গরমে নাজেহাল সকলেই। হিটস্ট্রোকে মৃত্যর খবর শোনা যাচ্ছে প্রায়ই। তবে স্রেফ মানুষ নয়, অত্যধিক গরমে হিটস্ট্রোক হচ্ছে পাখিদেরও। যাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে দিল্লির এক হাসপাতাল। হালে নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বিনামূল্যে পাখিদের চিকিৎসা করছে ওই হাসপাতাল। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চাঁদিফাটা গরম। একটু রোদ উঠলেই বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ করছেন অনেকেই। দরজা জানলা এঁটে এসি চালিয়ে খানিক শান্তি। যাদের সে সামর্থ্য নেই, তাঁরাও নানা প্রাকৃতিক উপায়ে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু যাদের স্থায়ী ঠিকানাই নেই, এই গরমে তাদের কথা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
আরও শুনুন: বিয়ার, বার্গার, বাইক… শহুরে অল্পবয়েসিদের ভোট টানতে চলছে দেদার অফার
মানুষ তবু নিজের বুদ্ধির জোরে কোথাও না কোথাও ঠাঁই জুটিয়ে নেয়। কিন্তু অবলা পশু, যাদের ঘরবাড়ি ওই রাস্তা, তারা এই গরমে কার্যত বেহাল হয়ে পড়েছে। সবথেকে ভয়ঙ্কর অবস্থা পাখিদের। শহুরে হাই রাইজের বাড়বাড়ন্ত বাঁচিয়ে রাখেনি একটাও গাছ। কার্যত ঘরছাড়া হয়ে উড়ে উড়ে দিন কাটাচ্ছে পাখির দল। বাসা থাকলেও, সেখানে সারাদিন থাকার উপায় নেই। খাবার জোগাড়ের জন্য বাইরে যেতেই হবে। আর তাতেই বিপত্তি। প্রচণ্ড গরমের চোটে উড়তে উড়তেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে অবলা পাখি। এমনকি জলটুকুও তৃপ্তি ভরে পান করতে পারছে না তারা। দুপুর রোদে যে কোনও জলাশয়ের উপরের অংশ এতটাই তেতে যাচ্ছে, তা পানের অযোগ্য। কাজেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করেও হেরে যেতে বাধ্য হচ্ছে পাখির দল। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে বছরের এই সময়টুকু পাখিদের জন্য জল রেখে দেন। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। চড়া রোদে বাইরে থাকাটাই কাল হয়ে উঠছে তাদের কাছে। এক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে দিল্লির এক হাসপাতাল। রাজধানীর এই পাখি চিকিৎসালয় অবশ্য নতুন নয়। সেখানেই হিটস্ট্রোক হওয়া পাখিদের বাঁচানোর জন্য লড়াই চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আরও শুনুন: লোকসভা নির্বাচনে ফিরে এলেন কার্ল মার্ক্স, ফেরালেন সেই মোদিই
দিল্লির চাঁদনি চকের এই দাতব্য চিকিৎসালয় প্রায় ৯০ বছরের পুরনো। এর আগে ঘুড়ির সুতোয় আহত পাখিদের চিকিৎসা করায় বেশ চর্চা হয়েছিল এই হাসপাতাল নিয়ে। সম্প্রতি গরমে নাজেহাল হওয়া পাখিদেরও উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিল্লির বেশ কিছু অংশ রীতিমতো জনবহুল। সেখানে বাড়ি ঘর এতই বেশি যে গাছের ঠাণ্ডা ছাওয়া পাখিদেরকাছে বিরল বস্তু হয়ে উঠেছে। কাজেই হিটস্ট্রোকের শিকার হচ্ছে পাখিরা। দিল্লির হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, প্রায় রোজই ৫-১৫ টি অসুস্থ পাখিকে উদ্ধার করা হচ্ছে। প্রত্যেকেই হিটস্ট্রোকের শিকার। চিকিৎসা বলতে, হাওয়ার মধ্যে রাখা এবং জল দেওয়া। তাতে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে কিছু পাখি। মারাও যাচ্ছে অনেকই। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাখিদের দেহের তাপমাত্রা এমনিতে বেশি হয়। কিন্তু অত্যধিক গরম সেই বেশির মাত্রাও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রখর রোদে পাখির দেহে তাপমাত্রা ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়ে যাচ্ছে। যার দরুণ তাদের বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, অসুস্থ পাখির সংখ্যা আগামীদিনে আরও বাড়বে যদি গরম না কমে। তবে এই মুহূর্তে সমস্যা মেটানোর কোনও উপায়ও নেই। রাতারাতি এমন বড় গাছ বানিয়ে ফেলা অসম্ভব। পাখিদের জন্য আলাদাভাবে ঠাণ্ডা জায়গা তৈরি করাও বেশ কঠিন ব্যাপার। তাই এই নিয়ে বেশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।