মহামারীর আকার নিয়েছে মানসিক অস্থিরতার সমস্যা। সবথেকে বেশি প্রভাবিত তরুণ প্রজন্ম। এর জন্য একাধিক বিষয়কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই অস্থিরতা কমাতে সহায় হতে পারে ধর্ম। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত অনেকটাই কমাতে পারে মানসিক অস্থিরতা, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। এ বিষয়ে আর কী জানাচ্ছেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবলা খেলা ভালো। স্বামী বিবেকান্দরের এই মন্তব্য ঘিরে কিছুদিন আগে বিতর্কের মেঘ ঘনিয়েছিল। স্বামীজীর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে তোপের মুখে পড়েছিলেন এক ধর্মগুরু। সম্প্রতি এক সমীক্ষা ফের সেই বিতর্ক উসকে দিল বলা যায়। সরাসরি স্বামীজীর মন্তব্যের বিরোধিতা না হলেও, ধর্মের জোরেই মানসিক অস্থিরতা কমানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও শুনুন: ‘গোঁড়া মতবাদ সব গোল্লায় যাউক’, সংকীর্ণতা পেরিয়ে সর্বজনীন ধর্মের স্বপ্ন দেখেছিলেন বিবেকানন্দ
অতিরিক্ত কাজের চাপ। অবসরের একমাত্র সঙ্গী মোবাইল। বাড়তি সময় পেলে বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাবে গিয়ে পার্টি। কিন্তু এসব করেও মনের অস্থিরতা কমছে না। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক হারে বাড়ছে এই সমস্যা। চাকুরিজীবী তো বটেই, স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যেও এই সমস্যা মাথা চাড়া দিচ্ছে। শুধু মানসিক অস্থিরতা নয়, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অন্যান্য রোগও। মনসংযোগের অভাব কিংবা চোখের সমস্যা। ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে ভুগছে অনেকেই। এই সমস্যা মেটাতেই ধর্মের পথে চলার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কোনও ধর্মগুরু বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কেউ নয়, এমনটা জানাচ্ছে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাই। আসলে, উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা মানসিক অস্থিরতার এই সমস্যা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে ভারতেও। তাই এ দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই বিশেষ উপায়ের কথা বলেছেন তাঁরা। বিশষজ্ঞদের মতে, ক্লাবে গিয়ে পার্টি করা, খেলাধুলা করা, কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করার যে উপকার তা কখনই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সমান নয়। ধর্মের পথে চললেই মানসিক অস্থিরতা কমবে। বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে মূলত কোভিড কালের প্রসঙ্গ টেনেছেন। এ সময় ঘরে বসে অনেকেই ধর্ম আলোচনা কিংবা ওই ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বেশ উপকার পেয়েছেন বলেই দাবি। কিন্তু লকডাউন মেটার পর সেই ছবি ফের বদলেছে। তাই নতুন করে ধর্মের পথে ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। উন্মাদনা বা গোঁড়ামি নয়। মেডিটেশন করা কিংবা এই ধরনের অভ্যাস গড়তে সাহায্য করবে নিয়মিত ধর্ম প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অভ্যাস। যার দরুন মানসিক অস্থিরতার মতো সমস্যা কমতে বাধ্য।
আরও শুনুন: সব কামনা পূর্ণ করে কল্পতরু বৃক্ষ, কীভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে মিলে গেল পুরাণের এই মত ?
তবে এক্ষেত্রে কয়েকটা বিশেষ দিক উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমেই, দেশের বিভিন্ন মন্দিরে যে নিয়মের কড়াকড়ি থাকে তা কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ্রা। মূলত হিন্দু মন্দিরে পোশাক বিধি থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ম মানতে হয়। যার জন্য অনেক সময় তরুণ প্রজন্ম মন্দিরে যাওয়া এড়িয়ে চলে। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নতুন কিছু ব্যবস্থা করুক তরুণ তুর্কিদের আকর্ষনের জন্য। তা যুক্তিতর্ক সভা কিংবা অন্য কিছু হতে পারে। ধর্মীয় স্থানেও যে যাওয়া উচিৎ, সেই ধারণা সকলের মধ্যে তৈরি হবে এইভাবেই। বিশেষজ্ঞরা চাইছেন, বাড়ি আর চাকরিস্থল ছাড়াও ধর্মের জন্য কিছুটা সময় থাকুক সকলের। সেখানে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের কথা বলা হয়নি। সব ধর্মের মানুষই নিজের মতো করে নিজেকে সময় দিক। তাহলে কিছুটা হলেও কমবে মানসিক অস্থিরতার মতো সমস্যা।