কাশীকেই পৃথিবীর সবথেকে পুরনো শহর বলা হয়। কথিত আছে, স্বয়ং মহাদেব এই জনপদের প্রতিষ্ঠাতা। তাই শহরের প্রতিটি গলিতে শিবের ছোঁয়া মেলে। কিন্তু সত্যিই কি এই শহরের বয়স সবথেকে বেশি? নাকি বিশ্বের প্রাচীনতম শহরের তালিকায় রয়েছে আরও অনেক নাম? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিবক্ষেত্র কাশী। গঙ্গাতীরে সাজানো সুন্দর এক মন্দির নগরী। প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমান হাজারও শিবভক্ত। শহরের প্রাচীনত্বের টানেও অনেকে ছুটে যান কাশী। এই শহর নিয়ে গবেষণাও করেন অনেকেই। সেই সুবাদে শহরের বয়স সম্পর্কে খানিক আন্দাজ মেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শহর ৩০০০ বছরের পুরনো। বলাই বাহুল্য, এর থেকে পুরনো শহর ভূ-ভারতে আর নেই। কিন্তু গোটা বিশ্বের নিরিখে এই শহর মোটেও প্রাচীনতম নয়।
বরং এমন কিছু শহর রয়েছে যার বয়স ১১ হাজার বছরেরও বেশি। তালিকায় প্রথমেই রয়েছে জেরিকো নামে এক শহর। যা পাল্যস্তাইনের অন্তর্গত। একেই বিশ্বের প্রাচীনতম শহর বলা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এর বয়স প্রায় ১১ হাজার বছর। এতদিন ধরে পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে এই শহর। তবে এখানে মানুষের বাস নেই বললেই চলে। একই বয়সের আরও একটি শহর রয়েছে। সিরিয়ার দামাস্কাসের বয়সও ১১ হাজার বছর। এক সময় এই শহর বিভিন্ন কারণে বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। কালের গর্ভে সে গৌরব হারিয়েছে। তবে শহরের অস্তিত্বে আঁচ লাগেনি এতটুকু। সিরিয়াতেই রয়েছে আরও এক প্রাচীন শহর আলেপ্পো। এই শহরের বয়স ৮ হাজার বছর। লেবাননএর বিবলস শহরটিও ৭ হাজার বছরের পুরনো। সমুদ্রের ধারে তৈরি এই শহরের স্থাপত্য ছিল দেখার মতো। বিশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন এখানে আশ্রয়ের খোঁজে এসেছেন। তাই এখানে অদ্ভুত এক মিশ্র সংস্কৃতির মিলমিশ দেখা যায়। প্রাচীনতার নিরিখে গ্রিসও কম যায় না। এমনিতেই সেখানকার ঐতিহ্য গোটা বিশ্বে প্রসিদ্ধ। এই গ্রিসেও রয়েছে ৭ হাজার বছর পুরনো শহর আরগোস। এই শহর জন্ম হয়েছিল পারস্য যুদ্ধের সময়। অনেকে বলেন, সেই ছাপ এখনও এই শহরের ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে। আবার এথেন্সের বয়সও নাকি ৭ হাজার বছর। শিল্প, স্থাপত্য, সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই শহর গোটা বিশ্বে প্রসিদ্ধ। একইসঙ্গে প্রাচীনতার দিক দিয়েও অনেককে পিছনে ফেলে গ্রিসের এথেন্স।
এখানেই শেষ নয়, প্রাচীন শহরের তালিকায় রয়েছে বুলগেরিয়া, ইরাক বা ইরানের একাধিক শহর। তালিকায় রয়েছে জেরুজালেমও। এই শহরের ইতিহাসেই ধ্বংসের ছাপ বোধহয় সবথেকে স্পষ্ট। বহুবার বিভিন্ন শত্রুর হানায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে জেরুজালেম। বলা হয়, এই শহরই যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান। তাই ইতিহাসে বরাবরই এর গুরুত্ব আলাদা। বলাই বাহুল্য, ভারতের কাশী এই সব শহরের থেকে অনেকটাই নবীন। অন্তত কয়েক হাজার বছরের পার্থক্য রয়েছে বিশ্বের অন্যান্য প্রাচীন শহরের সঙ্গে। তাও প্রাচীনত্বের ভারে কাশীও নেহাতই ফেলনা নয়।