এক্সিট পোলের হিসাব দেখে ভোটের ফল আন্দাজ করেন অনেকেই। কিন্তু কয়েকটা বিষয় খেয়াল না করলেই হতে পারে গোলমাল। অর্থাৎ ভুয়ো এক্সিট পোল অনায়াসে বিভ্রান্ত করতে পারে ভোটারদের। আসল এক্সিট পোল বোঝার উপায় কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই রেজাল্ট। এমনটা সাধারণত হয় না। ভোটের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম। নির্বাচন শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট কয়েকদিন পর শুরু হয় গণনা। তারপর ফলাফল প্রকাশ। তবে এক্সিট পোল আগেভাগে ভোটের ফল অনুমান করে। নির্বাচন শেষ হতে না হতেই অনেকেই নজর রাখেন সেদিকে। কিন্তু এর থেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন ভোটাররা।
আরও শুনুন: এক্সিট পোল কি ভোল বদলায়! যে ৫ বার ভুল হয়েছিল বিলকুল
ভোটের ভিতর সবথেকে বড় যে কথাটি লুকিয়ে আছে, তা হল অনিশ্চয়তা। ভোটারের মনের হদিশ যদি সত্যিই পাওয়া যায়, তাহলে তো আর রাজনৈতিক দলগুলোকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় না। অথচ এই যে তীব্র গরমে ভোটের মাধুকরীতে রাজনীতিকদের পথে পথে ঘোরা, সে শুধু ওই মনের নাগাল পেতেই। নইলে এত প্রতিশ্রুতি, বিরোধীদের বিরুদ্ধে এত চোখা চোখা আক্রমণের কোনও মানেই থাকে না। বলতে গেলে, ভোটারের মন রহস্যময় এক ধাঁধা। যে দল যত সহজে তার সমাধান করতে পারে, শেষবেলায় বাজিমাত তারই। অর্থাৎ ভোটের মূল বিষয়টি হল, অনিশ্চয়তাকে নিশ্চয়তায় বদলে দেওয়া। শেষ হাসি হাসবেন কে তা আগেভাগে বোঝা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। ভোটকুশলিদের দাবি খানিকটা তেমনই। বিশেষ করে যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে ভোট মিটতেই ফলাফলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বসেন। কথা বলছি এক্সিট পোল সম্পর্কে। সম্বল বলতে বুথফেরত সমীক্ষা এবং ভোটের হালহকিকত। তাতে ভর করেই অনুমান করা কোন দলের পাল্লা ভারি। একেবারে নির্বাচনের ফলাফলের মতোই সংখ্যার হিসাব প্রকাশ্যে আনে এক্সিট পোল। মূলত এই কাজ করে কিছু এজেন্সি। তার সঙ্গে যুক্ত থাকে সংবাদমাধ্যম। সেখানেও ভোটের ফলাফল আগাম জানানোর তোড়জোড়। তবে এক্সিট পোল মানেই যে সঠিক হবে, তার কোনও মানে নেই। নিজেদের স্বার্থ মেটাতে ভোটের আবহে অনেক ভুয়ো এক্সিট পোলও ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। যা ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পারে অনায়াসে।
আরও শুনুন: আসন না হোক, বিভাজন-মন্তব্যে ৪০০ পার মোদির! হিসেব তুলে দাবি খাড়গের
প্রশ্ন হচ্ছে, ভুয়ো এক্সিট পোল বোঝা যাবে কীভাবে?
প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে কোথায় এক্সিট পোল দেখানো হচ্ছে। পরিচিত খবরের কাগজে বা টিভি চ্যানেলে এই ধরনের কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে সোশাল মিডিয়ায় অনায়াসে এমনটা করা যায়। চলতি নির্বাচনেও ব্যতিক্রম হয়নি। ভোট পর্ব মিটতে না মিটতে বাজারে ছেয়ে গিয়েছে কিছু এক্সিট পোলের ইনফোগ্রাফিক্স। যা আদতে সঠিক নয়। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, নামী সংবাদমাধ্যমের লোগোও ব্যবহার করা হয়ে সেইসব লেখা বা ছবিতে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সেই লেখা বা ছবির সঙ্গে ওই নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের অন্যান্য লেখার কোনও মিল নেই। যে কোনও সংস্থাই ইনফোগ্রাফিক্স ডিজাইনে নিজস্বতা বজায় রাখে। যা নকল করা মোটেও সহজ নয়। সেখানেই নকল এক্সিট পোল চেনা সম্ভব। এছাড়া এই ধরনের ভুয়ো এক্সিট পোলে অতিরিক্ত রঙের ব্যবহার থাকে। জোর করে কোনও একটা দলের পাল্লা ভারি দেখানো হয়। হিসাব এমনই থাকে, যে কেউ চমকে যেতে বাধ্য। এই ধরনের ছবি দেখলেই বুঝে নিতে হবে বিষয়টা ভুয়ো। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, সোশাল মিডিয়ায় এই ছবি এসেছে কোথা থেকে। সাধারণত কোনও পরিচিত সংবাদমাধ্যমের সোশালমিডিয়া অ্যাকাউন্টে ভেরিফায়েড চিহ্ন থাকে। সেইরকম কোনও পেজে ভুয়ো ছবি থাকা সম্ভব নয়। এছাড়া আরও একটা বিষয় নজরে রাখা উচিত। কমিশনের তরফে যে কোনও নির্বাচনের পর নির্দিষ্ট সময় বলে দেওয়া হয়, তার পর থেকে এক্সিট পোল দেখানো যাবে। সেই সময়ের আগে প্রকাশ্যে আসা এক্সিট পোল মানেই তা ভুয়ো বলা যায়।