হিন্দু পড়ুয়াদের ইচ্ছা করে নম্বর কম দিয়েছেন মুসলিম অধ্যাপক। সম্প্রতি এমনই অভিযোগে সরব মধ্যপ্রদেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পড়ুয়ারা। ইতিমধ্যেই অধ্যাপককে বরাখাস্ত করা হয়েছে। ঠিক কী কী অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশজুড়ে শিরোনামে শিক্ষা দুর্নীতি। একের পর এক কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বাতিলে সরব পড়ুয়ারা। বিক্ষিপ্ত ভাবে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন অনেকেই। এই আবহে সামনে এল মধ্যপ্রদেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে নম্বর দুর্নীতির অভিযোগ। যার সঙ্গে ধর্মের যোগ টেনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পড়ুয়ারা। অভিযোগ, সেখানকার এক মুসলিম অধ্যাপক হিন্দু পড়ুয়াদের ইচ্ছাকৃত কম নম্বর দিয়েছেন।
আরও শুনুন: নিজে তিনবার ফেল করে পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন! নিট ইস্যুতে রাহুলকে কটাক্ষ বিজেপির
ঘটনাটি উজ্জ্বয়িনীর বিক্রম ইউনিভার্সিটির। সম্প্রতি সেখানকার হিন্দু পড়ুয়ারা নম্বর দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মুসলিম অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, ইচ্ছা করে হিন্দু পড়ুয়াদের কম নম্বর দিয়েছেন ওই মুসলিম অধ্যাপক। শুধু তাই নয় ওই অধ্যাপক ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ। যেসব পড়ুয়ারা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে রীতিমতো ভালো নম্বর পেয়ে এসেছেন, তাঁরাও পরীক্ষায় বেশ কম নম্বর পেয়েছে। তাই এক্ষেত্রে কেবলমাত্র অধ্যাপকের চক্রান্তই দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পড়ুয়ারা। ওই অধ্যাপক মুসলিম পড়ুয়াদের বেশি নম্বর দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়য়ের এক ছাত্রীর দাবি, মুসলিম অধ্যাপক হিন্দু ছাত্রীদের ধর্মান্তরনের চেষ্টাও করতেন। সরাসরি না বললেও, হিন্দু ছাত্রীরা যেন মুসলিম ছাত্রদের সঙ্গে বেশি করে মেলামেশা করে, তা চাইতেন মুসলিম অধ্যাপক। সেই নিয়ে উসকানি মূলক মন্তব্যও তিনি করতেন বলেই অভিযোগ। এছাড়া, মুসলিম পড়ুয়াদের ল্যাবের মধ্যে ধর্মীয় আচার পালন করতে মদত দিতেন মুসলিম অধ্যাপক। হিন্দুরা বাধা দিতে গেলেই, নম্বর কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এই অভিযোগ কোনও একজন পড়ুয়া নয়, বরং ওই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অধিকাংশ হিন্দু পড়ুয়ারাই করেছেন।
আরও শুনুন: উচ্চশিক্ষা যেন আর লক্ষ্য নয়, হয়ে উঠছে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়
এদিকে নম্বর কমের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন মুসলিম অধ্যাপক অনীশ শেখ। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত কেমিস্ট্রি অধ্যাপক হিসেবে। স্থায়ী চাকরি নয়, গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন তিনি। সেই সূত্র ধরেই তাঁর দাবি, পড়ুয়ারা যে নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ তুলছে তা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ওই নম্বর তিনি দেননি। নম্বর দিয়েছেন বাইরে থেকে পরীক্ষা নিতে আসা অন্য অধ্যাপক। এতে তাঁর কোনও হাত নেই। উলটে পড়ুয়ারা ভীষণ অনিয়মিত এই অভিযোগ তুলেছেন অনীশ। নম্বর কম হওয়ার কারণ সেটাই, এই দাবিও করেছেন তিনি। তবে নম্বরের অভিযোগ বাদ দিলেও একাধিক নালিশ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেসব প্রথমে মৌখিকভাবে পরে লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে পড়ুয়ারা। যার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের আরএসএস শাখার সদস্যরা বিশেষভাবে জড়িয়ে। মুসলিম অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন AVBP-র সদস্যরাও। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় রীতিমতো উত্তাল মধ্যপ্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও পড়ুয়াদের অভিযোগের পর মুসলিম অধ্যাপককে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গড়া হয়েছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ সঠিক কি না তা বিচার করবে ওই কমিটি। অভিযোগ প্রমাণ হলে মুসলিম অধ্যাপকের বিরুদ্ধে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।