তালিবানি সন্ত্রাসে সবার আগে আক্রমণ নেমে আসে মেয়েদের উপর। ক্ষমতা দখলের এই খেলায় মেয়েরা হয়ে ওঠে তাদের হাতের তাস। ভোগ্যপণ্য। যৌনদাসী করে রাখা হয় বিধর্মী বন্দি মেয়েদের। একদা যৌনদাসী হয়ে কাটাতে হয়েছিল নাদিয়া মুরাদকেও। সেই দুঃস্বপ্নের কথা ভাগ করে নিয়েছিলেন নোবেলজয়ী। সম্প্রতি আবার বিশ্বে যখন ঘনিয়ে উঠেছে সেরকমই কালো মেঘ, তখন শুনে নেওয়া যাক নাদিয়ার সেদিনের অভিজ্ঞতা।
তালিবানের নতুন নির্দেশে ভয়ে কাঁপছেন আফগানিস্তানের আমজনতা। গণধর্ষিতা নাদিয়া মুরাদের মতোই কি হতে চলেছে সে দেশের অধিকাংশ কিশোরীর বিধিলিপি? প্রশ্ন সবার মনে।
মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার পরেই আফগানিস্তান জুড়ে শক্তি জাহির করতে শুরু করেছে তালিবান। সম্প্রতি তালিবান কালচারাল কমিশনের কাছ থেকে একটি তালিকা তৈরি করার নির্দেশ পেয়েছেন স্থানীয় ধর্মগুরুরা। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের কিশোরী এবং ৪৫ বছরের কম বয়সি বিধবা মহিলাদের নাম থাকবে সেখানে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, তালিবান যোদ্ধাদের বিয়ের জন্য এই মেয়েদের প্রয়োজন। তাদের নিয়ে যাওয়া হবে পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে, এবং সেখানে সবাইকে গ্রহণ করতে হবে ইসলাম।
আরও শুনুন: Sexual Pandemic: এবার কি যৌন অতিমারী গ্রাস করবে বিশ্বকে?
এই নির্দেশে হাড় হিম করে দিয়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের। জেহাদি গোষ্ঠীর কার্যাবলির সঙ্গে তাঁদের পরিচয় নতুন নয়। তাঁরা জানেন, আফগানিস্তানে তালিবান ফিরলে মেয়েদের জীবনে ভয়াবহ অন্ধকার নেমে আসবে। তাঁদের আশঙ্কা, এবার জোর করে বাড়ির মেয়েদের তুলে নিয়ে যাবে তালিবান জঙ্গিরা। জেহাদের নামে জঙ্গিদের লালসা মেটাতে যৌনদাসী করা হবে তাদের। ভিনধর্মীদের অবস্থা হবে আরও শোচনীয়। এই নির্দেশনামা তাই অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে আইসিসের হাতে বন্দিনী থাকা নাদিয়া মুরাদের কথা।
কে নাদিয়া মুরাদ? মালালা ইউসুফজাই-এর মতো নাদিয়া মুরাদও নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপক। দুজনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর অত্যাচারের প্রসঙ্গ। কিন্তু ২০১৮ সালে যখন নাদিয়া মুরাদ নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন, বলা হয়েছিল, আসলে নোবেল-ও সম্মানিত হল তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে। এই পুরস্কারের আগে নাদিয়া যে দীর্ঘ অত্যাচারের পথ পেরিয়ে এসেছেন, তা মনে রেখেই বলা হয় এ কথা।
আরও শুনুন: দেশের এইসব মন্দিরে পুরুষের No Entry! কেন জানেন?
২০১৪তে আইসিস যখন উত্তর ইরাকের কোচো নামের ছোট্ট গ্রামে হানা দিল, নাদিয়া তখন ২১ বছরের তরুণী। সে গ্রামের সবাই ইয়াজিদি, অর্থাৎ অ-মুসলমান। গণহত্যার শিকার হলেন গ্রামের সব পুরুষ, যাঁদের মধ্যে নাদিয়ার ছ’ভাইও ছিল। এই নরমেধ যজ্ঞ দেখতে বাধ্য হলেন নাদিয়া-সহ অন্যান্য মেয়েরা। হত্যালীলা শেষে জঙ্গিরা হাত বাড়াল তাঁদের দিকে। নাদিয়ার মা-সহ আশিজন বয়স্ক মহিলাকে মেরে ফেলা হল, যাদের দাম নেই আইসিসের স্লেভ মার্কেটে। হ্যাঁ, মধ্যযুগে যেমন ক্রীতদাস কেনাবেচার হাট বসত, একুশ শতকেও আইসিস তেমনই এক বাজার বসিয়েছিল। এই বাজারে মিলত কেবল নারীদেহ। নাদিয়ার মতো কিশোরী বা তরুণী মেয়েরাই এর পণ্য। বিজ্ঞাপন দেওয়া হত সোশাল মিডিয়াতেও। প্রথমে গণধর্ষণের শিকার হত আইসিসের বন্দিনী মেয়েরা, তারপর তাদের নিয়তি বিক্রি হয়ে যাওয়া বা উপহার হিসেবে হাতবদল। নাদিয়ার ভাগ্য আলাদা কিছু ছিল না। ‘সাবায়া’ বা যৌনদাসী হিসাবে মাসের পর মাস ধর্ষিতা হয়েছেন নাদিয়া৷ পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন, শাস্তি হিসেবে জুটেছে অকথ্য অত্যাচার, তারপর গণধর্ষণ।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।