ভোট দিলে আঙুলে বিশেষ কালির ছাপ দেওয়া নিয়ম। অনেকের কাছেই যা ‘ভোটের কালি’ হিসেবে পরিচিত। ভারতে নির্বাচনের সঙ্গে এই কালির যোগ আজকের নয়। কবে থেকে চালু হল এই রেওয়াজ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বার বার ধুলেও উঠবে না। মুছতে চাইলে মুছবেও না সহজে। ভোটের পর অন্তত এক সপ্তাহ। বয়ে বেড়াতে হবে ‘কালি’-র দাগ। তবু অনেকেই এই দাগ আঙুলে লাগানোর অপেক্ষায় থাকেন। বিশেষ করে যাঁরা প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে এই কালি লাগানো বেশ রোমাঞ্চের।
আরও শুনুন: হাজার খুঁজলেও খোলা বাজারে মিলবে না, কোন সংস্থা বানায় ভোটের নীল কালি?
ভোটদানের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ আঙুলে কালি লাগানো। ভোট দেওয়ার ঠিক আগে আঙ্গুলে লেপে দেওয়া হয় বিশেষ কালি। সকলের কাছে ‘ভোটের কালি’ হিসেবে পরিচিত হলেও এর পোশাকি নাম ‘ইনডেলিবল ইঙ্ক’। দেখে মনে হবে মার্কারের ছাপ। কিন্তু আদতে তা মোটেও সাধারণ কোনও পেন বা মার্কারের কাজ নয়। বরং এ হল এমন এক কালি যা তৈরিই করা হয় শুধুমাত্র ভোটের জন্য। কোনও ভোটার একবারের বেশি যেন ভোট না দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতেই এই কালির জন্ম। যদিও এখন সবকিছুই ডিজিটাল। সেই অর্থে এই ধরনের জালিয়াতি করা কঠিন। তবু ভোটের পর আঙুলে কালি লেপে দেওয়ার রেওয়াজ এখনও বদলায়নি। লোকসভা, রাজ্যসভা সহ যে কোনও ধরনের ভোটেই এই কালি লাগানোর নিয়ম রয়েছে। প্রথমে অবশ্য এই কালির ছাপ দেওয়া হত বুড়ো আঙুলে। নখের ডগাতেই ছাপ দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা ছিল না। পরে সেই নিয়ম বদলায়। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে ভোটের কালি নখের ডগায় লাগানোর নিয়ম চালু হয়। নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা শোনা যায়। কেউ বলেন, আঙুলে কালির ছাপ দেখতে বাজে লাগবে এই বলে ভোট দিতেই অস্বীকার করেন বারাণসীর এক মহিলা। তাঁর যুক্তি ছিল, বিয়ের দিন আঙুলে ওমন দাগ থাকলে মোটেও ভালো লাগবে না। যদিও স্রেফ এই কারণে কমিশন নিয়ম বদলায় একথা বলা যায় না। আসলে, আঙুলের চামড়ায় কালি থাকলে তা ঘষে ঘষে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নখের ডগা অবধি এমন ভাবে কালি লাগানো হয় যাতে নখ না বড় হওয়া অবধি কালি থেকে যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সবই ভোট কারচুপি আটকানোর উপায়মাত্র। চলতি নির্বাচনেও কালি লাগানোর পদ্ধতি বদলায়নি।
আরও শুনুন: হাতের আঙুলেই পড়ে ভোটের কালি, তবে পা দিয়েও কি ভোট দেওয়া যায়?
কবে থেকে চালু হল এই রেওয়াজ?
১৯৫১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ ‘পিউপল বিল’ এ সম্মতি দেন। এতেই স্বাধীন ভারতের নির্বাচনের যাবতীয় নিয়ম উল্লেখ করা ছিল। যার অন্যতম ছিল আঙুলে কালি লাগানোর নিয়ম। শোনা যায়, প্রথম নির্বাচনে প্রায় ৩১৬০০০ ফায়াল কালি তৈরির বরাত দেওয়া হয়। যার জন্য কমিশনের খরচ হয়েছিল প্রায় দু লক্ষ টাকা। এই কালি খোলা বাজারে বিক্রিই হয় না। কমিশনের তরফে অর্ডার দিয়ে তৈরি করা হয় বরাবর। দেশের একটি মাত্র সংস্থাই সেই বরাত পায়। মাইসোর পেন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেড, সংক্ষেপে ‘এমপিভিএল’ এতদিন ধরে ভোটের কালি তৈরি করে আসছে। আদপে এক বিশেষ রাসায়নিক যা তৈরির ফর্মুলা এখনও গোপন রয়েছে সংস্থার কাছে। চলতি নির্বাচনে এই কালি তৈরির জন্য কমিশনের খরচ হচ্ছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। মোট ২৬.৫৫ লক্ষ ভায়াল কালির বরাত দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। হিসাব অনুযায়ী একটি ভায়ালে কমবেশি ১০ মিলিগ্রাম কালি থাকে। যা দিয়ে ৭০০ জন ভোটারের আঙুলে কালি দেওয়া সম্ভব। চলতি বছরের ভোটারের সংখ্যা হিসাব করেই এই পরিমাণ অর্ডার দেওয়া হয়েছে। যাতে ভোটের পর কালি অতিরিক্ত থেকে না যায়। আবার কমও না পরে। সবমিলিয়ে ভোটপর্ব সুষ্ঠভাবে মেটাতে এই কালির ভূমিকাও যে কিছুমাত্র কম নয় তা বলাই বাহুল্য।