যে রাজনীতিতে সরগরম দেশ, তা তো আদতে মানুষের কল্যাণের জন্যই। মানুষের ভালোর জন্য প্রয়োজনে সব রাজনীতিকে যে দূরে সরিয়েও রাখা যায়, জনৈক চিকিৎসক প্রার্থীর কাজ যেন সেই কথাটিই বলল গোটা দেশকে।
সামনেই নির্বাচন পরীক্ষা। তার আগে প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছেন না প্রার্থীরা। তুঙ্গে তাই প্রচারপর্ব। নিজের কেন্দ্রে সেই প্রচারের কাজেই মগ্ন ছিলেন এক মহিলা চিকিৎসক। এমন সময় জনৈক রাজনৈতিক কর্মী এসে কানে কানে একটা কথা বলে গেলেন। জানিয়ে গেলেন, গুরুতর একটা সমস্যা বেধেছে। কী সমস্যা? না, রাজনৈতিক কোনও গোলমাল নয়। স্থানীয় হাসপাতালে একজন মহিলা প্রসবযন্ত্রণায় কাতর। তবে, তাঁর অপারেশনের জন্য যেরকম অভিজ্ঞ গাইনোকলজিস্টের দরকার, সেরকম কেউ ওই হাসপাতালে নেই। মহিলাকে তাই দূরের কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তবে, যা সময় লাগবে তাতে অন্য কোনও ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। এখন কী উপায়? অন্য কোনও উপায় না দেখেই প্রার্থীকে এই খবর দিয়েছিলেন ওই কর্মী।
আরও শুনুন: মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই শেষ ভোটদান! সবচেয়ে কম সময়ে নির্বাচনের নজির গড়ল কারা?
এই খবর প্রার্থীর কাছে পৌঁছনোর অবশ্য একটা বিশেষ কারণ আছে। তিনি শুধু রাজনৈতিক কর্মী তো নন; একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকও। তাঁর নিজের হাসপাতালও আছে। গাইনোকলজিস্ট হিসাবে তাঁর সুনামও যথেষ্ট। তাই এই সংকটমুহূর্তে তাঁকে খবরটি দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় আর ভেবে বের করতে পারেননি তাঁর সহকর্মী।
ভাগ্যিস দিয়েছিলেন! যেই না এ কথা শুনলেন তিনি, অমনি থামিয়ে দিলেন তাঁর প্রচারকাজ। ছুটলেন সেই স্থানীয় হাসপাতালে। গিয়ে দেখেন, প্রসবযন্ত্রণায় কাতর মহিলা বেশ সংকটে। সেই মুহূর্তে নিজের কর্তব্য স্থির করতে আর দু-মুহূর্ত ভাবেননি চিকিৎসক প্রার্থী। দলীয় রাজনীতির সব কাজকর্ম সরিয়ে রেখে চিকিৎসকের ধর্ম পালন করতে শুরু করেন। তাঁর মতো অভিজ্ঞ গাইনোকলজিস্টকে পেয়ে ভরসা পান স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। শুরু হয় অপারেশন। সহজ ছিল না সেই পর্ব। তবে, যখন শেষ হল, তখন সকলের মুখেই ফুটে উঠেছে হাসি। অপারেশন জটিল হলেও, তা সফল হয়েছে। সুস্থ আছেন মা ও শিশু দুজনেই।
আরও শুনুন: মেয়ে রাজনীতিতে নামবে! সম্পত্তি বেচে খরচ জোগালেন বাবা
তেলুগু দেশম পার্টির প্রার্থী গোত্তিপত্তি লক্ষ্মীর এই কাজ সারা দেশের কাছেই মানবিকতা বার্তা হয়ে ধরা দিয়েছে। তিনি নিজেও বলছেন, একজন চিকিৎসক হিসাবে মানুষের জীবন রক্ষা করাই তাঁর প্রথম এবং প্রধান কাজ। আর তাই কোনওকিছুর জন্যই তিনি সেই কাজকে অবহেলা করতে পারেন না। এই অপারেশন করতে পেরে তিনি নিজেই তৃপ্ত। গাইনোকলজিস্ট হিসাবে মাসে তাঁকে গড়ে প্রায় একশো অপারেশন করতে হয়। এ জিনিস তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়। তবে, যে মহিলার সি-সেকশন হয়েছে, তাঁর ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছিল। ফলত অপারেশন বেশ জটিল হয়ে পড়েছিল। তা যে সফল ভাবে করা সম্ভব হয়েছে, মহিলার প্রাণরক্ষা হয়েছে, তাতে চিকিৎসক হিসাবে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
ভোটের এই মরশুমে যখন দলে দলে মানুষ ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে, তখন তাঁর এই কাজ যেন দৃষ্টান্ত হয়েই দেখা দিয়েছে। যে রাজনীতিতে সরগরম দেশ, তা তো আদতে মানুষের কল্যাণের জন্যই। মানুষের ভালোর জন্য প্রয়োজনে সব রাজনীতিকে যে দূরে সরিয়েও রাখা যায়, চিকিৎসক প্রার্থীর কাজ যেন সেই কথাটিই বলল গোটা দেশকে।