কলেজের শো-তে নাচ দেখানোর কথা ছিল সানি লিওনির। কিন্তু বেঁকে বসলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সাফ জানিয়ে দিলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে সানির প্রবেশ নিষেধ। সানির পুরনো পর্নস্টার পরিচয়ই কি দায়ী এই নিষেধাজ্ঞার নেপথ্যে?
একসময় পর্ন ফিল্মে অভিনয় করাই ছিল তাঁর রুটিরুজি। কিন্তু সে জীবনকে অনেকদিন আগেই পিছনে ফেলে এসেছেন তিনি। বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা, অন্য জগৎ। কিন্তু অতীত কি তাতেও পিছু ছাড়ে? এখনও একটা বড় অংশের মানুষের কাছে সানি লিওন মানেই উপচে পড়া শরীর। নীল ছবির উদ্দাম শরীরী আশ্লেষ। এক বা একাধিক পুরুষের সঙ্গে শিউরে ওঠা সঙ্গম। আড়ালে আবডালে সে নারীর শরীর চেটেপুটে দেখাই যায়। কিন্তু প্রকাশ্যে, সামাজিক সভায়, তার পাশে বসা যায় কি? না, তা করা যায় না বলেই ভেবেছেন এক কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই কলেজ ক্যাম্পাসে সানির প্রবেশে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছেন তাঁরা।
আরও শুনুন:
মন্তব্যে অনড় কঙ্গনা, তবে চাইলেই কি কাউকে ‘পর্নস্টার’ বলা যায়?
জানা গিয়েছে, কেরলের ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এ জুলাইয়ের গোড়ার দিকে এক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। সেখানেই নাচের পারফরম্যান্স বরাদ্দ হয়েছিল সানি লিওনের নামে। এমনিতে কলেজের ফ্রেশার্স বা ফেস্ট জাতীয় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে তারকাদের ডাকা হয়েই থাকে। তাঁরা এসে নাচ গান করেন কিংবা স্রেফ কথা বলেন, আর তা দেখার জন্যই মুখিয়ে থাকে কলেজপড়ুয়ারা। এখানে সেই অতিথির ভূমিকায় আসার কথা ছিল সানির, যা বাতিল করে দিয়েছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ওই ইভেন্টে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি তো করেছেনই, একইসঙ্গে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন যে ক্যাম্পাসের ভিতরে বাইরে কোথাওই সানি লিওনের নাচের মতো কোনও আয়োজন করতে পারবেন না পড়ুয়ারা।
যদিও এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে এক সরকারি নির্দেশের আড়লা নিয়ে, যেখানে ডিজে পার্টি, মিউজিক নাইটের মতো অনুষ্ঠানে রাশ টানা হয়েছে। কিন্তু কেবল সেইটুকুই কি কারণ? কাঁটায় কাঁটায় নিয়ম মেনে কোনও পপ তারকা, ব্যান্ড, কাউকেই অনুষ্ঠানে ডাকা হবে না, এমনটা কি ঘটবে? না, তেমনটা হবে না। কলেজ ফেস্টে তারকাদের আনার প্রবণতায় দাঁড়ি পড়বে না। দাঁড়ি টানা হবে, যদি সে নাম হয় সানি লিওনের। আরও মজার কথা হল, সানি লিওনের মতো কাউকে ডাকা, কিংবা সে ডাকে আপত্তি তোলা, দুয়েরই পিছনে কিন্তু কার্যকর থাকবে একই কারণ। এ ধরনের অনুষ্ঠানে অন্য সব ছোট-বড় তারকাদের ছেড়ে হঠাৎ সানি লিওনকেই আমন্ত্রণ করা হচ্ছে, এ ঘটনা তো খুব একটা নজরে পড়ে না। সানি লিওনের নাচের অনুষ্ঠান রাখার পিছনে যে তাঁর পুরনো পর্নস্টার পরিচয়টি জেগে আছে, আর সেই সূত্রেই জেগে আছে তাঁর শরীরে চোখ বোলানোর উত্তেজনা, এ কথা ভাবলে কি তা নেহাতই ভুল হবে? আবার পর্নস্টার তকমা থাকা কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এলে প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি হবে, নিষেধাজ্ঞার পিছনেও তো চোখ রাঙাচ্ছে এহেন মনোভাব।
আরও শুনুন:
পর্নস্টার হতে চেয়েছিলেন শাহরুখ খান! দাবি খোদ অভিনেতার
অথচ স্রেফ ওই একটা পরিচয় যে যথেষ্ট নয়, সে কথা বারবার প্রমাণ করেছেন সানি নিজেই। নিজের জীবনে এমন অনেক কিছুই তিনি করেছেন যা করার সাহস কিংবা মানসিকতা অনেকেরই নেই। সে সন্তান দত্তক নেওয়া হোক কিংবা গৃহসহায়িকার বিপদে পাশে দাঁড়ানো। কানের মঞ্চে যখন ভারতের অনেক তারকা নিছক সাজসজ্জাতেই নজর টেনেছেন, সেই সময়েই একমাত্র ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে সানির ছবি প্রদর্শিত হয়েছে, এ ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু তাতে কী! মানুষের নিজের জীবনকে সে যতই যোগ বিয়োগ করে নিজের মতো সাজাতে চাক, আশেপাশের অনেকেই তাঁদের আগের স্মৃতি পালটাতে চান না। তাই নতুন মানুষটিকে ক্রমাগতই তাঁরা পুরে দিতে চান পুরনো খোপে। তার উপরে সেই পুরনো জীবনটা যদি সমাজের বাঁকা চোখে তাকানোর মতো হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। যৌনতার প্রতি সমাজের আকর্ষণ অনেকটা নিষিদ্ধ ফলের মতো, যাকে আড়ালে চেখে নিলেও প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখাই নিয়ম। নইলে সমাজের শীলতা আর শ্লীলতায় বড্ড আঘাত লাগে যে। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে সেইসব নিয়মে আরও কড়াকড়ি। নটী বিনোদিনী কিংবা গহরজান-দের সময়কালে যেমন দেখা যেত, থিয়েটারে মেহফিলে বাবুদের ভিড় আছড়ে পড়ছে। অথচ বিনোদিনীর শরীরের দামে থিয়েটার গড়লেও বিনোদিনীর নামে থিয়েটারের নামকরণ করা যায়নি। বারবনিতার নামে থিয়েটারে নাকি সেই বাবুরাই আসবেন না, এই ছিল যুক্তি। কোনও দেহোপজীবিনী নারীর পক্ষে তাঁর সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানো বা সমাজের মূলস্রোতে ঠেলে দেওয়া সেকালে প্রায় অসম্ভব ছিল, একালেও আদৌ সহজ নয়। কারণ মানুষের অনেকগুলো রং থাকলেও, সমাজ তাকে দেখে একটাই রঙে। সানি লিওনের এই ঘটনায় আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠল সেই প্রবণতাই।