নির্বাচনের শুরু থেকেই ৪০০ পারের স্লোগান তুলেছিল বিজেপি। এক্সিট পোলের হিসাবও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ইঙ্গিত করেছিল। কিন্তু লোকসভার ফলাফল মোটেও তেমনটা হয়নি। বহু প্রত্যাশিত আসনে অপ্রত্যাশিত হার মানতে হয়েছে বিজেপি। কিন্তু কেন হল এমন পরিণতি? ভোটারদের মনের খোঁজেই বিশেষ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভোটের আবহ। প্রত্যেকটা দল নিজের মতো করে প্রচার সারছে। গণমাধ্যম সেসব ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র। আমজনতা সেসব দেখছেন, বুঝছেন, শিখছেন। আবার দলের সমর্থকরাও নিজেদের কথা বাড়ি বয়ে প্রচার করে যাচ্ছেন। জনগণ এসবও দেখছেন, শুনছেন, বুঝছেন। কিন্তু কে কোন কথায় কান দেবেন, বা কান দিলেও সেইমতো ভোট দেবেন কি না, বোঝা কঠিন।
আরও শুনুন: রামের জন্য ব্যবসা বেড়েছিল, বিজেপির হারে জোর ধাক্কা! নতুন সংকটে গোটা অযোধ্যা
নির্দিষ্ট দলের সমর্থকদের কথা বাদ রাখলে, অধিকাংশ ভোটারই নিজের ব্যক্তিগত অবস্থার কথা ভেবেই ভোটের সিদ্ধান্ত নেন। সেক্ষেত্রে কোনও একটি দল ভোটের আগে কত জোরালো প্রচার সারল, তা কোনওভাবেই প্রভাব ফেলে না। যদি সেই দলের কাজ ভোটারকে ব্যক্তগতভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তাহলেই ভোট মিলবে। আবার সেই প্রভাব যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে ভোট দেওয়া দূর অস্ত। নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে গল্পটা খানিক আলাদা। রাজনীতি সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতা নেই। সেক্ষেত্রে তাঁরা কী ভাবছেন, ভোটের খেলা ঘুরিয়ে দিতে সেটুকু যথেষ্ট। আসলে, ভোটের ভিতর সবথেকে বড় যে কথাটি লুকিয়ে থাকে, তা হল অনিশ্চয়তা। ভোটারের মনের হদিশ যদি সত্যিই পাওয়া যায়, তাহলে তো আর রাজনৈতিক দলগুলোকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় না। অথচ এই যে তীব্র গরমে ভোটের মাধুকরীতে রাজনীতিকদের পথে পথে ঘোরা, সে শুধু ওই মনের নাগাল পেতেই। নইলে এত প্রতিশ্রুতি, বিরোধীদের বিরুদ্ধে এত চোখা চোখা আক্রমণের কোনও মানেই থাকে না। বলতে গেলে, ভোটারের মন রহস্যময় এক ধাঁধা। যে দল যত সহজে তার সমাধান করতে পারে, শেষবেলায় বাজিমাত তারই। অর্থাৎ ভোটের মূল বিষয়টি হল, অনিশ্চয়তাকে নিশ্চয়তায় বদলে দেওয়া।
আরও শুনুন: মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি! তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, তবু আক্ষেপ মোদির
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল এই ধারণার বাস্তব রূপ হিসেবে ধরা দিয়েছে। ভোট পরবর্তী বুথফেরত সমীক্ষার হিসাব যা বলেছিল, ফলাফল তার থেকে অনেকটাই আলাদা হয়েছে। কিন্তু এমনটা কেন হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন। শুধু ভারত নয়, একইভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই ছবি ধরা পড়ছে। ব্রিটেনের নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। গত দুই নির্বাচনে সে দেশের মানুষ পরপর সরকার বদল করেছে। মোটের উপর সেখানকার মানুষজন স্থায়ীভাবে কারও উপর ভরসা রাখতে নারাজ। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ভোটারদের মনের বিশেষ অবস্থাকে দায়ী করছেন। যে অবস্থান রাতারাতি সরকার বদলে দিতে পারে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম ‘পেডেরসন ভোলাটিলিটি’। বহুদিন ধরেই এই নিয়ে গবেষণা চলছে। কেন ভোটারদের মন বদলায়, সেই খোঁজই চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে একজন ভোটার ঠিক কী ভেবে ভোট দিতে আসছেন তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। এমনকি ভোটকেন্দ্রে তাঁর আচরণেও কোনও আভাস নাই মিলতে পারে। ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদের এই মনের অবস্থান লক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর জন্য সোশাল মিডিয়াকে কিছুটা হলেও দায়ী করছেন তাঁরা। যে যত বেশি মিডিয়ায় আসক্ত তাঁর মনের পরিবর্তন হতে পারে ততটাই দ্রুততার সঙ্গে। আর সেকথা রাজনৈতিক দলগুলোও ভালমতো জানে। তাই সোশাল মিডিয়া কাজে লাগিয়ে ভোটবাক্স ভরানোর যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়েছে কিছু দল। এদিকে, অন্যদলের নেতিবাচক প্রচার ভালোভাবে নেননি অনেকেই। সামগ্রিকভাবে তার প্রভাব পড়েছে ভোটবাক্সে। অর্থাৎ ভোটের হিসাব শেষপর্যন্ত কী দাঁড়াবে তা আগেভাগে বোঝা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে হ্যাঁ, কোন দিকে হাওয়া ঘুরতে পারে তা অনুমান করা সম্ভব। তাই সম্পূর্ণ না মিললেও এক্সিট পোল বিলকুল ভুল প্রমাণিত হয়নি। আর সেই অনুমানের চাবিকাঠি ভোটারদের মনের বিজ্ঞান বুঝতে পারলেই আবিষ্কার করা সম্ভব।