কর্মরত মহিলাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? তাহলেই নাকি মারাত্মক ভুল করবেন। সোশাল মিডিয়ায় এহেন সাবধানবাণী এক ব্যক্তির। কর্মরত নারীকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে কী ভাবছেন ভারতীয় পুরুষেরা? শুনে নেওয়া যাক।
কাজের জগৎটা পুরুষের, আর মেয়েরা থাকবে অন্দরমহলে। দীর্ঘদিন এমনই বেড়া টানা ছিল ঘর আর বাইরের মাঝখানে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির মতো আস্তে আস্তে সেই ধারণা থেকে অনেকখানিই বেরিয়ে এসেছে ভারত। মেয়েদের কাজ করা এখন আর এ দেশে নতুন কিছু নয়। যদিও কাজের জগতে মেয়েদের শ্রম ও বুদ্ধির দক্ষতা নিয়ে এখনও যে নানারকম কথা ওঠে না, তা নয়। পুরনো দিনের ধ্যানধারণা থেকেও এখনও সকলে বেরিয়ে আসতে পারেননি, যাঁরা মনে করেন যে ঘর সামলানোটাই আসলে মেয়েদের কাজ। ফলে বিবাহিতা মহিলাদের অনেকসময়ই এই ঘর ও বাইরের টানাপোড়েনে পড়তে হয়। সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ার একটি পোস্ট সেই বিতর্ককেই উসকে দিল ফের। একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিল এ প্রসঙ্গে ভারতীয় পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও।
আরও শুনুন:
যিনি রাঁধেন, তাঁর ভোটে দাঁড়ানো মানা?
কেউ যদি উচ্চশিক্ষিত এবং কর্মরতা কোনও নারীকে বিয়ে করেন, তবে তা তাঁর জীবনের অন্যতম খারাপ সিদ্ধান্ত। – সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে এমনটাই লিখেছেন বিজয় মারাঠে নামের এক ব্যক্তি। কোনও নারীর মধ্যে এই দুই বৈশিষ্ট্য থাকাকে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ বলেই দাগিয়ে দিচ্ছেন যিনি, অর্থাৎ যে বৈশিষ্ট্য দেখে আগেভাগেই সতর্ক হওয়া উচিত। একুশ শতকে দাঁড়িয়েও কেউ মেয়েদের শিক্ষা এবং কাজের অধিকার নিয়ে এহেন কথা বলছেন, তা দেখে অবাক হওয়ারই কথা। এই পোস্টেও ওই ব্যক্তিকে পালটা জবাব দিয়েছেন অনেকেই। কেউ বলেছেন, আসলে স্ত্রী নয়, দাসী আনার কথা ভাবলেই এমনটা মনে করা যায়। অনেকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে নারী ও পুরুষ উভয়ের মিলিত শ্রমেই সংসার ও সমাজ উন্নতির পথে এগোতে পারে। তবে উলটো মতও যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। ওই ব্যক্তিকে সমর্থনও জানিয়েছেন একাধিক জন। কারও কারও যুক্তি, উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের মধ্যেই বিবাহবিচ্ছেদের হার বেশি, কারণ তারা নারীবাদী। ওই ব্যক্তির উত্তরেও স্পষ্ট যে, নারীবাদের ভাবনা নিয়েই তাঁর আপত্তি রয়েছে।
আরও শুনুন:
বাবার পদবি ব্যবহার করতে লাগবে স্বামীর অনুমতি! এ দেশের মেয়েদের বড় হতে নেই?
কিন্তু কথা হল, সোশাল মিডিয়াতে যতই অনেকে এই মতের বিরোধিতা করুন না কেন, এহেন ভাবনা কি নেহাতই বিচ্ছিন্ন কোনও মতামত? ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় পুরুষদের একটা বড় অংশই কর্মরতা স্ত্রী পছন্দ করেন না। তথ্য বলছে, যে মহিলারা চাকরিজীবী নন, তাঁদের তুলনায় কর্মরতা মহিলারা এই সাইটগুলিতে ১৫ শতাংশ কম সাড়া পান। তার উপর সে কাজ যদি তথাকথিত পুরুষালি হয়, সেক্ষেত্রে আগ্রহ কমে যায় আরও দ্রুত। সেই কাজগুলিতে কাজের সময় সাধারণত বেশি, এবং ধরাবাঁধা সময়ও সর্বদা থাকে না। ফলে সেখানে স্ত্রী গৃহকর্মে কম সময় দেবেন এমনটাই আশঙ্কা অনেকের। একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, এ দেশে বিবাহিত পুরুষের তুলনায় বিবাহিতা নারীরা অন্তত ৭.৫ শতাংশ বেশি সময় ব্যয় করেন ঘরের কাজে। যে ঘরের কাজকে ‘কাজ’ বলে ভেবেই উঠতে পারেন না অধিকাংশ মানুষই, তার জন্য প্রাপ্য সম্মান বা আর্থিক মর্যাদা দেওয়া দূরে থাক। কিন্তু উচ্চশিক্ষা বা আর্থিক স্বাবলম্বনের দরুন সেই অসম্মান চিনে নেওয়া সহজ হয়। অসম্মান সহ্য করে বাধ্যত সংসার টিকিয়ে রাখার দায়ও তখন কমে আসে। আর এখানেই হয়তো লুকিয়ে থাকছে কর্মরত নারীর প্রতি বিমুখ হওয়ার আসল কারণটি। সময় বদলেছে, কিন্তু নারী কী করবে, কী করবে না- এই নির্দেশিকা বেঁধে দেওয়ার পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণা তো সম্পূর্ণ বদলায়নি। সেই লুকোনো মনোভাবকেই আরও একবার সামনে নিয়ে এল এই সাম্প্রতিক বক্তব্যটি।