মুঘল সম্রাটের সঙ্গে বিয়ে। রাতারাতি ধর্ম বদল হয় হিন্দু রাজকন্যার। যদিও এমন ঘটনার উদাহরণ আরও রয়েছে। তবে এই ঘটনা ব্যতিক্রম। কারণ এই মুঘল রানি স্বামীর মৃত্যুর পর ফের হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারতে মুঘল শাসনের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার নয়। দীর্ঘ ২০০ বছরের রাজত্বকালে দেশের বহু পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন মুঘল সম্রাটরা। যার নিদর্শন এখনও দেশের ইতি উতি ছড়িয়ে। সেই মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ব্যতিক্রমের নাম ইন্দিরা কানওয়ার।
আরও শুনুন: আঁচল সরলেই ‘মন্দ মেয়ে’র উপাখ্যান! যেন প্রাচীন মুদ্রাদোষ
সে যুগে সাম্রাজ্য বিস্তারের অন্যতম উপায় ছিল বিয়ে। অর্থাৎ কোনও রাজ্যের রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে হলেই, সেই রাজ্যের বেশ কিছুটা অংশ যৌতুক হিসেবে মিলবে। এই ‘লোভে’ অনেক রাজাই বিয়ে করতে দূর দূরান্ত পাড়ি জমাতেন। একই রেওয়াএ গা ভাসাতেন মুঘল সম্রাটরাও। হিন্দু রাজার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে সেই রাজ্যে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতেন তৎকালীন সম্রাটরা। এক্ষেত্রে যুদ্ধের কোনও দরকার পড়ত না। রাজাও মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতেন। তবে সবার গল্প একরকম হত না। আর সেক্ষেত্রে মুঘলরাও অনেককাংশে দায়ী।
আরও শুনুন: নিরামিষ-খোঁচায় লাগাতার বিদ্ধ আমিষ, তবুও মাছের কদর বাড়ছে দেশে?
সম্রাট আকবর থেকে শুরু করে বহু মুঘল সম্রাট হিন্দু রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নববধূকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হত। এমনই এক মুঘল সম্রাট ফারুকসিয়ার বিয়ে করেছিলেন মাড়য়াড় অঞ্চলের রাজা অজিত সিং-এর কন্যা ইন্দিরাকে। অবশ্যই এ বিয়ে হয়েছিল রাজনৈতিক স্বার্থে। সেসময় খোদ রাজাই দায়িত্ব নিয়ে মেয়ের বিয়ে দেন মুঘল সম্রাটের সঙ্গে। বিয়ের পর ধর্ম পরিবর্তনের নিয়ম মানতে হয় ইন্দিরাকেও। প্রথম দিকে সবকিছু ঠিক ছিল বলা যায়। সমস্যা শুরু হয় কয়েক মাস পর থেকে। যে কারণে এই বিয়ে, সেই রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়েই রাজা অজিত সিং-এর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন ফারুকসিয়র। ক্রমে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। মুঘল সম্রাট হলেও, মারওয়াড় অঞ্চলের রাজাকে ঠেকানোর মতো ক্ষমতা ফারুকসিয়রের ছিল না। শোনা যায়, রাজার হাতে বন্দীও হতে হয় তাঁকে। এরপর ১৭১৯ সালে মৃত্যু হয় মুঘল সম্রাটের। কারণ নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। একইসঙ্গে সম্রাটের মৃত্যুর পর ইন্দিরার কী হয় সেই নিয়েও একাধিক মন্তব্য সামনে আসে। তার মধ্যে সবথেকে প্রচলিত তাঁর ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়টি। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বিয়ের পর যে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন ইন্দিরা, স্বামীর মৃত্যুর পর পুনরায় সেই ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। শোনা যায়, এরপর নতুন করে জীবন শুরু করেন ইন্দিরা। তবে ঠিক কীভাবে সেই হদিশ মেলে না। ইতিহাসবিদদের মতে, মুঘল ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। একবার ধর্ম পরিবর্তন করলে সেই ধর্মেই চিরকাল কাটিয়ে দিতেন রানিরা। কেউ কেউ অবশ্য ধর্ম বদলই করতেন না। সে প্রসঙ্গে আলাদা। তবে একই জীবনে দু-বার ধর্ম পরিবর্তনের ঘটনা বিরল এবং অবশ্যই ব্যতিক্রমী বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।