দারুব্রহ্ম পুরুষোত্তম শ্রীজগন্নাথ, নীলাচলধামে অনাদিকাল থেকে তিনি লীলায় আলীন। তিনি কোনও নির্দিষ্ট জাতি বা ধর্মের দেবতা নন। তিনি সর্বধর্মের সংমিশ্রণে মানবধর্মের এক অভন্ন রূপ। তাঁর দারুব্রহ্ম মূর্তিতেই রয়েছে নবগ্রহের সন্নিবেশ। কোন চীহ্ন কোন গ্রহের প্রতীক? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
লীলাবিলাসে তিনি গনধর্মের গণদেবতা। কখনও কালী, কখনও শিব আবার কখনও গণেশ রূপে তাঁর প্রকাশ। কথিত আছে, ভক্ত তাঁকে যে রূপে কল্পনা করবে, সেই রূপেই ধরা দেবেন প্রভু জগন্নাথ। দেব বিগ্রহেই ধরা পড়ে সেই নিদর্শন। জগন্নাথ মূর্তিতে থাকা নানা চিহ্ন বিশ্ব সংসারের অনেক কিছুর প্রতীকী। যা সবসময় সঙ্গে নিয়ে বেড়াচ্ছেন জগতের নাথ।
আরও শুনুন: ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করে জ্বরে কাবু জগন্নাথ! ১৪ দিন কীভাবে চিকিৎসা চলে প্রভুর?
জগন্নাথ মূর্তির মতো অন্য কোনও দেবমূর্তি নেই। কারণ বাস্তবিক অর্থে এ মূর্তি অসম্পূর্ণ। হাত, পা, কোনওটাই সুগঠিত নয়। জগন্নাথের ভ্রু পল্লবও নেই। কেন নেই সে ব্যাখ্যা রয়েছে শাস্ত্রেই। জগতের নাথ অনিমিষ, অর্থাৎ তিনি সারাদিন না ঘুমিয়েই কাটান। সারাক্ষণ জগতের কোথায় কী ঘটছে সেই সবকিছু তিনি দেখছেন। ভক্তের বিপদে ত্রাতা মধুসূদন হয়ে হাজির হন জগন্নাথ। একইভাবে তাঁর মূর্তির অন্যান্য অংশের গঠন নিয়েও বিশেষ ব্যাখ্যা মেলে। মূর্তিটি কেন এমন, সে কাহিনি প্রায় সকলেরই জানা। তবে শাস্ত্রে এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়েছে,
অপাণিপাদো জাবানো গ্রহীতা
পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্নঃ ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্’’ ।।
আরও শুনুন: শুধুমাত্র জগন্নাথ নন, একই দিনে রথে চড়ে নগরভ্রমণে বেরোন মা তারাও
অর্থাৎ, যাঁর হাত নেই, তবু সকল জিনিস তিনি গ্রহণ করেন। যাঁর পা নেই, তবু সর্বত্র জুড়েই তাঁর চলাচল। যাঁর চোখ নেই তবু দেখেন সবই, কান নেই, তবু তাঁর কর্ণগোচর হয় না এমন কিছুই নেই। তিনিই বিশ্বাত্মা। বলা হয়, শাস্ত্রকারের এই কল্পনারই বাস্তব মূর্তি শ্রী জগন্নাথ দেব, বলভদ্র ও সুভদ্রা। তবে স্রেফ বিগ্রহের গঠন নয়, জগন্নাথের মুখমণ্ডলে থাকা প্রতিটি রঙের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। বলা ভালো, প্রতিটি চিহ্ন বিশেষ কিছুর প্রতীক। প্রভুর চোখ দিয়েই শুরু করা যাক। বলা হয়, দুই চোখের একটি সূর্য অন্যটি চন্দ্রের প্রতীক। গোলাকৃতি দুই চোখের পাশে লাল রেখা দেখা যায়। এ হল করুণা। প্রভুর পরম করুণাময় তাঁর ভক্তদের প্রতি। সেই ছাপই স্পষ্ট হয় তাঁর চোখের ওই অংশে। জগন্নাথের কপালে বাস করেন দেবগুরু বৃহস্পতি। কালো অংশ গ্রহরাজ শনির প্রতীক। একপাশে থাকা হলুদ রেখা রাহুকে নির্দেশ করে। মহাপ্রভুর নাকে মঙ্গলগ্রহ বিরাজমান। এছাড়া দুই পাশে বুধ, শুক্র এবং কেতুর অবস্থানও রয়েছে জগন্নাথের বিগ্রহেই। বলা হয়, জগন্নাথের স্মরণ নিলে যে কোনও গ্রহের দোষ কেটে যায়। কারণ তাঁর পুজো করা মানেই একত্রে নবগ্রহের বন্দনা করা। সেই সঙ্গে জগন্নাথের কৃপায় ভক্তের সমস্ত দুর্ভোগ কাটে।