মুসলিমদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান কি মোদিকে দোষ দেওয়া? বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ্ একেবারেই সে কথা মনে করেন না। এ ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব অভিমত আছে। একই সঙ্গে তিনি আশা করেন যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও হয়তো একেবারে নতুন উপায়ে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবেন। কী সেই পথ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সামাজিক এবং রাজনৈতিক যে কোনও বিষয় নিয়েই তিনি সরব। যেমন সিনেমাতে, তেমনই বাস্তব জীবনেও। সিনেমা আর জীবনের বাস্তবতাকে খুব একটা আলাদা করে দেখেন না বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ্। আর তাই সম্প্রতি তিনি চেয়েছিলেন ধর্ম, বিশেষত ধর্মকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ক্ষেত্রে, তা-ই হয়ে উঠুক সিনেমার বিষয়। কিন্তু এ তো গেল সিনেমার কথা। বাস্তবে তাঁর কী আশা? বেশ চমকে দিয়েই তিনি বলছেন, হয়তো একদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেখবেন ফেজ মাথায়। ঠিক যেভাবে মুসলিমরা পরে থাকেন। কিন্তু কেন? হঠাৎ এমন আশা তিনি করছেনই বা কেন?
আরও শুনুন: মঙ্গলসূত্র বিতর্কের জন্ম রাজস্থানের জেলায়, ‘বিভাজন’ কি প্রশ্রয় পেল সেখানে?
এই আশার নেপথ্য কারণ অবশ্য খুব সহজ নয়। সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের নিজস্ব কিছু সমস্যা আলোচনার প্রেক্ষিতেই উঠে এসেছে এই মন্তব্য। এ কথা ঠিক যে, ভোটের ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুর দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেকাংশে ফারাক থাকে। ভোটের সময় দেখা যায়, বহু ক্ষেত্রেই এই হিসাব মাথায় রাখে রাজনৈতিক দলগুলোও। অন্যদিকে, বিজেপি বা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সংখ্যালঘুরা একরকম মনোভাব পোষণ করেন। ভোটের হাওয়া যে সেই মনোভাবে একেবারে প্রভাবিত হয় না, তা কিন্তু নয়। তবে, এই সবকিছু নিয়ে একটু অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি আছে অভিনেতার। তাঁর মতে, সব দোষ নন্দ ঘোষের মতো মোদিকে দোষারোপ করা খুব সহজ। কিন্তু সেটাই একমাত্র সমাধান হতে পারে না। এ ব্যাপারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব সমস্যার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, সব সমস্যার মূলে তো আর মোদি নন। এমন বহু কিছু আছে, যে সব সমস্যা মোদি ক্ষমতায় আসার আগেই ছিল। কী সেসব? বর্ষীয়ান অভিনেতার সাফ কথা, মসুলিমদের হিজাব, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠার কোনও মানে হয় না। মনে রাখতে হবে, হিজাব বিতর্ক এই কিছুদিন আগেও ছিল দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভোটের মতামত নিশ্চতই তার দ্বারা খানিকটা হলেও প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু নাসিরুদ্দিনের বক্তব্য, মুসলিমদের তো অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিত শিক্ষা নিয়ে। আলোকপ্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া বা আধুনিক চিন্তাভাবনাকে বরণ করে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। মাদ্রাসা নিয়ে পড়ে থাকার থেকেও সেগুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ তিনি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা কৌমের সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে, ভিতর থেকে তার সমাধান চাইছেন। মোদিকে দোষ দিলেই যে এই সব মানসিকতার বদল হবে না, সমস্যা মিটবে না, এটিই তাঁর সাফ কথা।
আরও শুনুন: অকারণে বাজে কথা বলা অভ্যেস! স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর এ ব্যাপারে কী পরামর্শ?
তবে, এ কথাও ঠিক য হিন্দুত্ববাদী আদর্শের কারণেই সংখ্যালঘুদের একাংশ মোদির প্রতি বিরূপ। সেই জায়গা থেকেই সহজে দোষ দেওয়ার এই রাস্তা ধরেন তাঁরা। তাহলে? অভিনেতার আশা, হয়তো কোনও একদিন মোদি ফেজ পরবেন। এটা একরকমের সংস্কারকে স্বীকৃতি দেওয়া। একটি সম্প্রদায়ের রীতিকে স্বীকার করা। তাঁর ধারনা, এর ফলে হয়তো মোদির প্রতি মুসলিমদের যে বিরূপ মনোভাব তা দূর হবে। তাঁর মতে, যে মতবিরোধ বা বিরূপ মনোভাবের জায়গা তৈরি হয়ে আছে, তা হয়তো কাটিয়ে দিতে পারেন মোদি নিজেই। যদি মোদি সেই বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা তোইরি করতে পারেন, তাহলে সম্প্রদায়েরই উন্নতি হবে।
আর তাই তাঁর মত, সব দোষ মোদির ঘাড়ে চাপানো আসলে সহজ রাস্তা। বরং সম্প্রদায়ের ভিতর থেকে বদল আনাটাই জরুরি।