পেশায় আইটি কর্মী। নামী সংস্থায় চাকরি করেন। মাইনেও পান ভালোই। তাও সপ্তাহান্তে অটো চালান বেঙ্গালুরের যুবক। শখের বশে নয়, একেবারে যাত্রী নিয়েই শহরের ইতিউতি পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু কেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অটো চালাচ্ছেন যুবক। পরনে কালো হুডি। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাও যুবকের অটোতে সওয়ারি হয়েই বেশ ঘাবড়ে গেলেন এক যাত্রী। কারণ যুবক যে হুডি পরে অটো চালাচ্ছেন তার পিছনে রয়েছে নামী আইটি সংস্থার লোগো। সাধারণত সংস্থার কর্মীদেরই এই ধরনের পোশাক দেওয়া হয়। কিন্তু একজন অটোচালকের কাছে এ জিনিস এল কীভাবে? স্বাভাবিকভাবেই যুবককে প্রশ্ন করেন ওই যাত্রী। উত্তর শুনে তিনি রীতিমতো অবাক হন।
:আরও শুনুন:
কানওয়ার যাত্রায় জাতপাতের দ্বন্দ্ব, এদিকে মুসলিমদের তৈরি বাঁক কাঁধে হাঁটছেন ভক্তরা
আসলে, এই বেঙ্গালুরুর এই অটোচালক পেশায় একজন আইটিকর্মী। কাজ করেন নামী সংস্থায়। মাইনেও যে খুব একটা খারাপ পান তা নয়। তা সত্ত্বেও অটো চালাচ্ছেন ওই যুবক। রোজ অবশ্য অটো নিয়ে রাস্তায় বেরোতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই সে সময়ট অফিসে কাটে। কিন্তু সপ্তাহান্তে যে দুদিন অফিস ছুটি, সেই দুদিন গোটা শহরে অটো চালিয়ে বেড়ান এই যুবক। আর তখনই পরনে থাকে সংস্থার দেওয়া এই হুডি। এমনিতে বেঙ্গালুরুর মতো শহরে এ দৃশ্য খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। অনেকেই বাড়তি উপার্জনের জন্য এই বিকল্প পথ বেছে নেন। স্রেফ অটো নয়, বাইক, ক্যাব এইসবও চালান যুবক-যুবতীরা। কেউ কেউ অফিস ফেরার পথে কিছুক্ষণের জন্য এই কাজ করে থাকেন। এতে রথ দেখা আর কলা বেচা দুইই হয়। অর্থাৎ অফিসের কাজও হল, আবার অতিরিক্ত উপার্জনও হল। কিন্তু এই যুবকের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট স্বচ্ছল। তাই অতিরিক্ত উপার্জন করতে এই কাজ তিনি করেন না। বরং তাঁর অটো চালানোর নেপথ্যে রয়েছে অন্য গল্প।
:আরও শুনুন:
রাতারাতি জনপ্রিয় মহিলা ‘মুখ্যমন্ত্রী’! ভক্ত-সমর্থক রোজই বাড়ছে লাফিয়ে
যুবকের দাবি, তিনি বড় একা মানুষ। সারা সপ্তাহ অফিসের কাজ করতে কেটে গেলেও, সপ্তাহান্তে কথা বলার মতোও আউকে খুঁজে পান না তিনি। তাই একাকীত্ব কাটাতেই এই ব্যবস্থা। সারাদিন বিভিন্ন যাত্রীর সঙ্গে শহরের এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়িয়ে কখন যে সময় কেটে যায় টের পান না। ছুটি ফুরোলে আবার অফিস। এভাবেই মাসের পর মাস কাটিয়ে ফেলেছেন ওই যুবক। কথায় আছে, বড় হলে নাকি বন্ধু কমে যায়। ছোটবেলায় যে বন্ধুদের জন্য বাড়িতে বকা খেতেও আপত্তি ছিল না, বড় হলে তারা সবাই যেন কোথায় হারিয়ে যায়। বড়বেলায় চারপাশে মানুষ অনেক। কিন্তু সেই ভিড়ে বন্ধু নেই বললেই চলে। সবাই যে যার নিজের জগতে ব্যস্ত। কেউ একা থাকলেও সেটা তার নিজের একা থাকা। সেখানে আর কারও প্রবেশের অধিকার নেই। তাই হাজার খুঁজেও অবসর কাটানোর সঙ্গী খুঁজে পাননি এই যুবক। আসলে, বেঙ্গালুরের মতো শহরে অনেকেই স্রেফ চাকরির টানে ছুটে আসেন। তাই চট করে এখানে বন্ধু খুঁজে পাওয়া কঠিন। নেটদুনিয়ায় এই ঘটনায় অনেকেই মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ যুবকের জন্য রীতিমতো দুঃখ পেয়েছেন। কেউ আবার এই অবস্থার জন্য যুবককেই দায়ী করেছেন। তবে মোটের উপর সবাই বেশ অবাকই হয়েছেন। এতদিন টাকার অভাবে এই ধরনের অতিরিক্ত কাজ করত সকলে। কিন্তু একাকীত্ব কাটানোর জন্যও যে এমনকিছু করা যায়, তা কল্পনাও করতে পারেননি নেটিজেনদের একাংশ।