ভোট উৎসব মিটেছে। যাবতীয় উত্তেজনা কাটিয়ে ফিরতে হয়েছে রোজের রুটিনে। কিন্তু এত বড় উৎসবের আয়োজনে কম খরচ তো হয়নি! সেই ঘাটতি মেটাতেই বাড়তে পারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। চলতি নির্বাচনে মোট কত খরচ হল? তার জন্য দাম বাড়ছে ঠিক কোন কোন জিনিসের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সাতটি দফা পেরিয়ে সদ্য শেষ হয়েছে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ১৯৭৭-এর পর এটাই নাকি দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার অনেক কারণই আছে। যার অন্যতম নির্বাচনের বিপুল খরচ। ‘সিএমএস’-এর প্রাথমিক রিপোর্টে এবারের নির্বাচনের খরচ দেখানো হয়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি। ভোটপ্রতি হিসাব করলে ১৪০০ টাকা। যা আগের লোকসভা নির্বাচনেও অর্ধেক ছিল।
আরও শুনুন: রামের অযোধ্যায় জিতলেন একজন দলিত নেতা, কে এই অওধেশ প্রসাদ?
এ দেশে নির্বাচন আয়োজন করা মুখের কথা নয়। এত সংখ্যক ভোটার, এত এত বুথ, সব জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন আরও নানা রকমের খরচ লেগেই থাকে। পাশাপাশি প্রার্থীর প্রচারের খরচও কম নয়। হিসাব বলছে, ভোটে যে টাকা খরচ হয় তার ৩৫ শতাংশই ব্যয় হয় দল ও প্রার্থীর প্রচারে। পাশাপাশি প্রার্থীরা ভোটারদের যে টাকা বা উপহার দিয়ে থাকেন তার খরচও যথেষ্টই। স্রেফ এই খরচ নগদে হয় বলে হিসাব মেলে না। যদিও কমিশনের তরফে মোট খরচের মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করা হয়। তাতেও অঙ্কটা এই জায়গায় পৌঁছেছে। সুতরাং ভোটের খরচ যে লাগামছাড়া হয়েছে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এর জন্য স্রেফ মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা চলে না। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের ইচ্ছামতো দেদার খরচ করেছে। ভোট শুরুর আগেই কমিশনের তরফে খরচ কমানোর একাধিক ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভোট প্রচারে অংশ নেওয়া কর্মীদের খাওয়ানোর খরচও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও শেষ অবধি যা দেখা যাচ্ছে, তাতে ভোটের জন্য খরচ হয়েছে যথেষ্টই। যদিও অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, এই খরচ আসলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থের যোগান দিচ্ছে। যেমন ভোটের প্রচারে যে গাড়ি ব্যবহার করা হয় তার বেশিরভাগই ভাড়ার গাড়ি। সেক্ষেত্রে গাড়িশিল্পের বেশ খানিকটা লাভ হয় এই সময়ে। একইভাবে, মিষ্টি, ফুল, সাজানোর জিনিস থেকে আরম্ভ করে আরও একাধিক ক্ষেত্র যা ভোটের কারণে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে বেশ লাভবান হয়। তাও ভুললে চলবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের এই বিপুল পরিমাণ, খরচের যোগান দিচ্ছে কারা! অবশ্যই কোনও ব্যবসায়িক সংগঠন। সেক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের মুনাফা বাড়িয়েই ভোটের জন্য হওয়া এই বিপুল খরচের হিসাব তুলবেন। যে কারণে ভোট মিটলেই বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়তে দেখা যায়। চলতি নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
আরও শুনুন: সরকারে এসে প্রথমেই দরকারি কাজ, ভোট যুদ্ধের অনেক আগেই পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর
ভোটের ফল ঘোষণার আগেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় দুধের। বেশ কয়েকটি নামি ডেয়ারি সংস্থা এমনটা করেছে। এখানেই শেষ নয়। রাতারাতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু বড় রাস্তার টোলট্যাক্স। ফলত রোজের ব্যবহারের বা খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়তে পারে শীঘ্রই। একইসঙ্গে আশঙ্কা জ্বালানির দাম বৃদ্ধির। ভোটপর্ব মেটার সঙ্গে সঙ্গেই ফের বাড়তে পারে পেট্রোল, ডিজেলের দাম। বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে মোবাইল রিচার্জের দামও। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মোবাইল এবং ইন্টারনেটের খরচও জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে এই দুই জায়গায় মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জীবনযাপনে বেশ প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাড়তে পারে বিভিন্ন চ্যানেলের খরচও। অর্থাৎ টিভি দেখার জন্যও আগে তুলনায় বেশি টাকা খরচ করতে হবে এবার। সুতরাং বিশ্বের সবতেকে বড় নির্বাচনের এই বিপুল খরচ আমজনতাকে নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে দিয়েই চোকাতে হবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।