বিয়ের আসরে চেয়ারে বসে একটা ইগল পাখি। কারোর ক্ষতি করছে না। কেউ তাকে বিরক্তও করছে না। এমনকী উড়ে যাওয়ার আগে কনেকে আশীর্বাদও করে গেল সেই ইগল। আসুন, শুনি সেই বিয়েবাড়ির গল্প।
ইগল পাখি পাছ ধরে সেই কারণে ইঁদুরছানা ভয়ে মরতে পারে! তবে, একটা গোটা বিয়েবাড়ির কেউই ইগলকে ভয় পেলেন না। আর পাবেনই বা কেন! তাঁদের বিশ্বাস, কনের প্রয়াত বাবাই ফিরে এসেছেন ইগল হয়ে। ইগল তাই এলেন, দেখলেন, কনেকে আশীর্বাদও করে ফিরে গেলেন।
সকলের এই বিশ্বাসের পিছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা তখন পাকা হয়েছে। বিয়ের দিনও ঠিক। এমন সময় দুর্ভাগ্যজনক এক ঘটনায় প্রয়াত হন মেয়ের বাবা। আর তার পরেই ঘটে প্রায় অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা। মেয়ের বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া শেষ করে সকলে যখন বাড়ি ফিরেছেন, দেখেন, তাঁদের ঘরের ছাদে এসে বসে আছে একটি ইগল পাখি। কিছুক্ষণ পর ইগল এসে বসে মেয়ের মায়ের কোলে। পাখিটি তৃষ্ণার্ত হয়েছে ভেবে, মহিলা তাকে জল, দুধ ইত্যাদি দেন। পাখিটি কারও কোনও ক্ষতি করেনি। শান্ত ভাবে বসে থাকে, যেন পরিবারেরই একজন সদস্য। পাখিটির সেই শান্ত ভাব দেখে বাড়ির সদস্যরাও তাকে কিছু বলেনি। বরং পরিবারের একজন হিসাবেই মেনে নেন।
আরও শুনুন: মাত্র ৩ মগ জলে স্নান! জল সঞ্চয়ের নমুনা বাতলে দিচ্ছেন মহিলা
এর মধ্যেই বিয়ের ব্যবস্থা পাকা হয়ে যায়। সাধারণত, বাড়ির কারও মৃত্যুর পর বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে সবকিছু যেহেতু আগে ঠিক হয়েই গিয়েছিল, তাই বিয়ে না পিছনোরই সিদ্ধান্ত নেয় দুই পরিবার। বিয়ের দিনও পাখিটি যেন কনের বাড়ির লোক। যখন সকলে মিলে বিয়ের জন্য যাচ্ছিলেন, তখন ইগল এক যুবকের কাঁধে চড়ে বসে। তাঁর কাঁধে কাঁধেই পৌঁছে যায় বিয়ের আসরে। সেখানে একটি চেয়ারে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে। বিয়ের অনুষ্ঠান চলতে থাকে। উপস্থিত সকলে জানিয়েছেন, সেই সময় পাখিটি একটুও অস্থির হয়ে ওঠেনি। ঠিক বয়স্ক মানুষ যেভাবে চেয়ারে বসে বিয়ের কাজকর্ম দেখেন, সেভাবেই ইগল বিয়ে দেখতে থাকে। মালাবদল হয়ে গেলে, হঠাৎ পাখিটি কনের মাথায় গিয়ে বসে। তারপর শান্তভাবে উড়ে অন্য কোথাও চলে যায়, আর ফিরে আসেনি।
আর এই ঘটনাই উসকে দিয়েছে এক বিশ্বাস। সকলে মনে করছেন, কনের বাবাই ফিরে এসেছিলেন ইগল হয়ে। কনের মা ও পরিবারের সসস্যরা বলছেন, যেভাবে ইগল পাখি গোটা বিয়ের অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল, তাতে এই বিশ্বাস না করে আর উপায়ই বা কী! আর ক্ষণিকের জন্য কনের মাথায় যে পাখিটি বসেছিল, তা মেয়ের বাবার আশীর্বাদ হয়েই ধরা দিয়েছে তাঁদের কাছে।
হয়তো এই বিশ্বাস একান্তই তাঁদের পরিবারের। মৃতেরা আর কখনও ফেরে না এ পৃথিবীতে। হয়তো তৃষ্ণার্ত হয়েই পাখিটি এসেছিল এই বাড়িতে। আর মানুষের থেকে সহৃদয় ব্যবহার পেয়ে পরিবারের সঙ্গেই থেকে গিয়েছিল কয়েকটা দিন। সব প্রাণীই হয়তো পোষ্য নয়। তবে, এই পৃথিবীতেই মানুষ আর অন্য প্রাণীর যে অন্যরকম সখ্যও গড়ে উঠতে পারে মধ্যপ্রদেশের এই ঘটনা যেন সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।