পৃথিবী জুড়ে উন্নয়নের জোয়ার। কিন্তু এখনও, পেট ভরার মতো খাবারটুকু মেলে না কোটি কোটি মানুষের। দারিদ্র্যের থাবা তো আছেই। তা ছাড়াও, বিশ্বের একেক প্রান্তে যুদ্ধের হুংকার আরও আরও মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে। অথচ, একদিকে এই বিপুল অনাহারের শূন্যতা, আরেকদিকে খাবারের বিপুল অপচয়, এমনই ছবি দেখাচ্ছে সমীক্ষা। শুনে নেওয়া যাক।
“কেউ যদি বেশি খাও/ খাবার হিসেব নাও/ কেননা অনেক লোক ভালো করে খায় না”- এ কথা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন কেউ। যেখানে অনেক লোকের কাছে ভালো করে খাওয়া মানেই বিলাসিতা, সেখানে খাবার অপচয় করার গুরুত্ব ঠিক কতখানি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ সেটাই নিয়মিত ঘটে চলেছে বিশ্ব জুড়ে। উঁহু, স্রেফ আন্দাজে ঢিল ছোড়া নয়। রীতিমতো সমীক্ষা করেই এই তথ্য হাজির করেছে রাষ্ট্রসংঘ। চলতি বছরে ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের রিপোর্ট জানাচ্ছে, কেবল ২০২২ সালেই বিশ্বজুড়ে অপচয় করা খাবারের মোট পরিমাণ ছিল ১.০৫ টন বিলিয়ন, অর্থাৎ ১০৫০ কোটি টন। যেখানে গোটা বিশ্বেই জিরো ফুড শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে, সেখানে এত বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হওয়ার তথ্য লজ্জা বাড়ায় বই কমায় না। ‘জিরো ফুড’ শিশু, অর্থাৎ যে সমস্ত দুধের শিশুর পাকস্থলী শূন্য। গোটা বিশ্বে এমন শিশুর সংখ্যা অন্তত ১৫ কোটি, বলছেন গবেষকেরা। হ্যাঁ, একজন মানুষের অনাহারে থাকাও কাম্য নয়। কিন্তু ছোট শিশুদের খিদের আগুনে পুড়তে হচ্ছে, যার নিজে নিজে খাবার জোগাড়ের ক্ষমতা নেই, এ ঘটনার সামনে যেন মাথা হেঁট হয়ে যায় আরও। আর সেই লজ্জার মধ্যে জ্বলন্ত প্রশ্নের মতো সামনে এসে পড়ে এই সংখ্যাটা। ১০৫০ কোটি টন।
আরও শুনুন:
মুখ ঢেকে যায় নির্বাচনে! তবে ভোটের রাজনীতি কি পারবে প্লাস্টিকমুক্ত হতে?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, ৯২টি দেশে মোট যে সংখ্যক জিরো ফুড শিশু আছে, তার প্রায় অর্ধেক আছে ভারতেই। ২৪ ঘণ্টায় একফোঁটা দুধ বা খাবার পায় না এরকম ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সি বাচ্চার সংখ্যা কেবল এই দেশেই ৬৭ লক্ষ। আর শুধু সে দেশেই বার্ষিক যে পরিমাণ খাদ্য উৎপন্ন হয়, তার প্রায় ৪০ শতাংশ কেবল নষ্টই হয়। অদক্ষ সাপ্লাই চেনের কারণে উপভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া যেমন রয়েছে, তেমনই, রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টই জানিয়েছিল, দেশের শহরাঞ্চলে বাড়িগুলি থেকে এক বছরে গড়ে প্রায় ৫০ কেজি খাবার না খেয়ে ফেলে দেওয়া হয়। বিশ্বের নিরিখে এই গড় গিয়ে দাঁড়ায় মোটামুটি ৭৯ কেজিতে। সব মিলিয়ে, উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছতে পারে এমন খাবারের যা মোট পরিমাণ, তার প্রায় এক-পঞ্চমাংশই নষ্ট হয় বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। এই অপচয়ের আর্থিক মূল্য ভারতীয় টাকায় এক লাখ কোটি টাকা।
আরও শুনুন:
পতি-পত্নীর ভিন্ন রাজনৈতিক মত থাকতে পারে না? প্রশ্ন ছিল খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরই
তবে এই বিষয়ে সকলেই মোটামুটি একমত, যে, এই সমস্যা মূলত আধুনিক সময় এবং সমাজের সমস্যা। যেখানে ‘ওয়েস্ট নট, ওয়ান্ট নট’, অর্থাৎ অপচয় না করলেই চাহিদা আসবে না, এই নীতির জায়গা থাকছে না। সেই কারণেই, পৃথিবীর এক বিরাট অংশের কাছে প্রয়োজনীয় খাবারটুকু না পৌঁছানো সত্ত্বেও কমছে না অপচয়ের পরিমাণ।