মীরার ভজন শুনে ঘুম ভাঙত। দুধ আনতে যাওয়ার সময়ও গুণ গুণ করতেন কৃষ্ণনাম। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান আইডল খ্যাত সলমন আলি নিজের জীবনের স্মৃতিচারণায় এমনটাই বলেছেন। ঠিক কী বলছেন শিল্পী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মানুষের পৃথিবী বিভাজনে ভরা। জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের হরেক কুঠুরি চারদিকে। নানা কারণেই মানুষ সেই অলাতচক্রে ঘুরে মেরে। সেখানে সংগীত যেন পরম উপশম। যা শুদ্ধ করে আমাদের অন্তর। বুঝিয়ে দেয়, সংগীতে কোনও বিভাজন নেই। যিনি গাইছেন তাঁর একমাত্র পরিচয় তিনি শিল্পী। কোনও ধর্ম-সম্প্রদায়ের ঘেরাটোপে তাঁকে আটকে রাখা যায় না।
এর উদাহরণ অবশ্য একটা নয়। এমন অনেক শিল্পীর নাম করাই যায়, যাঁরা ধর্মবিশ্বাসের উর্ধ্বে গিয়ে সঙ্গীতচর্চা করেছেন। এ দেশে নজরুলের লেখা শ্যামা সঙ্গীত গেয়ে মাতৃ বন্দনায় মেতে ওঠেন সাধক। আবার ভিমসেন যোশীর আল্লা-উপসনা মুগ্ধ হয়ে শোনা যায়। এ আর রহমানের মতো বিখ্যাত সুরকার তৈরি করেছেন এমন কিছু কালজয়ী গান, যা আসলে হিন্দু দেবতাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া। মন্দিরে মন্দিরে দেদার বেজেছে সেই গান। কিছুদিন আগেও নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল এক তরুণীর গাওয়া শিববন্দনা। যিনি নিজে একজন মুসলিম। কিন্তু তাঁর গান শুনে বোঝার উপায় ছিল না ধর্ম পরিচয়। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। একজন শিল্পী গান করেন অন্তর দিয়ে। ঈশ্বরের বন্দনা হলে সেখানে অন্তরের সমর্পনই শেষ কথা। সেই দেবতা আদৌ তাঁর ধর্মের কি না, এমনটা বিচারের প্রয়োজন নেই। একই ছবি ধরা পড়েছে বিখ্যাত টেলিভিশন শো ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে। সম্প্রতি সেখানে অতিথি বিচারক হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন ভজন গাইয়ে অনুপ জালোটা। একাধিক কালজয়ী গানের মাধ্যমে সঙ্গীত জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েছেন অনুপ জালোটা। তাঁর কন্ঠ্যে ভজন বা গজল শুনতে দূর দূরান্ত পাড়ি দেন শ্রোতারা। তাঁর সামনেই সেদিনের এপিসোডে মীরার ভজন গেয়ে শোনান সলমন।
গানটা যে কতটা ভালো হয়েছিল, তার প্রমাণ মিলেছিল দর্শকদের করতালির শব্দে। মঞ্চে উপস্থিত অনুপ জালোটা আবারও গানটি গেয়ে শোনান। যথারীতি তাঁর নিজস্ব গায়কির জোরে গানটিকে অন্য মাট্রে পৌঁছে দেন জালোটা সাহেব। করতালির শব্দে ফেটে পড়ে দর্শকাসন। যথারীতি গান শুনে মুগ্ধ হন সলমনও। তারপরই নিজের ছোটবেলায় ফিরে যান শিল্পী। অনুপ জালোটাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মীরার এই ভজন অন্তত লক্ষবার শুনেছেন সলমন। কারণ এই গান তাঁর বাড়ির লাগোয়া মন্দিরেই বাজত। ভজন ঘুম ভাঙত। এবং এর সুর এমনভাবে তাঁর কানে বসে যায়, যে বাড়ির সাধারণ কাজ করতে গিয়েও মীরার ভজন গুনগুন করে উঠতেন সলমন। এমনকি দুধ আনতে যাওয়ার পথেও এই গান করতে করতে যেতেন। একজন শিল্পীর ক্ষেত্রে অবশ্য এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছোট থেকেই যে গানের মধ্যে ধর্মের ভেদ খুঁজে পেতেন না সলমন, তা বোঝা গেল তাঁর কথাতেই।