FTII-তে প্রতিবাদ জানিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন। এবার কানের মঞ্চে ভারতের নাম উজ্জ্বল করে খবরে ফিরেছেন পায়েল কাপাডিয়া। সেখানেও প্রতিবাদ জানাতে ভোলেননি। ঠিক কী করেছেন পায়েল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কান-এর মঞ্চে ভারতের জয়জয়কার। সৌজন্যে অনসূয়া সেনগুপ্ত এবং পায়েল কাপাডিয়া। একজন সেরা অভিনেত্রীর খেতাব জিতেছেন, অন্যজন পরিচালনায় জিতে নিয়েছেন পুরস্কার। দুজনকে নিয়েই চর্চায় বুঁদ নেটদুনিয়া। তবে পায়েল কাপাডিয়ার চর্চায় ফিরে আসছে তাঁর প্রতিবাদী সত্তার কথা। কান-এর মঞ্চেও নিজের সেই বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে ভোলেননি পায়েল।
আরও শুনুন: তাঁদের ‘দেশবিরোধী’ বলেন হিন্দুত্ববাদীরা, দেশের জন্য খেতাব আনলেন সেই FTII-এর প্রাক্তনীরাই
রোহিত ভেমুলার মৃত্যু থেকে সিএএ চালু করার সিদ্ধান্ত- অন্যায়, মানুষের স্বার্থবিরোধী যে কোনও ইস্যুতেই তাঁরা সরব হন। আর সে কারণে হিন্দুত্ববাদীদের কাছে সহজ টার্গেট হয়ে পড়েন পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা। একইসঙ্গে তাঁদের রাজনৈতিক সরবতাও অনেক ক্ষেত্রেই কেরিয়ারের ক্ষতির কারণও হয়ে ওঠে। যদিও সেসব দমিয়ে রাখতে পারে না তাঁদের। সম্প্রতি পায়েল কাপাডিয়া কান-এ গ্রাঁ প্রি সম্মান পেয়ে তা প্রমাণ করেছেন। তবে পড়ুয়া থাকাকালীন ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের মুখে পড়তে হয়েছিল। সমস্যা হয়েছিল স্কলারশিপ নিয়েও। সেসময় ঐতিহ্যবাহী ফিল্ম ইন্সটিটিউশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন গজেন্দ্র চৌহান। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। পায়েল সে সময় এফটিটিআই-তেই পড়াশোনা করছেন। ছাত্র আন্দোলনে তিনিও শামিল হন। ক্লাস বয়কট করে প্রায় চার মাস আন্দোলন চালান পড়ুয়ারা। ফলত তাঁর বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সে বছরই আর একটি ইস্যুতে প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টরকে ঘেরাও করেন পড়ুয়ারা। প্রায় ৩৫ জন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল, তালিকায় ছিলেন পায়েলও। সেই পায়েলই আজ গোটা দেশকে গর্বিত করেছে কান-এর মঞ্চে। সন্দেহ নেই, তাঁর সতীর্থরা, যাঁরা এককালে কর্তৃপক্ষের রোষের মুখেপড়েছিলেন, তাঁদের সকলের জন্যই এই মুহূর্ত স্বস্তির। তবে কলেজবেলার এই প্রতিবাদ কান-এর মঞ্চেও ধরে রাখতে ভোলেননি পায়েল। স্রেফ তিনি একা নন, তাঁর সিনেমার অভিনেত্রীও মঞ্চে প্রতিবাদ জানাতে ভোলেননি।
আরও শুনুন: বিশ্বে সেরা অভিনেত্রী অনসূয়া, ‘কান’-এর স্বীকৃতি আজও গর্বিত করে বাঙালিকে
প্রথমেই বলতে হয় পায়েলের তৈরি সিনেমার বিষয়ে। তাঁর ডকুমেন্টারি ‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’ আসলে প্রতিবাদের কথা বলে। আসলে, প্রতিবাদ শব্দটার কোনও বাঁধন নেই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠাই এর মূল তত্ত্ব। কাজেই প্রতিবাদের সেই ধারাকে বোঝাতেই এমন সিনেমা তৈরি করেছিলেন পায়েল। আলাদা নয় ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’-র মধ্যে থাকা বার্তাও। কান-এর মঞ্চ জয় করা এই সিনেমাও প্রতিবাদের কথাই তুলে ধরেছে। এতো গেল সিনেমার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো। কান-এর মঞ্চে পায়েলকে এক বিশেষ ব্যাজ পরতে দেখা গিয়েছে। যা ফ্রান্সের শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদ বোঝাতে ব্যবহার করেছিলেন পায়েল। সঠিক বেতনের দাবিতে তাঁরা প্রতিবাদ শুরু করেন। তাতে সমর্থন জানান পায়েলও। এখানেই শেষ নয়। পায়েলের সিনেমার অভিনেত্রী কানি কুস্রুতি (Kani Kusruti)-কে বিশেষ এক ব্যাগ নিয়ে মঞ্চে দেখা গিয়েছে। এই ব্যাগ ব্যবহারের নেপথ্যেও রয়েছে প্রতিবাদের বয়ান। জানা গিয়েছে, প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতেই এমনটা করেছেন অভিনেত্রী।
সুতরাং হাজার বিপত্তি সত্ত্বেও যে প্রতিবাদ ভুললে চলবে না, কান-এর মঞ্চ থেকে কার্যত সেই বার্তাই দিয়ে গেলেন পায়েল ও তাঁর সতীর্থরা।