বিয়ের পরে কনেকে যেতে হবে শ্বশুরবাড়িতে, এমনই নিয়ম চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু এ যুগের অনেক নারীই আপত্তি জানাচ্ছেন এ প্রথায়। স্বামীর পরিবারের সঙ্গে থাকতে নারাজ তাঁরা। কী যুক্তি দিচ্ছেন এই তরুণীরা? শুনেই নেওয়া যাক।
বিয়ে করলেই নাকি পর হয়ে যাবে ছেলে। কারণ স্বামীর পরিবারের সঙ্গে একত্রে সংসার করতে আপত্তি জানাবে পুত্রবধূই। এমনটাই মনে করেন বহু মা-বাবা। কিন্তু বিষয়টা কি ঠিক এরকমই? এ যুগের যে কোনও তরুণীই কি একা থাকার পক্ষপাতী? আর যদি তেমনটাই হয়, তবে তার নেপথ্যেও কী কারণ রয়েছে? সম্প্রতি ভারচুয়াল মিডিয়ার এক পোস্টের সূত্রে সামনে এল সে কথা। যেখানে এই পারস্পরিক দোষারোপের বাইরে গিয়েই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছেন এক তরুণী।
আরও শুনুন:
বাবার পদবি ব্যবহার করতে লাগবে স্বামীর অনুমতি! এ দেশের মেয়েদের বড় হতে নেই?
সৃষ্টি রাজ নামের ওই তরুণী লিখেছেন, কর্মক্ষেত্রে তিনি যত বিবাহিতা মহিলার অভিজ্ঞতা শুনেছেন, তা তাঁর কাছে আদৌ সুখকর নয়। শ্বশুরবাড়ির নানারকম অভিজ্ঞতার দরুন ওই মহিলাদের একাধিকবার চোখের জল ফেলতে দেখেছেন তিনি। সেখান থেকেই এই বিষয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে তাঁর। আর সে বিষয়টি নিয়ে আরও ভাবতে গিয়েই আরও একাধিক বিষয়ে নজর পড়েছে তাঁর। ওই তরুণী জানিয়েছেন, স্কুলের পড়া শেষ হওয়ার পর থেকেই একা থাকতে অভ্যস্ত তিনি। পড়াশোনার কারণে, চাকরির সূত্রে বাড়ির বাইরে একা থাকতে হয়েছে তাঁকে। যেমনটা আজকের দিনে অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর ক্ষেত্রেই সত্যি। কিন্তু প্রায় বছর দশেক পর, কোভিডের সময় ফের বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে একসঙ্গে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেসময় তিনি দেখেন, বড়রা বয়সে ছোটদের বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিতেই পছন্দ করেন। সন্তান যে বড় হয়েছে, কাজের জগতে এবং ব্যক্তিগত পরিসরে সে ইতিমধ্যেই নানারকম দায়িত্ব সামলাচ্ছে, এ কথাটি তাঁরা খেয়াল রাখেন না। এই পরিস্থিতিতে সারাক্ষণ বেঁধে দেওয়া নির্দেশ শুনে চলতে অস্বস্তি হয় ওই বেড়ে ওঠা সন্তানেরই। সৃষ্টি বলছেন, যেখানে মা-বাবার ক্ষেত্রেই এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সেখানে অন্য কোনও পরিবারে হঠাৎ করে মিলেমিশে যাওয়া তো আরও সমস্যার। স্বাভাবিকভাবেই নির্দিষ্ট বয়সের পর যে কোনও মানুষই বোধে বিবেচনায় পরিণত হয়ে ওঠে। পরিবারে সেই বোধকে গুরুত্ব না দেওয়া হলে সেখানে থাকাও সহজ হয় না, এ কথাই বলছেন ওই তরুণী।
আসলে এই বোধটি জুড়ে আছে স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়ার সঙ্গেও। সৃষ্টি বলছেন, এমনকি নিজেদের বাড়ি কীভাবে সাজানো হবে, সে বিষয়েও শেষ কথা তাঁর মা-ই বলেন। তাঁকে বা তাঁর ভাইকে নিজেদের ঘর সাজানোর অনুমতি দেওয়া হয় মাত্র। সেখানে অন্য কোনও বাড়িতে, অন্য কোনও নারীর পক্ষেও যে তেমনটা করাই স্বাভাবিক, এ কথা অনুমান করাই চলে।
আরও শুনুন:
বিয়েতে বাবার ‘অনুমতি’ বাধ্যতামূলক কেন? কন্যা সম্প্রদান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন নারীরা
এমনিতেই বিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিস্থিতিতে নিয়ে ফেলে দুজন মানুষকে। দুজনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাবুঝির জায়াগা আসতেও সময় লাগে। সেখানে একজন মেয়েকে যে তার অভ্যস্ত পরিবার ও পরিবেশ ছেড়ে নতুন জায়গায় আসতে হচ্ছে, তাতে মানিয়ে নিতে আরও সময় লাগারই কথা। এই পরিস্থিতিতে শুধু স্বামী নয়, আরও একাধিক নতুন ও অজানা মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চাপও তার উপরেই চেপে বসে। এ দেশের সংস্কৃতিতে অলিখিত ধারণা রয়েই গিয়েছে যে, মানিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক দায় বাড়িতে সদ্য আসা নববধূর, অন্যদের নয়। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি মেয়েটির কাছে চ্যালেঞ্জের মতোই হয়ে ওঠে। আজকের কর্মব্যস্ততার যুগে সে চ্যালেঞ্জ নিতেই যে আসলে পিছিয়ে যাচ্ছেন অনেকে, সে কথাই বুঝিয়ে দিলেন এই তরুণী।