মারা হবে লাখ লাখ পাখি। তাও আবার সরকারি উদ্যোগে। সম্প্রতি এমনটাই ঘোষণা করেছে এই দুই দেশের সরকার। কিছুদিনের মধ্যে মেরে ফেলা হবে পাঁচ লক্ষ পেঁচা এবং দশ লক্ষ কাক। নেপথ্যে কী কারণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বন্যপ্রাণ হত্যা আইনত অপরাধ। বাঘ, হাতি কিংবা গণ্ডার শিকার কড়াভাবে নিষিদ্ধ। ধরা পড়লেই হতে পারে জেল কিংবা মোটা টাকা জরিমানা। একইভাবে বনের মধ্যে পাখি মারাও অপরাধ। কিন্তু সরকারের তরফেই যদি সে ব্যবস্থা করা হয়?
আরও শুনুন: রাস্তায় পুলিশ আছে, হুঁশিয়ার! ট্র্যাফিক আইন ভাঙার আগেই বাতলে দিচ্ছে গুগল ম্যাপ
সম্প্রতি ঠিক এমনটাই হয়েছে। কেনিয়া এবং আমেরিকার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েকদিনের মধ্যে অন্তত কয়েক লক্ষ পাখি হত্যা করা হবে। মূলত বনের পাখি। তালিকায় রয়েছে প্যাঁচা আর কাক। সংখ্যাটা অবশ্যই চমকে দেওয়ার মতো। জানা গিয়েছে, কেনিয়ায় মারা হবে ১০ লক্ষ কাক। আর আমেরিকা সরকার হত্যা করবে ৫ লক্ষ পেঁচা। যেখানে গোটা বিশ্বজুড়ে পরিবেশ ভাবনায় এত এত আন্দোলন, সেখানে আমেরিকার মতো দেশের এই পাখি হত্যার রীতিমতো সমালোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু না! দুই দেশের তরফেই পাখি মারার বিশেষ কারণ দেখানো হয়েছে। যা কার্যত মেনে নিয়েছেন অনেকেই।
আরও শুনুন: ৩০০০ বছরের পুরনো কাশী, এর থেকেও প্রাচীন শহর আছে পৃথিবীতে?
আসলে, পরিবেশে সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। প্রকৃতির নিয়মেই তা হয়ে থাকে। বড় পাখি বা পশু ছোট পাখিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। আবার ছোট প্রাণী তার থেকে ছোটদের খেয়ে বেঁচে থাকে। কোনওভাবে বড় প্রাণীর সংখ্যা বেড়ে গেলে ছোটদের অস্তিত্ব সংকট হতে বাধ্য। আমেরিকা আর কেনিয়াতেও সেই সমস্যাই হয়েছে। দুই দেশে কাক আর প্যাঁচার সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে ছোট পাখিগুলির টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেনিয়ার কথাই ধরা যাক। এমনিতে সে দেশে ভারতীয় কাক থাকার কথা নয়। কিন্তু উপনিবেশকালে ভারত থেকে ব্রিটেনের জাহাজে চড়ে বহু কাক কেনিয়ায় পৌঁছে যায়। এতদিন ধরে তারাই কেনিয়ায় থেকে বংশবিস্তার করেছে। কেনিয়ার পরিবেশের সঙ্গেও ভালমতো মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এতে সমস্যায় পড়েছে সে দেশের ছোট পাখিরা। কাকের জ্বালায় অতিষ্ট সেখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও। মনোরম জায়গায় ভিড় করে কাক বসে থাকলে, কার ভালোলাগে? এছাড়া সে দেশের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ ওই ছোট ছোট পাখিগুলি। সেসব মরে গেলে পরিবেশের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেরও ক্ষতি। তাই এই বায়স নিধনের ভাবনা। এদিকে আমেরিকাও ঠিক একই কারণে পেঁচা নিধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে অবশ্য অন্য কোনও পাখির ক্ষতি হচ্ছে না। তবে আমেরিকায় এক বিশেষ শ্রেণির প্যাঁচা মেরে ফেলছে নিজের প্রজাতির ছোট প্যাঁচাদের। তাতে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বইকী! আর তাই আমেরিকা সরকারের সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে মেরে ফেলতে ৫ লক্ষ বড় পেঁচা।
আরও শুনুন: স্বামী বিবেকানন্দ আর মহম্মদ শামি সতীর্থ! কোন ক্লাবে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন জানেন?
কাক মারার ক্ষেত্রে কেনিয়া সরকারর বিষ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনিতে কাক যেখানে খুশি উড়ে যায়, খাবার খায়। তাই এই উপায়েই কাক মারা সহজ বলে ভেবেছে সে দেশের সরকার। শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিনে বিষযুক্ত খাবার ফেলে রাখা হচ্ছে। যাতে সেই খাবার কাক খেলেই মারা যায়। তবে সেই মৃত কাক অন্য কোনও পশু খেলে কোনও সমস্যা নেই। স্রেফ কাক ছাড়া আর কোনও পশু বা পাখির ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে কড়া নজর রেখেছে প্রশাসন। তবে পেঁচার ক্ষেত্রে এমনটা করা সম্ভব নয়। তাই আমেরিকায় প্যাঁচা মারার জন্য কাজে লাগানো হয়েছে দক্ষ শিকারিদের। যে কোনও প্যাঁচা মারলেই হল না। বেছে বেছে মারতে হবে বড় পেঁচা। তাই শিকারী ছাড়া এমনটা করা সম্ভব নয়। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পাখি মারার কাজ শুরু করেছে দুই দেশের সরকার। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে লক্ষমাত্রাও পূরণ হয়ে যাবে।