চলতি আইপিএল-এ পরপর ম্যাচে রিয়ানের ব্যাট কথা বলছে। সেই ফর্মেরই ঝলক দেখছে আইপিএল, যার গোড়াপত্তন ঘরোয়া ক্রিকেটে। আর তাই তরুণ ক্রিকেটারকে পৌঁছে দিচ্ছে সাফল্যের সোপানে।
রান ব্যাটে এলে, প্রকৃত সমালোচনা উড়ে যায়। যে কোনও ব্যাটারের থেকে এর থেকে বড় সত্যি আর কিছু হয় না। এই দেশ যাঁকে ক্রিকেট-ঈশ্বরের তকমা দিয়ে থাকে, সেই শচীন তেন্ডুলকরকেও এমন সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকী সংবাদমাধ্যমে ‘এন্ডুলকর’ শিরোনাম পর্যন্ত হয়েছিল। তবে, পথের শেষ কোথায়, তখনও জনা ছিল না। যখন শেষ করলেন, তখন নতুন করে লেখা হল ক্রিকেটের ইতিহাস। তো আসল কথা হল ওই রানে ফেরা। এই রিয়ান পরাগের কথাই ধরা যাক না কেন! ক-বছর পারফরম্যান্স তেমন ভালো যাচ্ছিল না তাঁর। আর সেই কারণে কী না কী শুনেছেন তিনি। চলতি আইপিএল-এ একেবারে উলটপুরাণ। পরপর ম্যাচে রিয়ানের ব্যাট কথা বলছে। অতএব সমালোচনা গেছে উড়ে। আপাতত প্রশংসার বন্যা।
আরও শুনুন:
রোহিত-বিদায়ে উল্লাসের জেরে মার, মৃত্যু ব্যক্তির… ক্রিকেট কি অসহিষ্ণু করে তুলছে ফ্যানদের?
তবে, রিয়ানের এই সাফল্যের ভিতর একখানা গুরুত্বপূর্ণ কথা যেন গা-ঢাকা দিয়েই বসে আছে। ব্যাটারের অফ ফর্ম যায়, ফর্ম ফিরেও আসে। তবে, সেটা কোনও আকাশকুসুম ব্যাপার নয়। তা একটি পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। আর সেখানেই যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হয়ে আছে ঘরোয়া ক্রিকেট। রিয়ানকে চার নম্বরে নামিয়ে রাজস্থান রয়ালস এখন যে ফসল ঘরে তুলছে, তার জন্য রিয়ানকে তৈরি করেছে ঘরোয়া ক্রিকেটই। রিয়ান বলছেন, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে যে পরিস্থিতিতে তিনি ব্যাট হাতে নেমেছিলেন, সেই পরিস্থিতি তাঁর কাছে একেবারেই অচেনা নয়। কেননা, কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি এমন পরিস্থিতিতেই খেলতে নামেন। ফলে, বাটলার ফিরে গেছেন, অশ্বিনও নেই, এই অবস্থায় ব্যাট হাতে তাঁর কী কর্তব্য, তা তাঁর অজানা নয়। উল্লেখ করার মতো বিষয় হল, সদ্য শেষ হওয়া সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে দারুণ খেলেছেন পরাগ। ঝুলিতে ৫১০ রান, গড় ৮৫, স্ট্রাইক রেট ১৮২.৭৯। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর ফর্মে ফেরায় বড় ভূমিকা পালন করেছে ঘরোয়া ক্রিকেট।
আর এখানেই ফিরে এসেছে ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্ব। অথচ এই কিছুদিন আগেই বর্তমান প্রজন্মের তরুণ ক্রিকেটাররা তেমন করে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে চাননি। যে মনোভাব অবাক করেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটারকে। ঘরোয়া ক্রিকেটই যে একজন ক্রিকেটারকে লালন-পালন করে বড় মঞ্চের জন্য তৈরি করে দেয়, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। অথচ আইপিএল-এর মতো জৌলুস তার নেই। অর্থের প্রাচুর্যও ততটা নয়। তা ছাড়া, আইপিএল-এ ভালো পারফর্ম করলে যে সহজে জাতীয় দলের জার্সি পাওয়া যায়, সেটাই যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছে। ফলত, তরুণদের পাখির চোখ আইপিএল। আবার আইপিএল থেকে জাতীয় দলে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। সেই প্রেক্ষিতেই রিয়ানের এই মন্তব্য যেন বাস্তব সত্যিটার দিকেই আলো ফেলেছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, ঘরোয়া ক্রিকেটের আজও কোনও শাখা নেই, বিকল্পও নেই।
আরও শুনুন:
চোটের দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে রাজকীয় কামব্যাক, জীবনের লড়াইয়ের মন্ত্রই শেখাচ্ছেন ধোনি-পন্থ
রিয়ান বলেছেন, যখন তিনি বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন তখন প্রাণপণে খোঁজার চেষ্টা করছিলেন যে গলদটা ঠিক কোথায়। বেশ খানিক ভাবনাচিন্তা করে বুঝলেন, খামতি আছে অনুশীলনে। সেই কাজটাই শুরু করেন। যার ফল মেলে ঘরোয়া ক্রিকেটে। এখন সেই ফর্মেরই ঝলক দেখছে আইপিএল; অতএব যে ঘরোয়া ক্রিকেট আজকাল ব্রাত্যজনের রুদ্ধকথা হয়ে আছে, তাই-ই তো তরুণ ক্রিকেটারকে পৌঁছে দিচ্ছে সাফল্যের সোপানে। এ কথা ভুলে গেলে ক্ষতি আখেরে দেশের ক্রিকেটেরই। আজ যদি আইপিএল ‘পরাগ’রেণু জেগে ওঠে, তবে তা আপনি-আপনি নয়। নেপথ্যে থেকে গিয়েছে চিরকালীন সেই ঘরোয়া ক্রিকেটের আঁতুড়ঘরই।