আইনি পথে বন্ধ করতে হবে ‘লাভ জিহাদ’। নয়া বিলের ভাবনায় রাজস্থানের বিজেপি সরকার। এ প্রসঙ্গে একাধিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্তও নিয়েছে সে রাজ্যের সরকার। ঠিক কী করা হবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘লাভ জিহাদ’ বন্ধের দাবিতে হামেশাই সরব হন বিজেপি নেতারা। এবার আইনি পথে ‘ভিনধর্মের বিয়ে’ রোখার চেষ্টায় রাজস্থানের বিজেপি সরকার। জানা গিয়েছে, শীঘ্রই নতুন একটি বিল পেশ করা হবে। একইসঙ্গে তুলে নেওয়া হবে পুরনো একটি বিলও।
মুসলিম যুবকদের সঙ্গে হিন্দু মেয়েদের মেলামেশা বিপজ্জনক বলে বরাবরই দাবি করে থাকেন হিন্দুত্ববাদীরা। যেখানেই যুবক যুবতীদের কাছাকাছি আসার সুযোগ থাকে, আর সেই চেনাজানার সূত্রে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে, সেই সম্ভাবনাকেই নাকচ করতে মরিয়া হিন্দুত্ববাদীরা। কারণ ভিনধর্মের মধ্যে প্রেম, এবং তারপর বিয়ের ঘটনা ঘটলে প্রায়শই তাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে দাগিয়ে দেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, কোনও প্রেম ভালবাসার টানে নয়, এই বিয়ে নিছকই এক ধর্মীয় চাল। আসলে হিন্দু মেয়েদের ভুলিয়ে বিয়ে করতে চায় মুসলিম ধর্মাবলম্বী পুরুষেরা। তারপর জোর করে মেয়েটির ধর্মান্তর করে এবং তার গর্ভে একাধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য, এমনটাই দাবি হিন্দুত্ববাদীদের। আর এই লাভ জিহাদের অভিযোগ কমাতেই এবার নয়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজস্থানের বিজেপি সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা নতুন বিলের কথা ঘোষণা করেছেন। যেখানে লাভ জিহাদের ঘটনায় একাধিক শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০০৮ সালের ‘রাজস্থান রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ বিলটিও বাতিল করা হবে বলেই জানিয়েছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। এই বিলেও ধর্মান্তরন নিয়ে একাধিক নিয়মের উল্লেখ ছিল। তবে রাষ্ট্রপতির অনুমতি না পাওয়ায় তা আইনে পরিণত হয়নি। ভজনলাল সরকার এই পুরনো বিলটিকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে নতুন একটি বিল আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে লাভ জিহাদের অভিযোগে শাস্তির পরিনাম অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে।
এই মুহূর্তে রাজস্থানে ধর্মান্তরণ সম্পর্কিত কোনও আইন নেই। ২০০৮ সালের বিলটি আইনে পরিণত না হওয়াতেই এই অবস্থা। রাজ্য সরকারের তরফে নির্দিষ্ট করা কিছু নিয়ম মেনে বিভিন্ন ঘটনার সামাল দেওয়া হয়। তবে আইনি ব্যবস্থা না থাকায়, সে রাজ্যে লাভ জিহাদের মতো ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ। তাই নয়া বিল আনার জন্য বিশেষ তৎপরতা দেখাচ্ছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। এই বিল আইনে পরিণত হলে লাভ জিহাদের মতো ঘটনা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হবে বলেই মনে করছে সে রাজ্যের সরকার। বিল অনুযায়ী, লাভ জিহাদের অভিযোগ প্রমাণ হলে ৩ বছরের জেল কিংবা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ হতে পারে দ্বিগুণ। এছাড়া কেউ যদি স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করতে চান, তাহলেও অন্তত ৩০ দিন আগে জেলা শাসকের কাছে আবেদন জানাতে হবে। কেউ পুনরায় নিজের ধর্মে ফিরতে চাইলেও আবেদন জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। অর্থাৎ ধর্ম পরিবর্তন সংক্রান্ত যা কিছু হবে, সবটাই আইনের নজরদারিতে রাখতে চাইছে রাজস্থানের বিজেপি সরকার। তবে পুরনো বিল বাতিল করে নতুন বিলে যেসব সংশোধন আনা হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্কও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।