নিজেকে শূর্পণখা মনে করেন মহিলা। তবে তিনি ভিলেন নন। তাঁর আশীর্বাদ নিতেই ভিড় জমান অনেকে। অবশ্য তার বিশেষ কারণও রয়েছে। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রামায়ণের খল চরিত্রের মধ্যে অন্যতম শূর্পণখা। এমনটাও বলা হয়, রাম-রাবণের যুদ্ধ হয়েছিল এই শূর্পণখার কারণেই। দশাননেন প্রিয় বোন, তাঁর সাধের নাক কেটেই বিপত্তি বাড়িয়েছিলেন লক্ষ্মণ। আর সেই বদলা নিতেই ছল করে সীতাকে হরণ করেছিলেন রাবণ। পরের কাহিনী সকলেরই জানা। তবে এসব তো ত্রেতাযুগের ঘটনা। কলিযুগে রামের নাম থাকলেও, শূর্পণখা কোথায়?
উত্তর মিলবে শ্রীলঙ্কাতেই। কারণ সেখানে এখনও রয়েছেন শূর্পণখা। মূর্তি নয়, একেবারে জলজ্যান্ত একজন মানুষ। কথা বলছি শ্রীলঙ্কার গঙ্গা সুদর্শন সম্পর্কে। এই মহিলা নিজেকে কলিযুগের শূর্পনখা হিসেবেই মনে করেন। আসলে, জন্মের সময় নাক এবং কানে কাটার দাগ ছিল গঙ্গার। সেই থেকেই সকলে তাঁকে শূপর্ণখা নামে ডাকত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও তেমনটাই বিশ্বাস করতে শুরু করেন গঙ্গা। এবং সকলের কাছে প্রচার করতে থাকেন তিনিই শূর্পণখার পূর্নজন্ম। তার অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে। গঙ্গা দাবি করতেন, তিনি ভূত ভবিষ্যৎ দেখতে পান। এমনকি একবারও না পড়ে রামায়ণের সব ঘটনা বলতে পারতেন। এমন কিছু ঘটনা যা ভীষণ খুঁটিয়ে না পড়লে বলা সম্ভব না। তখনই গঙ্গা বলতেন, এইসব তাঁর পূর্ব জন্মের অভিজ্ঞতা। তবে ত্রেতাযুগের মতো খলচরিত্র তিনি নন। বরং অনেকেই তাঁকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন। রয়েছে মন্দিরও। সেখানে প্রতিদিন ভক্তরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে ভিড় জমান। সকলকে সমাধান বাতলে দেন গঙ্গা। ভবিষ্যতে কোনও বিপদের আশঙ্কা থাকলে ভক্তদের আগাম সতর্কও করে দেন। এছাড়া তাঁর মন্দিরে রয়েছে কয়েকশো গোরু। সেসব লালন পালন করেন তাঁর ভক্তরাই। সবমিলিয়ে স্থানীয় মানুষের কাছে সাধ্বী হিসেবেই পরিচিত এই গঙ্গা।
স্রেফ স্থানীয় মানুষ নন, লঙ্কার সরকারও তাঁর এই অলৌকিক ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ বেশ কয়েকবার সুনামি কিংবা বিমান দুর্ঘটনায় আগেভাগে সতর্ক করেছিলেন গঙ্গা। কাজেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়লে তাঁর দ্বারস্থ হন সরকারি আধিকারিকরাও। সরকারের তরফে প্রতি মাসে বিশেষ ভাতা পান গঙ্গা। এই নিয়ে কেউ আপত্তিও তোলেন না। কারণ গঙ্গাকে কেউই ভিলেন মনে করেন না। সকলের কাছেই তিনি দেবীর সমান। গঙ্গা নিজেকে অবশ্য রামভক্ত বলেই দাবি জানান। শ্রীলঙ্কা রামের মন্দির রয়েছে বহু। সব জায়গায় পুজো দিতে যান গঙ্গা নিজে। এমনটাও শোনা যায়, তাঁর তৈরি বিশেষ এক ওষুধ কঠিন রোগ সারিয়ে দিতে পারে। বিভিন্ন জড়িবুটি দিয়ে তৈরি এই ওষুধ নিতেই অনেকে ভিড় জমান তাঁর দরবারে। সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কায় শূর্পণখা হিসেবেই পুজো পেয়ে আসছেন গঙ্গা।