‘যত ভোট, তত গাছ’, মনোনয়নের দিন প্রতিশ্রুতি দিলেন এক তারকা প্রার্থী। আর সে ঘটনাই বুঝিয়ে দিল, কেবল টাকাপয়সা-সুযোগসুবিধাই নয়, এবার নির্বাচনী আশ্বাসে জরুরি হচ্ছে পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নির্বাচন এলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথাবার্তা আরও জোরালো হয়। দলগুলির মতামত, আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা খতিয়ে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলে, দেশবাসীর বেঁচে থাকা কোন শাসনে খানিক সুগম হতে পারে। কথা ওঠে, কোন শাসনে দেশের সাংবিধানিক পরিসর বেশি সংকটে পড়ছে, তা নিয়েও। কিন্তু এই সময়টা ক্রমশ বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই সংকট কেবল মানুষের ভালো থাকা না-থাকা নিয়ে নয়। মানুষের নিজস্ব পরিসরের বাইরে তাকানোও সেখানে ক্রমশ জরুরি হয়ে উঠছে। মানুষ আর মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা, সকলকে নিয়েই সে পরিসর, তথা পরিবেশ। সেই পরিবেশের ভালো থাকা না-থাকাও যে মানুষের ভালো থাকার জন্য জরুরি, বা বলা ভালো, মানুষের ভালো থাকা যে পরিবেশের ভালো থাকার উপরেও নির্ভর করে, সে কথাটিকে আর এড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। কেবলমাত্র টাকাপয়সা, প্রকল্প, ধরাছোঁয়ার সুযোগসুবিধা দিয়েই মানুষের ভালো থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যদি দূষণের জেরে পরিবেশই বিপন্নতার মুখে মুখ থুবড়ে পড়ে। সাম্প্রতিক কালে রাজ্য, দেশ, এমনকি গোটা বিশ্বেও তাই সভ্যতার সংকট বলতে কেবল মানুষের সংকটকে বোঝালে চলে না, পরিবেশের সংকটের কথাও সেখানে একইভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
-: আরও শুনুন :-
যেখানে সোনম ওয়াংচুক নেই, সেখানে পরিবেশ বেশ আছে তো?
কিন্তু নির্বাচনের মুখে বিভিন্ন দল যে ইস্তেহার প্রকাশ করে, সেদিকে তাকালে দেখা যাবে, তাতে পরিবেশের ঠাঁই মেলেই না প্রায়। বিজ্ঞানী-গবেষকেরা যতই পরিবেশের দিকে নজর দেওয়ার আর্জি জানান না কেন, আমজনতার যেমন সে খেয়াল নেই, তেমনই তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয় রাজনীতিক মহলও। চটজলদি পাইয়ে-দেওয়ার বিনিময়ে ভোট আদায়ের দিকেই লক্ষ্য নেতাদের। অন্তত এতদিন তার বিশেষ ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। এতদিন সাধারণত আর্থিক প্রাপ্তির হিসেবনিকেশই থাকত নির্বাচনী ইস্তেহারে। কিন্তু ক্রমশ দেখা যাচ্ছে, প্রচারের প্রতিশ্রুতিতে আর কেবল টাকাপয়সাই নয়, জুড়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভাবনাও।
তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব যেমন মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েই ঘোষণা করেছেন, এবারে যত ভোট পাবেন, ততগুলো গাছ লাগাবেন তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে। গরমের তীব্র দাবদাহের মধ্যে দাঁড়িয়ে বৃক্ষরোপণের প্রয়জনীয়তার কথাও মনে করিয়েছেন তিনি। কিছুদিন আগেই তামিলনাড়ুর ভোটে মিলেছিল সবুজে ভরা দশটি পোলিং বুথের হদিশ। তামিলনাড়ু ক্লাইমেট চেঞ্জ মিশনের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বাঁশপাতা এবং নারকেলপাতা দিয়ে বুথগুলি সাজিয়ে তুলেছিলেন ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর। পরিবেশবান্ধব থাকার বার্তা দিতেই এ কাজ করেছিলেন তাঁরা। ভোটের মুখেই নির্বাচন কমিশনও আর্জি জানিয়েছিল প্লাস্টিকের ফ্লেক্স-ব্যানার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে। কেননা ভোট ফুরলে দেখা যায় এইসব প্লাস্টিকের স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিকে সেদিকে। পরিবেশ দূষণে সেসবের জুড়ি মেলা ভার। সে কথায় কতজন কান দিচ্ছেন, তা এখনই বলা মুশকিল। কিন্তু দূষণ প্রসঙ্গে একেবারে নীরবতা থেকে এইটুকু সতর্কবার্তা পর্যন্তও যে পৌঁছনো গেল, তাই বা কম কী?
-: আরও শুনুন :-
মুখ ঢেকে যায় নির্বাচনে! তবে ভোটের রাজনীতি কি পারবে প্লাস্টিকমুক্ত হতে?
চলতি ভোটের মুখেই হিমালয়সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃতির বিপন্নতা নিয়ে অনশনে বসেছিলেন সোনম ওয়াংচুক। পরিবেশভাবনার ছিটেফোঁটা না রেখে বিকাশের বুলডোজার চালালে যে আদতে আমাদের সকলেরই বিপদ, সে কথা বোঝাতেই অতন্দ্র প্রহরী হয়ে বসেছিলেন তিনি। ভোটপ্রচারে যে ঢালাও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন নেতারা, সেই উন্নয়নের পাশাপাশি কিন্তু পরিবেশ রক্ষার কথাটিও মাথায় রাখা জরুরি। সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলি সেই ভাবনা যে খানিক উসকে দিল, আশার কথা এটুকুই।