শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এক কাহিনিতে ছিল এমন এক চোর, যে অনেক কসরত করে জানালার শিক বাঁকিয়ে এক বাড়িতে ঢুকেছিল। কিন্তু দুটো কাচের ফুলদানি ছাড়া আর কিছু চুরি করা তার ক্ষমতায় কুলোনি। গল্পে নয়, বাস্তবেও হাজির এমন চোরেরা। যাদের চুরির নজির দেখলে তাজ্জব হতে হয়। শুনে নেওয়া যাক।
ইদানীং কালে নেতা থেকে জনতা, সকলের সঙ্গেই যেভাবে চুরি প্রসঙ্গ জুড়ে যায়, তাতে অবাক হওয়ার আর কিছু বাকি নেই। চুরি বিদ্যা নাকি মহাবিদ্যা। কিন্তু মহাবিদ্যায় হাত পাকালেও সে বিদ্যার ফল সবসময় খুব ভালো কিছু হয় না। না না, ধরা পড়ে শাস্তি পাওয়ার কথা বলছি না। কিন্তু সফলভাবে চুরি করলেও, অনেকসময় সেই চুরি করা জিনিসটি দেখলেই তাজ্জব হতে হয়। কখনও দেখা যায়, সে জিনিসটি আদৌ মূল্যবান কিছুই নয়। আবার কখনও আপাতদৃষ্টিতে সে জিনিসটিকে নিতান্ত সাধারণ বলেই মনে হয়। রাস্তা, পার্ক, শপিং মল এমন নানা জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এমনই কিছু কাণ্ডের কথা জানায় দেশবিদেশের পুলিশ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু চুরির গল্প।
আরও শুনুন:
ব্রেন গিয়েছে চুরি, তাও আবার আইনস্টাইনের! কে সেই কুখ্যাত চোর?
সম্প্রতি পোলক প্রদেশের কাউন্টি শেরিফের অফিস থেকে একটি ভিডিও মিলেছিল। যেখানে দেখা গিয়েছিল, ঘরের ভিতর অতি সন্তর্পণে ঢুকছে এক যুবক। হাবভাব থেকে স্পষ্ট, গোটা কাজটাই লুকিয়ে করছে সে, ঘর থেকে কিছু সরানোই তার উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষমেশ যখন সে বেরোল, দেখা গেল তার হাতে কেবল এক বোতল কমলালেবুর রস আর একটি মদের বোতল।
এমনই সাধারণ জিনিস চুরির কাণ্ড দেখেছে জাপানের ওকলাহোমা পুলিশ। তাদের কাছে জমা পড়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, একটি বাড়ির বাগান থেকে কিছু জিনিস চুরি করছে এক যুবক। কিন্তু সেসব জিনিস দেখে পুলিশও হাঁ! ছোটদের লাল রঙের খেলনা গাড়ি আর প্লাস্টিকের বাস্কেটবল পোস্ট নিয়ে চম্পট দিয়েছে সে চোর।
মন্টগোমারি কাউন্টির পুলিশ আবার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এমন এক চোরের সন্ধান পায়, যিনি অনেক কসরত করে একটি গরিলার মূর্তি চুরি করছিলেন। তার ওজন প্রায় ৭০ কেজির কাছাকাছি। এহেন ভারী মূর্তি চুরি করা তো আর মুখের কথা নয়। কিন্তু কোনও সুদৃশ্য জিনিস নয়, একটি গরিলার মূর্তি চুরি করে যে তাঁর কী উপকার হবে, সে কথা পুলিশেরও মাথায় ঢোকেনি।
আরও শুনুন:
চোর বাবাজির বোধোদয়! মন্দিরে চুরির ৯ বছর পরে কৃষ্ণের গয়না ফেরত, সঙ্গে জরিমানাও
সান দিয়েগো কাউন্টির শেরিফ আবার জানিয়েছিলেন কম্বল চুরির ঘটনা। তাঁর দপ্তরে জমা পড়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি দিনের আলোয় বাড়ির ভিতরে ঢুকেছেন, বেরিয়ে আসছেন দুটি কম্বল হাতে করে। তবে জানা গিয়েছে, এ কম্বল যে সে কম্বল নয়। ‘হার্মেস’ নামের এই কম্বলগুলির দাম ভারতের হিসেবে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা করে। সুতরাং দেখতে তুচ্ছ হলেও, এ চুরি হরেদরে ঠিক তুচ্ছ নয়।
গল্পের চোরেরা এমন নানা কিছু চুরি করে বটে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পেই যেমন এক বিয়েবাড়িতে হরেক চোরের দেখা মিলেছিল। কেউ চুরি করেছিল ঝাঁটা তো কেউ একমুঠো কাঁচালঙ্কা। তবে বাস্তবের পুকুরচুরির দুনিয়াতেও যে কোনও কোনও চোর এমন যা হোক কিছু চুরি করে, তা জেনে বিস্মিতই হতে হয়।