মগজে কারফিউ নয়, মাথার মধ্যে থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে আস্ত মগজটাই। তাও আবার খোদ আইনস্টাইনের। এমন সাড়া জাগানো চুরিটি করেছিলেন কে? শুনে নেওয়া যাক সেই গল্প।
সুকুমার রায় বলেছিলেন, ‘আয় তোর মুন্ডুটা দেখি, আয় দেখি ফুটোস্কোপ দিয়ে’! কিন্তু সে তো ছিল মগজের ঘিয়ে কতটা ভেজাল আছে তা দেখে নেওয়ার চেষ্টা। এখানে অবশ্য গল্পটা উলটো। যে মগজের প্রতিভায় গোটা বিশ্ব বারবার চমকে গিয়েছে, সেই মগজের মধ্যে কী আছে তাই খুঁজে দেখতে চেয়েছিলেন একজন। আর সেই কারণেই চুরি গিয়েছিল খোদ আলবার্ট আইনস্টাইনের মগজ।
সেই যে সুকুমারই লিখেছিলেন গোঁফ চুরির কথা, প্রায় তেমনই আশ্চর্য ব্যাপার, তাই না? কিন্তু আশ্চর্য লাগলেও এ গল্প নয়, নিছক সত্যি কথাই। সত্যি সত্যিই চুরি করা হয়েছিল আইনস্টাইনের মগজ। চার দশক ধরে তা রয়েও গিয়েছিল সেই ব্যক্তির কাছেই। কিন্তু কীভাবে হয়েছিল সেই চুরি? আর এই ঘটনার নেপথ্যেই বা হাত ছিল কার? তাহলে খুলেই বলা যাক।
বিজ্ঞানের দুনিয়ায় সর্বকালের সেরা প্রতিভা বলা হয় তাঁকেই। ১৯৫৫ সালে ৭৬ বছর বয়সে যখন মারা যাচ্ছেন আইনস্টাইন, তখনও গোটা বিশ্বের কাছে তিনি এক বিস্ময়। তাঁর একেকটি তত্ত্ব, একেকটি ভাবনা বিদ্যুৎচমকের মতোই চমকে দিয়েছে সকলকে। কেমন করে কোনও মানুষ এহেন প্রতিভার অধিকারী হতে পারেন, উসকে উঠেছে সেই প্রশ্নও। বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পরে সেই রহস্যের সমাধান করতেই উঠেপড়ে লেগেছিলেন ডাঃ টমাস স্টলজ হার্ভে। আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়েছিল যে প্রিন্সটন হাসপাতালে, সেখানকারই চিফ প্যাথোলজিস্ট ছিলেন তিনি। আইনস্টাইনের দেহের অটোপ্সি করার সুযোগেই তাঁর ব্রেন সরিয়ে ফেলেন ওই চিকিৎসক। এর জন্য বিজ্ঞানীর পরিবারের থেকে প্রথাগত সম্মতিও নেননি তিনি। আইনস্টাইনের ব্রেনকে ২৪০টি টুকরো করে তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালান তিনি। বিবিসি সূত্রে জানা যায়, তা থেকে কোশ সংগ্রহ করে ২০০টি করে স্লাইডের ১২টি সেট তিনি বানিয়েছিলেন।
যদিও পরে আইনস্টাইনের বড় ছেলে হান্সকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন এই ডাক্তার। বছর ২৩ বাদে এক সাংবাদিকের অনুরোধে তিনি সেই কুলারটি দেখিয়েছিলেন, যেখানে রাখা ছিল আইনস্টাইনের ব্রেন। যদিও এই মগজ পরীক্ষা করে তিনি যেসব দাবি করেছিলেন, তা উড়িয়েই দেয় বিজ্ঞানীমহল। আর আইনস্টাইনের ব্রেন ফিরে যায় তাঁর পরিবারের কাছে। এরপর ফিলাডেলফিয়ার মাটার মেডিক্যাল মিউজিয়ামে বিজ্ঞানীর ব্রেন দান করে দেন তাঁর আত্মীয়রা। কোনও একজন মানুষের সম্পত্তি হয়ে নয়, সকলের দেখার নাগালেই রয়েছে আইনস্টাইনের ব্রেন।