জয়নগরের মোয়া থেকে মসলিন শাড়ি। বাংলার জিআই স্বীকৃতির ঝুলি নেহাতই খালি নয়। তবে পাশের রাজ্য বিহারও কম যায় না। শাড়ি থেকে শুরু করে আম, জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে সে রাজ্যের একাধিক জিনিসও। তালিকায় কী কী রয়েছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একসময় বাংলা-বিহার-ওড়িশার নাম একসঙ্গে বলা হত। কাজেই এই তিন রাজ্যের ভৌগোলিক সংস্কৃতিতে মিল থাকবে একথা বলাই যায়। বিহারের জিআই স্বীকৃতি পাওয়া জিনিসগুলোতেও সেই ছাপ স্পষ্ট হয়েছে। বাংলার মতো সেখানকার এক বিশেষ শাড়ি, মিষ্টি এবং আম জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।
আরও শুনুন: রং কি জানে, তাদের গায়ে কত অর্থের বোঝা চাপিয়েছে মানুষ?
এই মুহূর্তে বাংলায় জিআই স্বীকৃতি রয়েছে ২৮টি জিনিসের। রসগোল্লা, মোয়া, হিমসাগর আম, পটচিত্র বহু আগে থেকেই জিআই স্বীকৃত। সদ্য তালিকায় যোগ হয়েছে বাংলার মসলিন শাড়ি। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে জিআই স্বীকৃতির ঝুলি ভরেছে বিহার। এখনও পর্যন্ত সেখানকার মোট ১৩ টি জিনিসে রয়েছে এই স্বীকৃতি। আর সেই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে বিশেষ এক পানের নাম। যাকে বিহারে মাগাহি পান বলা হয়। দেখতে সাধারণ পানের মতোই। তবে এর বিশেষত্ব দেখায় নয়, স্বাদে। শোনা যায়, এই পান পাটা অন্যান্য সাধারণ পানের তুলনায় বেশি মিষ্টি। সেইসঙ্গে বেশ নরম ধরনের। বলা হয় মুখে দিলেই মিশে যাবে এই পান। বিহারের নালন্দা, আওরঙ্গাবাদ, নাবাডা এবং গোয়া জেলায় এই পানের চাষ হয়। এর দামও সাধারণ পানের তুলনায় বেশি। ২০১৮ সালে ভারত সরকারের তরফে এই পান পাতাকে জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর বলতে হয় ভাগলপুরি আমের কথা। বাংলা সহ গোটা দেশেই বিহারের এই বিশেষ আম রপ্তানি করা হয়। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এই আমও ২০১৮ সালে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। চাষ হয় মূলত ভাগলপুর জেলায়। সেখান থেকেই এমন নাম। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি এই আমের ভক্ত সকলেই। তাই প্রতিবছর এই আম রাজধানী বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয়। ফলের তালিকা শুধুই আমেই শেষ নয়। বিহারে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে লিচুও। এর নাম শাহি লিচু। এর বিশেষত্বও স্বাদে। সেইসঙ্গে এই লিচুর ভিতরে বীজও ছোট। কাজেই একটা দুটো খেলেও বেশ লাভ দেয়। সেইকারণে আমের মতোই এই লিচুর চাহিদা থাকে গোটা দেশে। সে রাজ্যের বেগুসারাই, বৈশালী, সামাস্তিপুর এবং ইস্ট চাম্পারণ অঞ্চলে এই ফলের চাষ হয়। এছাড়া জিআই স্বীকৃতি রয়েছে কাতরানি চালের। এও স্বাদে গন্ধে অন্যান্য চালের তুলনায় বেশ আলাদা। একইসঙ্গে জিআই স্বীকৃতি রয়েছে মার্চা নামে এক চালেরও। তালিকায় রয়েছে সিলাও কা খাজা নামে এই মিষ্টিও। মূলত নালন্দা জেলায় এই মিষ্টি তৈরি হয়। বিহারের প্রায় সর্বত্রই এই মিষ্টি পাওয়া যায়। এছাড়া তিলকুট নামে এক ধরনের মিষ্টিও জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলায় যাকে তিলেখাজা বলা হয়, তিলকুট খানিকটা সেই গোত্রেরই মিষ্টি।
আরও শুনুন: যে বসন্ত আসার কথা, সচরাচর আর আসে না
এতো গেল খাবারের কথা। হস্তশিল্পের দিকেও বিহারের সুনাম রয়েছে গোটা বিশ্বে। যার মূলে মধুবনি শিল্প। কাগজে কিংবা শাড়িতে অদ্ভুত সুন্দর কারুকাজ করেন শিল্পীরা। সেখানে মূলত পৌরাণিক কাহিনি ফুটয়ে তোলা হয়। এছাড়া পশুপাখি গাছপালা এসব নকশা তো রয়েছেই। এই মধুবনি পেইন্টিং-ও জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। একইসঙ্গে জিআই ট্যাগ রয়েছে বিহারের সুজিনি এমব্রয়ডারির। এখানে তুলির বদলে সুতোর টানে ফুটিয়ে তোলা হয় বিভিন গল্প। এক্ষেত্রে শাড়ি কিংবা অন্য কোনও কাপড়ের উপরই কারুকাজ করা হয়। জিআই স্বীকৃতি রয়েছে বিহারের এক বিশেষ সিল্কেরও। যার নাম ভাগলপুরি সিল্ক। মহিলা মহলে বেশ জনপ্রিয় এই শাড়ি। নামজাদা অভিনেত্রীরাও এই শাড়ি পরেন। এছাড়া হস্তশিল্প হিসেবে জিআই স্বীকৃতি রয়েছে সিক্কি ঘাসের তৈরি জিনিসপত্রের। এও বিহারের একেবারে নিজস্ব জিনিস। এক বিশেষ ঘাস যা শুকিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয়। ঝুড়ি, মাদুর, টুপি সবই তৈরি করা যেতে পারে এই ঘাস দিয়ে। সবমিলিয়ে বিহারের এই বিশেষ কিছু জিনিস গোটা দেশেই জনপ্রিয়। এবং এই তালিকা আগামীদিনে আরও বাড়তে পারে বলেই ধারণা সে রাজ্যের মানুষজনের।