প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ বলছে, দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে, উলটে বেড়েছে মুসলিমদের সংখ্যা। কিন্তু সেই রিপোর্ট কতখানি গ্রহণযোগ্য? জনগণনা ছাড়া সংখ্যা নির্দেশ করাই বা যায় কীভাবে? কেন্দ্রকে প্রশ্ন বিরোধীদের। কী বলছেন তাঁরা? শুনে নেওয়া যাক।
দেশে হিন্দু জনতার সংখ্যা কমেছে ৮ শতাংশ। একইসঙ্গে বেড়েছে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা। নির্বাচনের মধ্যেই সম্প্রতি এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে পেশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ। ভারতে সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত, এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে এমনটাই দাবি করতে চাইছে সরকার। এদিকে জনগণনা ছাড়াই কীভাবে এহেন রিপোর্ট প্রকাশ করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সেখানে এই রিপোর্ট আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়েই এবার সুর চড়ালেন তেজস্বী-ওয়াইসিরা।
আরও শুনুন:
স্বাধীনতার পর থেকে যাননি কোনও প্রধানমন্ত্রী, মোদি পুজো দিয়ে এলেন সেই মন্দিরেও
হিন্দু বনাম মুসলিম, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্যতম জ্বলন্ত ইস্যু এটাই। কখনও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি নিয়ে বিজেপির দিকে উঠছে অভিযোগের আঙুল, তো কখনও কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারে মুসলিম লিগের ছাপ রয়েছে বলে তোপ বিজেপির। সম্প্রতি সংরক্ষণ প্রসঙ্গেও বারবার এই ইস্যু টেনেই আক্রমণ শানিয়েছে গেরুয়া শিবির। খোদ নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সংরক্ষণের নামে কংগ্রেস আসলে তাদেরকেই দেশের সব সম্পদ দিয়ে দিতে চায়, যাদের সন্তানসংখ্যা বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না, নাম না করেও এখানে নিশানা ছিল মুসলিমদের দিকেই। এই পরিস্থিতিতেই প্রকাশ্যে এসেছে এই রিপোর্ট। তবে এই সময় পর্যন্ত জনগণনার নিরিখে নয়, ১৯৫০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ১৯৫০ সালে ভারতের নাগরিক ছিলেন ৮৪ শতাংশ হিন্দু। আর মুসলিম ছিলেন ৯.৮৪ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৭৮ শতাংশ হিন্দু বসবাস করছেন দেশে। মুসলিম প্রায় ১৪ শতাংশ, অর্থাৎ তাদের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এই হিসেব থেকে এ কথাও স্পষ্ট যে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত সংখ্যার হিসেবে হিন্দুদের মোট জনসংখ্যার কাছাকাছিও পৌঁছয়নি মুসলিমদের সংখ্যা। যদিও বিজেপির একাধিক নেতার বক্তব্য, বেআইনি অনুপ্রবেশ, ধর্মান্তর, এবং কংগ্রেসের মুসলিম তোষণের দরুনই মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে হুহু করে। যা বদলে দেবে দেশের সাংস্কৃতিক মানচিত্র।
আরও শুনুন:
ইসলাম ছেড়েছেন, তবু শরিয়তের গেরোয় মিলছে না সম্পত্তি! আইনের দ্বারস্থ ক্ষুব্ধ মহিলা
বিজেপির এহেন বক্তব্যের পালটা এবার সরব বিরোধীদের একাংশ। এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি প্রথমেই দাবি করেছিলেন, এ রিপোর্ট আসলে হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ফসল, এর কোনও ভিত্তি নেই। পুরো রিপোর্ট দেখতে চাওয়ার দাবিও জানান তিনি। এদিকে আরজেডি-র তেজস্বী প্রসাদ প্রশ্ন তুলছেন, জনগণনা ছাড়া কীভাবে এমন তথ্য পেশ করা যায়? এমনিতেই ভোটের আগে বারবার জনগণনার দাবিতে সুর চড়িয়েছিল কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। মহিলা বিল সহ একাধিক সংরক্ষণ বিলের লাগু হওয়ার বিষয়টিও জনগণনা না হওয়া পর্যন্ত আটকে রয়েছে। কিন্তু তারপরও এখনও পর্যন্ত আদমশুমারির পথে হাঁটেনি কেন্দ্র সরকার। সেখানে এই রিপোর্টকে ঘিরে ফের জনগণনার প্রশ্নটিই উসকে দিলেন তেজস্বী। শুধু তাই নয়, খোদ নরেন্দ্র মোদির কাছেও তাঁর আর্জি, হিন্দু মুসলিম বিভাজন ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের সমস্যার দিকে মন দিন তিনি। এর মধ্যে স্বাধীন সংস্থা পিএফআই-ও দাবি করেছে, এই রিপোর্টকে ভিত্তি করে মুসলিম জনসংখ্যা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হচ্ছে।
ভোটের বাজারে বিভাজনের রাজনীতি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এই সময়েই এহেন রিপোর্ট যে ফের বিভাজন বিতর্ক উসকে দেবে, বিরোধীদের প্রশ্ন স্পষ্ট করে দিল সে কথাই।