় জগতেও বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন নরম্যান।
:আরও শুনুন:
শেষবেলায় স্বপ্নভঙ্গ! অলিম্পিকে তীরে এসে তরী ডুবেছিল যে ভারতীয়দের
২০২৪-এ অলিম্পিকের আসর বসছে প্যারিসে। সেবারও ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’র আয়োজক দেশ ছিল প্যারিস। ভারত তখনও ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। দেশজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে। এরই মাঝে কলকাতায় জন্ম হয় নরম্যানের। তিলোত্তমার বুকে বড় হওয়া নরম্যান, একসময় শোভাবাজার কাল্বে ফুটবল খেলতেন। সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো কলেজে পড়লেও সেদিকে তেমন আগ্রহ ছিল না। তাঁর বরাবরের টান খেলার মাঠ। যদিও ফুটবলার হিসেবে বিখ্যাত হননি তিনি। তাঁর পছন্দের জায়গা ছিল দৌড়ানো। ১০০ মিটার দৌড়ে বাংলার সেরার সেরা হয়েছিলেন টানা সাত বছর। স্প্রিন্ট এবং হার্ডল, দুই ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শীতা ছিল নরম্যানের। ১৯০০ সালে ব্রিটেনের এক দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নরম্যান। সেখানে তাঁর দুরন্ত পারফরম্যান্স সহজেই জায়গা করে দেয় ব্রিটেনের অলিম্পিক দলে। কিন্তু জন্মসূত্রে নরম্যান একজন ভারতীয়। তাই কোন দেশের হয়ে নরম্যান প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধে। শেষমেশ ভারতের হয়েই প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পান নরম্যান। আর সেবারেই দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তোলেন এই দৌড়বিদ। ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে মোট পাঁচটি ব্যক্তিগত ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন নরম্যান। তার মধ্যে দুটি ইভেন্টে রুপো জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ও হার্ডল রেসে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন তিনি। শুধু ভারত নয়, গোটা এশিয়া মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন নরম্যান। আর সেই অলিম্পিকেই জোড়া পদক জয়! স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে নিয়ে বেশ মাতামাতি হয়েছিল সেই সময়। দৌড়ের সঙ্গে ফুটবলেও যেহেতু সমান পারদর্শী ছিলেন, তাই নরম্যানকে নতুন একটি দায়িত্বও দেওয়া হয়। টানা দু’বছর ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। তবে এরপর পাকাপাকি ভাবেই আমেরিকা চলে যান নরম্যান। মাঠ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেন পুরপুরি। শুরু হয় তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায়।
:আরও শুনুন:
দেশের সৈনিক হওয়ার সাধ ছিল, ক্রিকেটের সৈনিক হলেন গম্ভীর
ঠিক ধরেছেন, এরপর থেকেই নরম্যানের অভিনয় যাত্রা শুরু। হলিউডে তখনও সবাক যুগ শুরু হয়নি। তাই নির্বাক চলচিত্রেই নিজের পসার জমিয়েছিলেন নরম্যান। জীবদ্দশায় মোট ২৭ টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সে যুগের বিখ্যাত সব পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন নরম্যান। অল্পদিনেই অভিনেতা হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। একে একে তাঁর সিনেমাও জনপ্রিয় হতে শুরু করে। অভিনয় জগতে অবশ্য নিজের পুরনো নামটাও ব্যবহার করতেন না প্রিচার্ড। সেখানে সবাই তাঁকে চিনত নরম্যান ট্রেভর হিসেবে। রুপোলি পর্দার সঙ্গে মঞ্চাভিনয়েও সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। তবে ১৯২৯ সালে মস্তিস্কের অসুখে মারা যান এই কিংবদন্তি। ততদিনে অবশ্য ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম পাকা করে ফেলেছেন নরম্যান। তাই এখনও অলিম্পিক নিয়ে যে কোনও চর্চায় তাঁর নাম উঠতে বাধ্য।