দেশের সংবিধান বদল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কানাঘুষো চলছে রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু এই বদল ঘটলে কার কী লাভ হবে? এবার সে ব্যাখ্যা দিলেন অমর্ত্য সেন। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দেশের সংবিধানই বদলে ফেলতে চায় বিজেপি। বারে বারেই এই অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিশেষ করে সিএএ-এনআরসি কিংবা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো আইনের প্রসঙ্গে বারবার এই আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু দেশের সংবিধান বদলে গেলে কার কী লাভ? এবার তা-ই বিশ্লেষণ করলেন অমর্ত্য সেন।
আরও শুনুন :
কাকে কেন ভোট দেবেন? আন্দাজে ঢিল না ছুড়ে করুন পড়াশোনা, থাকল বইয়ের হদিশ
দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচনের গরম হাওয়া। ভোটের বাজারে আরও জোরালো হচ্ছে শাসক-বিরোধী চাপানউতোর। নির্বাচনী বিধি লাগু থাকা সত্ত্বেও বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণের অভিযোগও উঠছে। বিশেষ করে সম্প্রতিই সম্পত্তির পুনর্বণ্টন প্রসঙ্গে মোদির মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মুসলিমদের প্রতি নিশানা। আমিষ খাওয়াকে হিন্দুত্বের পরিপন্থী, এমনকি মুঘলদের মতো মানসিকতা বলেও তোপ দাগা হয়েছে। এর আগেও হিন্দুরাষ্ট্রের দাবি শোনা গিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতার মুখে। আর এই সবকিছুই এই আশঙ্কাকে আরও উসকে দিচ্ছে যে, সমস্ত বৈচিত্র্যকে একেবারে মুছে দেশকে একমাত্রিক করে তোলাই কি তাঁদের লক্ষ্য? অথচ প্রত্যেক মানুষকে ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ ও মতপ্রকাশের অধিকার দিয়েছে দেশের সংবিধানই। তাহলে তো সেই সংবিধানকেই বদলে ফেলতে হয়। বিজেপির কার্যকলাপে সেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আর এই পরিস্থিতিতেই মুখ খুললেন অমর্ত্য সেন। তাঁর সাফ বক্তব্য, সংবিধান বদলালে লাভ হবে বইকি। তবে সে লাভ কেবল বিজেপির খাতায়। যারা কেবল একটি ধর্মের ভিত্তিতেই দেশকে দাঁড় করাতে চায়, উপরন্তু দেশের এক শ্রেণি তথা উচ্চবর্গকেই যাবতীয় সুবিধা দিতে চায়, সেই লক্ষ্য পূরণের পথ খুলে দেবে সংবিধানে বদল। কিন্তু তাতে আমজনতার কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি আরও বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারত, তার সংবিধানও সেই নিরপেক্ষতার আদর্শ মেনেই তৈরি হয়েছিল। সেখানে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মপরিচয়কে গুরুত্ব দিলে হিন্দুদের একটা বড় অংশ নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট হবে। কিন্তু তাতে ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক, বহু সংস্কৃতিকে মান্যতা দেওয়া ইতিহাসকেই অস্বীকার করা হবে।
আরও শুনুন :
সুড়ঙ্গ ধসের স্মৃতি অতীত! হিমাচল-উত্তরাখণ্ডেও ভোটের মুখে কথা নেই পরিবেশ নিয়ে
এদিকে বিজেপির হিন্দুত্বের পালটা জাতিভিত্তিক শুমারি ও সংরক্ষণের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। হিন্দুরাষ্ট্রের একমাত্রিকতার বিপরীতে সেই পথেই কি সুরাহা মিলতে পারে? বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ কিন্তু কেবল সে কথা মনে করছেন না। তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জাতিগত শুমারি জরুরি বটে, কিন্তু দেশের পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য শিক্ষা ও চাকরির বন্দোবস্ত করা এই মুহূর্তে দেশের আরও বেশি প্রয়োজন। প্রয়োজন লিঙ্গসাম্যের ভাবনাও। অর্থাৎ কোনও এক বিশেষ ধর্ম বা শ্রেণির মানুষের সুবিধা নয়, ভারতের সংবিধান যে সাম্য ও সমানাধিকারের বার্তা দেয়, লোকসভার আবহে সে কথাই ফের মনে করিয়ে দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।