অমরনাথ যাত্রা শুরু হচ্ছে, শুনে হিন্দুদের খুশি হওয়ার কথাই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সে অঞ্চলের মুসলিমরাও এই যাত্রা শুরু নিয়ে উচ্ছ্বসিত। কেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে কথা।
বছরের অনেকটা সময়েই বন্ধ থাকে হিন্দু তীর্থ অমরনাথ। কবে ‘বরফানি বাবা’র দেখা মিলবে, তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন ভক্তরা। যাত্রা শুরুর খবর মিললে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন তাঁরা। কিন্তু শুধু কি ভক্তরাই এই খবরে আনন্দিত হন? বাস্তব বলছে, এই অঞ্চলে যে বাসিন্দারা থাকেন, যাঁরা প্রায় সকলেই ধর্মে মুসলিম, অমরনাথ যাত্রা শুরুর কথা শুনে একইভাবে খুশি হন তাঁরাও। কিন্তু কেন? ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে তো তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই এ খবরের সঙ্গে। বরং অমরনাথ যাত্রায় একাধিকবার নাশকতামূলক হামলার ঘটনা ঘটেছে, আর সেই ইস্যুতে বারবারই আঙুল উঠেছে মুসলিমদের দিকেই। সে হিসেবে তো দুই ধর্মের মধ্যে এক অবিশ্বাসের বাতাবরণ জেগে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবের ছবি তো সে কথা বলছে না। তাহলে ব্যাপারটা কী?
আরও শুনুন:
হেঁটে দেখতে শিখুন! ‘যাত্রা’ যখন রাজনীতির অন্য নাম
আসলে রাজনৈতিক হিসেবনিকেশে যে বিভাজনের দাগ টানা হয়, নিরাপদ ছাদের তলায় নিশ্চিন্ত রুজির জোগান নিয়ে যে বিভাজনে বিশ্বাস করা যায়, বাস্তবের প্রতিকূলতা সেসব বেড়া ভেঙে দেয় কখন। এইসব দুর্গম স্থানে যে মানুষেরা থাকেন, তাঁদের রুজি রোজগারের বড় অংশটাই যে আসে এই তীর্থযাত্রার সুবাদে। অমরনাথ যাত্রায় ৩৮৮০ মিটার পথ পেরোতে হয় ভক্তদের, যার পুরোটাই পাথুরে চড়াই। প্রবল ঠান্ডা আবহাওয়া পেরিয়ে এই পথ অতিক্রম করেন তাঁরা। ফলে এই যাত্রায় তাঁবু থেকে কম্বল, মালবাহী পশু থেকে গাইড, এমন অনেক কিছুই প্রয়োজন হয়। যাত্রীদের খাওয়ার জন্য পথে খোলা থাকে ভান্ডারা। শীতের সঙ্গে যুঝতে চা-কফির জোগান দিতে হয় তীর্থযাত্রীদের। আর এই সবকিছুরই ব্যবস্থা করেন স্থানীয় কাশ্মীরি মুসলিমরা। এমন শতাধিক মানুষ আছেন, যাঁরা অমরনাথ যাত্রার মূল জোগানদার। তাঁদের কাছে এই সবকিছু ব্যবসা বটে, তবে মানুষের মুখ দেখা, তাঁদের সাহায্য করার তাগিদও কিন্তু কম কিছু নয়। আর তাঁদের জন্যই অমরনাথ যাত্রা আসলে এক সমন্বয়ের কথাও বলে। বাইরের দুনিয়া থেকে দেখা সমস্ত বিভাজনকে ছাপিয়ে ওঠা একরকম বেঁধে বেঁধে থাকার গল্প শোনায় এ যাত্রা।
আরও শুনুন:
একের পুণ্যে অন্যের সর্বনাশ! তীর্থযাত্রীদের বইতে গিয়েই চারধামে প্রাণ হারায় অবোলা পশুরা
চলতি বছরে জুন মাসের ২৯ তারিখে পথ খুলে যাচ্ছে অমরনাথের। ১৯ অগস্ট পর্যন্ত চলবে এই যাত্রা। পহেলগাঁও-এর পথ আর বালতাল-এর পথ, এই দুই পথ ধরেই চলবে যাত্রা। দীর্ঘ বিরতির পর ফের খানিক লাভের মুখ দেখবেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশাপাশি এই নির্জন উপত্যকায় অনেক নতুন মানুষের মুখ দেখবেন কদিন, তাদের হাসি আর কথার শব্দে ভরে উঠবে উপত্যকা। নাহয় ধর্ম আলাদাই, তবুও সে কথা ভেবেই হাসি ফুটে উঠেছে এই এলাকার মুসলিম বাসিন্দাদের মুখে।