দুধ থেকে মাংস, একাধিক খাবার নিষিদ্ধ এ দেশে। না জেনেই সেসব নিষিদ্ধ খাবার খেয়ে ফেলছেন না তো? কী কী রয়েছে সেই তালিকায়? মারাত্মক ক্ষতি এড়াতে শুনে নিন আগেভাগেই।
‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’, দেবী অন্নপূর্ণার কাছে প্রার্থনা ছিল ঈশ্বরী পাটনীর। যা সহজে মেলে, এককালে পুষ্টি খুঁজে নেওয়ার তাগিদ ছিল সেখান থেকেই। কিন্তু এখন বিজ্ঞাপন যা বলে, তা-ই নির্ভেজাল সত্য। ভেজালের যুগেও মানুষের এ বিশ্বাসে চিড় ধরেনি। তাই বিজ্ঞাপন দেখেই পুষ্টি খুঁজি আমরা, বেছে নিই নিত্যদিনের মেনু। অথচ খাবার মানেই তা পুষ্টিকর নয়। উলটে, স্বাদে ভালো হলেও শরীরের ক্ষতি করতে পারে অনেক খাবার। সেইসব বিচার করেই একাধিক খাবারকে নিষিদ্ধের তালিকায় রেখেছে দেশের খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর তথা FSSAI। জানেন কি, সেই তালিকায় রয়েছে কোন কোন খাবার?
আরও শুনুন: গুঁড়ো মশলায় ভেজাল-বিষ! গোটা মশলাতেই ফেরার পরামর্শ দিচ্ছে ICMR
সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে দুধের নাম। ভয় পাবেন না, যে কোনও দুধ নয়। তবে চিনা দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার ২০০৮ সাল থেকেই রয়েছে FSSAI-এর নিষেধের তালিকায়। প্রোটিন বাড়াতে নানা বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় এতে। বিশেষ করে শিশুখাদ্য হিসেবে যে ফর্মুলা দুধ মেলে, তাতেও সেই রাসায়নিক ব্যবহার করে ওই সংস্থাগুলি। ২০১৯ সালে চিন থেকে রসুন আমদানি করাও নিষিদ্ধ হয়। অতিরিক্ত কীটনাশক থাকার দরুনই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
যে সমস্ত খাবার জেনেটিক্যালি মডিফায়েড, অর্থাৎ জিনসজ্জা পালটে যাদের স্বাদ-গুণের হেরফের করা হয়, সেসব খাবার এ দেশে নিষিদ্ধ। ফল পাকানোর জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করাও এখানে নিষিদ্ধ, ফলে কার্বাইড দেওয়া ফল বিক্রি করাও এ দেশে আইনত অপরাধ। একইভাবে কেক-পেস্ট্রিতে বহুল ব্যবহৃত ট্রান্স ফ্যাট কোলেস্টেরল বাড়ায়, তাই এই উপাদান আছে এমন খাবারও FSSAI-এর তালিকা অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
আরও শুনুন: মশলায় মিশছে কাঠের গুঁড়ো! দিল্লির ঘটনা চিন্তা বাড়াচ্ছে গোটা দেশেরই
প্রোটিন খাদ্যের তালিকায় মাংস তো থাকবেই। কিন্তু সেখানেও উঁচিয়ে আছে নিষেধের তর্জনী। নিষিদ্ধ মাংসের তালিকায় আছে খরগোশ, কচ্ছপ, হরিণের মাংস। এই প্রাণীগুলি যাতে বিলুপ্ত হয়ে না যায়, সে কথা ভেবেই এই নির্দেশ।
নানারকমের তেলও রয়েছে এই নিষেধের তালিকায়। বেশি মাত্রায় এরুসিক অ্যাসিড থাকার দরুন ২০০৩ সালে নিষিদ্ধ হয় সাসাফারাস অয়েল। এটি হৃদরোগের সম্ভাবনা ডেকে আনতে পারে। ১৯৯০ সাল থেকেই ব্রোমিনেটেড ভেজিটেবল অয়েল নিষিদ্ধ করা হয় একই কারণে। সোডাজাতীয় নানারকম বেভারেজেও স্বাদ বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হত। তবে স্নায়ুঘটিত রোগের আশঙ্কা বাড়ায় বলে আপাতত অন্তত শ-খানেক দেশে এটি নিষিদ্ধ হয়েছে।
সম্প্রতি বোর্নভিটা-সহ একই ধরনের একাধিক পানীয়ের ‘হেলথ ড্রিংক’ তকমা কেড়েছে কেন্দ্র। এই সব পানীয় নিজেদের সঙ্গে ‘হেলথ ড্রিংক’-এর তকমা ঝুলিয়ে রাখলে কী হবে, ২০০৬-র খাদ্য সুরক্ষা বিধিতে হেলথ ড্রিংক বলে কোনও শ্রেণির উল্লেখই নেই। ‘ন্যাশনাল কমিশন অফ প্রোটেকশন ফর চাইল্ড রাইটস’-এর তদন্ত জানাচ্ছে, এই সব পানীয়তেই রয়েছে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি, যা কোনও পরিস্থিতিতেই ‘হেলদি’ নয়। একই দোষে দুষ্ট সেরেল্যাকও। ওবেসিটি-সহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুদের খাবার নিয়ে যে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা রয়েছে, প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে সেই নিয়ম মেনেই শিশুখাদ্য বানায় নেসলে। কিন্তু এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে যে সেরেল্যাক পাওয়া যায়, তাতেই মেশানো হয় বাড়তি চিনি। একইভাবে প্রচুর চিনি থাকে এনার্জি ড্রিংকেও। চটজলদি এনার্জি বাড়ানোর জন্য মাত্রাতিরিক্ত চিনি অর্থাৎ গ্লুকোজে ঠাসা হচ্ছে এইসব খাদ্য পানীয়। যা আদতে হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিষ।
আরও শুনুন: বিদেশে নিষিদ্ধ দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা, দেশবাসীর চোখ খুলবে কি?
পুঁজির দুনিয়ায় আসলে সবই বাজারের পণ্য হয়ে যায়। সে মানুষ হোক কিংবা মানুষের স্বাস্থ্য। তাই রমরমিয়ে বাজার বাড়ে কোনও বিশেষ খাবার, বিশেষ পণ্য, বিশেষ জিনিসের। তার কোয়ালিটি কন্ট্রোল হল কি হল না, সে প্রশ্নও ভেসে যায় বাজারের ঢেউয়ে। নিষেধাজ্ঞা জারি হয় বটে, কিন্তু সে খবর রেখে আমরা সাবধান হই কি?