বাঙালির ছোটবেলার নস্টালজিয়া। বিস্কুট থেকে কেক, সর্বত্র হাজির ছিল ব্রিটানিয়া। কিন্তু সেই সংস্থাই এবার ঝাঁপ বন্ধ করল কলকাতায়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বাঙালির চায়ের কাপে তুফান তুলতেই হোক, কি ছোটদের দুধ বিস্কুটের প্লেট, সব জায়গায় ‘প্রেজেন্ট প্লিজ’ বলেছে ব্রিটানিয়া। ভারতের প্রথম বিস্কুট উৎপাদক সংস্থা হিসেবেই তার পথচলা শুরু। বিশ্বযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতা, দেশভাগ, কী না দেখেছে সে! কিন্তু কলকাতার সঙ্গে এবার যোগাযোগ ফুরোল তার। ৭৫ বছরের দীর্ঘ সম্পর্কে দাঁড়ি টেনে মহানগরকে বিদায় জানাল ব্রিটানিয়া।
আরও শুনুন:
বোরোলিন থেকে পার্লে-জি… স্বাধীনতার আগেই যাত্রা শুরু, রমরমিয়ে চলছে যেসব স্বদেশি পণ্য
বিস্কুট হোক বা টোস্ট, রুটি বা কেক… ব্রিটানিয়া সর্বত্র হাজির। ১৮৯২ সালে, মাত্র ২৯৫ টাকা নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাও এই কলকাতার বুকেই। অবশ্য কর্ণধার ছিলেন যাঁরা, তাঁরা সকলেই সাহেব। প্রথমদিকে মধ্য কলকাতার একটি ছোট বাড়িতে বিস্কুট তৈরি করা হত। সংস্থাটি পরে গুপ্ত ব্রাদার্স কিনে নেয়, যার প্রধান ছিলেন নলিন চন্দ্র গুপ্ত। তবে এর শরিক ছিলেন সি এইচ হোমস নামে একজন ইংরেজ ব্যবসায়ীও, তিনিও কলকাতারই বাসিন্দা। এঁদের তত্ত্বাবধানেই ব্রিটানিয়া বিস্কুট কোম্পানি লিমিটেড (বিবিসিও) চালু হয়। ক্রমে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল গ্যাস ওভেন, বিস্কুট তৈরির মেশিন ব্যবহার করা হতে থাকে কারখানায়। বাড়তে থাকে লাভ। এতটাই, যে, ১৯২৪ সালে মুম্বইতেও খুলে যায় ব্রিটানিয়ার শাখা।
১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৩৯-এ শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সবকিছুই দেখেছে এই সংস্থা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, মিত্রশক্তির সৈন্যদের খাবার সরবরাহের জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছিল ব্রিটানিয়া। তার দরুনই লাফিয়ে বাড়ে সংস্থার বার্ষিক লাভ। নানারকমের বিস্কুটের পাশাপাশি কেক, রুটি তৈরি করে দেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক সংস্থা হয়ে দাঁড়ায় ব্রিটানিয়া। আর এই পুরো যাত্রাতেই বড় ভূমিকা নিয়েছিল কলকাতা শহর। আর সেখানেই এবার বন্ধ হয়ে গেল কারখানা।
আরও শুনুন:
স্বদেশী আন্দোলনই প্রেরণা, বাঙালির ব্যবসায় জোয়ার এনেছিল সুরেন্দ্রমোহনের ‘ডাকব্যাক’
যদিও এমনটা যে হবে, তা ভাবাই যায়নি। কারণ সাম্প্রতিক অতীতে বারবার রাজ্যে লগ্নি করারই আশ্বাস দিয়েছিল এই সংস্থা। বাংলায় দুটি কারখানা খোলার আশ্বাসই পাওয়া গিয়েছিল বরং। কিন্তু তার বদলে, ১৯৪৭ সালে স্থাপিত তারাতলার বিশাল কারখানাটিকে বন্ধ করে দেওয়ার রাস্তায় হাঁটল ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ। গোটা দেশে এই সংস্থার যত কারখানা রয়েছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানাটি ছিল এই শহরেই। কিন্তু বাঙালির সেই নস্টালজিয়া থেকেই এবার মুছে গেল ব্রিটানিয়ার ঘ্রাণ।