নির্বাচনের আবহে বেকারত্ব ইস্যুতে মোদি সরকারকে বিঁধছে বিরোধীরা। আন্তর্জাতিক সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে দেশের ৮৩ শতাংশ যুবাই বেকার। কিন্তু সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ খোদ মোদি। ভোটের আবহে চাকরি নিয়ে ঠিক কী দাবি তাঁর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের উন্নয়ন নিয়ে যত প্রতিশ্রুতিই আসুক না কেন, বেকারত্বের হার কমার কোনও লক্ষণ নেই। এই অভিযোগে সরকার পক্ষকে কাঠগড়ায় তুলছেন বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠছে, নতুন চাকরি কোথায়? এদিকে বিজেপির দাবি বিগত ১০ বছরে দেশজুড়ে যথেষ্ট নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে। খোদ মোদিও নিজের বক্তব্যে সেই দাবি রেখেছেন।
আরও শুনুন: দিব্যি চলছে বউ-কেনা প্রথা, ‘কবে বন্ধ করবেন?’ খট্টরকে সপাট প্রশ্ন ভুক্তভোগী মহিলার
এ দেশে বেকারত্বের সমস্যা নতুন নয়। নির্বাচন যায় আসে, এই সমস্যা থেকেই যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বেকারত্বের জেরে দেশের অবস্থা কার্যত বেহাল। কাজের খোঁজে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে গ্রাম থেকে শহরে, কিংবা শহর থেকে অন্য কোনও শহরের পথে, এমনকি অন্য কোনও দেশেও নিয়ত অভিবাসন চলছে। তবুও কাজ না পাওয়া, অথবা কাজ হারানোর অভিশাপ লেগেই রয়েছে। ভোটের আবহে, এই সমস্যা নিয়ে বেজায় চিন্তিত হয়ে পড়েন বিভিন্ন দলের নেতারা। একদিকে সরকার পক্ষ দাবি তুলে যায় বেকারত্বর সমস্যা দিন দিন কমছে। অন্যদিকে, বিরোধী শিবির পরিসংখ্যান দেখিয়ে পালটা প্রশ্ন তোলে। চলতি লোকসভা নির্বাচনেও সেই তরজা বাদ পড়েনি। বিজেপির বিরুদ্ধে বেকারত্ব ইস্যুতে বারবার আক্রমণ শানাচ্ছে বিরোধীরা। সেই সারিতে কংগ্রেসের নাম শুরুর দিকেই রয়েছে বলা যায়। নির্বাচনী প্রচারে মোদি বেকারত্ব ইস্যুতে মোদি যাই বলছেন, তার পালটা দিতে ছাড়ছেন না কংগ্রেস নেতারা।
আরও শুনুন: গান্ধীদের বিঁধতে গান্ধীই অস্ত্র! ‘বাপু’র জন্য কেন এত আক্ষেপ মোদির?
কিছুদিন আগে এই বিতর্কে ঘি ঢালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার একটি রিপোর্ট। সেখানে দাবি করা হয়, ভারতের ৮৩ শতাংশ যুবাই বেকার। বিরোধী জোট এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে যথেষ্ট আক্রমণ শানিয়েছে। পালটা গেরুয়া শিবিরের তরফেও উত্তর এসেছে। খোদ নরেন্দ্র মোদির কথাই ধরা যাক। সম্প্রতি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে, নতুন চাকরি হওয়ার বেশ কিছু লক্ষণ উল্লেখ করেছেন মোদি। তাঁর দাবি, বিগত এক দশকে দেশজুড়ে স্বতন্ত্র করদাতার সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদির দাবি, যেখানে ২০১৩-১৪ সালে ৩.৩৬ কোটি মানুষ কর দিতেন, সেখানে ২০২৩-২৪ সালে করদাতার সংখ্যা ৮.১৮ কোটি। এই পরিসংখ্যান দেখানোর উদ্দেশ্য দেশে চাকরির সংখ্যা বেড়েছে তা প্রমাণ করা। এখানেই শেষ নয়, দেশজুড়ে ৬ কোটি নতুন চাকরি হওয়ার দাবিও জানিয়েছেন মোদি। সেক্ষেত্রে দেশের যুবসমাজের কাছেই চাকরির সুযোগ এসেছে সবথেকে বেশি এমনটাই বলছেন মোদি। সবমিলিয়ে তাঁর কথায় এটুকু স্পষ্ট, বিজেপি জমানায় দেশে চাকরি তৈরির জন্য যথেষ্ট কাজ হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি.চিদম্বরম মোদিকে এই সমস্ত দাবির তথ্য প্রমাণ প্রকাশের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন। শুধু তাই নয়, এই নিয়ে মোদির কাছে কিছু প্রশ্নও রেখেছেন তিনি। কিছুদিন আগে দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান আইআইটির ৩৮ শতাংশ পড়ুয়ার চাকরি না পাওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। মোদির কাছে এই বিষয়টিরও ব্যাখ্যা চেয়েছেন চিদম্বরম। সবমিলিয়ে নির্বাচনের আবহে, বেকারত্ব ইস্যুকে সামনে রেখে সরকার-বিরোধীর তরজা তুঙ্গে। কিন্তু বাস্তবে এই সমস্যা আদৌ মেটে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।