ভোটের হাওয়ায় ঝড় তোলে গরম স্লোগান। বিরোধীদের কচুকাটা করতে চেয়ে কথার তরোয়ালে শান দেন নেতানেত্রীরা। সেইসব হাতেগরম বক্তব্য ফিরে ফিরে আসে জনগণের চর্চাতেও। যেমন এ দেশের রাজনীতিতে বারে বারেই ঘুরেফিরে এসেছে সাপ প্রসঙ্গ।
“আমি বিষাক্ত। যে কোনও সময় চন্দ্রবোড়াও হয়ে যেতে পারি।” এ কথা বলছেন সদ্য রাজনীতির দুনিয়ায় পা রাখা এক নেতা। যিনি একসময় বিচারপতির চেয়ারে বসেও নজর কাড়তেন গরম গরম বক্তব্যে, সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতির ময়দানে নেমেও নরমগরম কথার তোপ দাগবেন, এ হয়তো বিস্ময়ের নয়। তবে শব্দপ্রয়োগটি চমকে দেওয়ার মতোই। কোনও স্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। রাজনৈতিক যুক্তি দিয়ে বিরোধী পক্ষের দিকে আক্রমণ শানানোও নয়। একটি উপমা ব্যবহার করেই নাটকীয় মন্তব্য করেছেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিজিৎ। সাপ, অর্থাৎ যে প্রাণীটিকে প্রথম দর্শনেই আমরা বিষাক্ত বলে ভয় পাই, তার উপমা টেনেই কার্যত ভয় ধরানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পদ্ম-নেতা।
আরও শুনুন:
ভোটের বাজারে জোর ছুটছে বন্ড-এ-ভারত
প্রাক্তন বিচারপতির এহেন শব্দপ্রয়োগ নজর কেড়েছে বটে। তবে এই উপমা কি তাঁর মৌলিক প্রয়োগ? উঁহু, তেমনটা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করতে পারবেন, এ দেশের রাজনীতিতে সাপের আনাগোনা নতুন নয়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে।
এমনিতে বাংলার বাগধারায় দু-মুখো সাপ কথাটি বহুল প্রচলিত। রাজনীতির জগতে যেভাবে তলে তলে নেতারা দল বদলান, কিংবা দলকে সাবোটাজ করেন, বা আমজনতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির তোয়াক্কা করেন না, তাতে অনেকেই তাঁদের উদ্দেশে এ কথা ছুড়ে দেন। আবার এই দলবদলের প্রসঙ্গেই ‘সাপের মুখে চুমু খাওয়া, ব্যাঙের মুখে চুমু খাওয়া’-র প্রবাদও ঘুরেফিরে আসে। সত্যি বলতে, ভোটবাক্স তো একরকমের সাপলুডো খেলাই। সাপের মুখে পড়ে যাতে সবার নিচে নেমে যেতে না হয়, তার জন্যই তাই এত তোড়জোড় নেতাদের। আবার সেই আয়োজনেই জুড়ে আছে বিরোধীকে সাপের মুখে ঠেলার তৎপরতা। আর বিরোধীদের তোপ দাগতে গিয়েই অনেকসময় সাপ-উপমা টেনেছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতা।
আরও শুনুন:
গরিবকে ঘর দেওয়ার তোড়জোড়, অথচ এক বছরেই দেশে উদ্বাস্তু অন্তত ৫ লক্ষ মানুষ
সিনেমার রক্ত-গরম-করা সংলাপকে ভোট ময়দানে টেনে মিঠুন চক্রবর্তী নিজেকে কখনও কোবরা বলেন, কখনও জাত গোখরো। তার উত্তরে তারকাকে ‘জলঢোঁড়া’ বলে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের কুণাল ঘোষ। কর্ণাটকের হেভিওয়েট নির্বাচনের আগে আবার খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিষধর সাপের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেই কটাক্ষ মেনে নিয়েই মোদির পালটা ছিল, শিবের গলায় সাপ জড়ানো থাকে। সুতরাং কর্ণাটক ও তার বাসিন্দাদের শিব মনে করে নিজেকে সাপ ভাবতেও তাঁর আপত্তি নেই। মোদিকে সাপ বলে বিঁধতে ছাড়েননি ডিএমকে নেতা এ রাজা-ও। এরও বহু আগে মুলায়ম সিং যাদবকে ‘ঘাসে লুকোনো সবুজ সাপ’ বলে কটাক্ষ ছুড়েছিলেন সপা নেতা অমর সিং।
এমনিতে মানুষের রাজনীতিতে না-মানুষের যোগ থাকার তো কথা নয়। কিন্তু পরস্পরকে টক্কর দিতে গিয়েই সেইসব প্রাণীকেও ভোট ময়দানে টেনে আনেন নেতারা। যেমনভাবে এখানে ঘন ঘনই সাপের দেখা মিলেছে। আর তার জেরে রাজনীতিই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে এক অভিনব সর্পমঙ্গল কাব্য।