বিয়ের জন্য বাইরে থেকে বউ কিনে আনাই এলাকার নিয়ম। অথচ সেই স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মানটুকু পর্যন্ত মেলে না। বউ কেনাবেচার এহেন প্রথা নিয়ে নেতারা চুপ কেন? ভোটের প্রচারে খট্টরকে সপাট প্রশ্ন ভুক্তভোগী মহিলার।
ভোট মানেই প্রতিশ্রুতির বন্যা। জনতার ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এলে পরিবর্তে কী কী সুযোগসুবিধা মিলবে, ভোটের প্রচারে সেই লেনদেনের হিসেবনিকেশ চলতেই থাকে। সেই আশ্বাসের মধ্যেই এবার বেসুর প্রশ্ন তুললেন হরিয়ানার এক তরুণী। বিয়ের জন্য তাঁকে কিনে আনা হয়েছিল রাজ্যের বাইরে থেকে। এই কেনাবেচার শিকার অবশ্য তিনি একাই হননি। এখনও এমন প্রথা খোলাখুলিই চালু আছে গোবলয়ের এই রাজ্যে। কিন্তু না তা নিয়ে সরকারের কোনও ভ্রূক্ষেপ আছে, না কোনও দলের নেতাদের প্রতিশ্রুতির ইস্তেহারে এ নিয়ে কথা ওঠে। লোকসভা নির্বাচনের গরম বাজারে এ নিয়েই সরব হলেন তরুণী। ভোটপ্রচারে আসা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরকে তাঁর সপাট প্রশ্ন, এ নিয়ে কবে কথা বলবেন নেতারা? কবেই বা সরকার এই প্রথায় নিষেধাজ্ঞা টানবে?
আরও শুনুন:
বিয়ে ভাঙলেও নেই রেহাই! অন্য পুরুষের কাছে চড়া দামে বিক্রি স্ত্রী, অদ্ভুত প্রথা রাজস্থানে
হরিয়ানার সবচেয়ে অচল অনড় সমস্যাগুলির মধ্যে একটি এই বউ-কেনা প্রথা। এ যুগে দাঁড়িয়ে কোনও সভ্য দেশে মানুষ কেনা বেচার কথা ভাবাই যায় না। এমনকি বিয়ের সময় পণ দেওয়া-নেওয়াকেও বহুদিন আগেই বেআইনি বলেই ঘোষণা করেছে এ দেশের সরকার। কিন্তু তারপরেও, তিন দশকের বেশি সময় ধরে, আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে জাঁকিয়ে চলছে এই বউ কেনা প্রথা। আসলে পুত্র সন্তানের চাহিদা আর লাগাতার ভ্রূণহত্যার জেরে হরিয়ানার পুরুষ নারী অনুপাত এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, সেখানে প্রতিটি বিবাহযোগ্য পুরুষের বউ মেলা ভার। সুতরাং বাইরে থেকে বউ কিনে আনা হয় দেদার। মূলত বাংলা আর বিহারই এই বউ কেনাবেচার বড় বাজার। স্থানীয় ভাষায় এই কিনে আনা বউদের বলা হয় ‘মোল কি বহু’। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের মতো এলাকার নাগরিক হওয়ার সম্মান মেলে না তাঁদের। না বাড়িতে, না এলাকায়, দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে অপমান সয়ে যাওয়াই তাঁদের নিয়তি। তার উপরে স্বামীর মৃত্যু হলে আরও শোচনীয় হয় তাঁদের অবস্থা।
এই অবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বছর তিরিশের ঊর্মিলা। তিনি এই সমগ্র পরিস্থিতিরই শিকার। স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বছর পাঁচেক আগে, আপাতত আট বছরের মেয়েকে নিয়ে কোনওমতে দিন চলছে তাঁর। তাঁর প্রশ্ন, হরিয়ানার পুরুষেরা যদি এই কিনে আনা স্ত্রীদের সম্মান দিতেই না জানে, তবে স্ত্রী কিনে আনার কথা ভাবে কেন? এই প্রথার উপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত বলেই মনে করেন ঊর্মিলা। তাঁর আশা, তেমনটা হলে হয়তো তাঁদের গুরুত্ব, মেয়েদের গুরুত্ব বুঝতে শিখবে হরিয়ানা।
আরও শুনুন:
কনের বয়স্ক দাদাকে বিয়েতে বাধ্য বরের বোন! রাজস্থানের অদ্ভুত প্রথার বলি বহু তরুণী
চার কিলোমিটার পথ উজিয়ে খট্টরকে এই প্রশ্ন করতে এসেছিলেন ঊর্মিলা। উত্তর মেলেনি। খট্টর নিজের দলের সাফল্যের খতিয়ান দিয়েই কাজ সেরেছেন। নিরাপত্তার ব্যূহ ভেদ করে তাঁর কাছে পৌঁছতেই পারেননি ঊর্মিলা। নেতার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ নাকচ হয়ে গিয়েছে। তাঁর চিৎকারে কান না দিয়ে তড়িঘড়ি গাড়িতে উঠে এলাকা ছেড়েছেন খট্টর। আর আরও একবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকার যতই ‘বেটি বচাও বেটি পড়াও’-এর স্লোগান তুলুক না কেন, কোনও সরকার, কোনও দলেরই আসলে গোটা দেশের মেয়েদের নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই। মেয়েদের হাতবদল হয়ে যাওয়ার নিয়তি কবে বদলাবে, ঊর্মিলার এ প্রশ্নের উত্তর তাই জানে না কোনও ভোটপ্রচারই।