ভারতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের জয়গান। এই ‘অপরাধে’ গ্রেপ্তার চার যুবক। তবে এমনটা কী সত্যি শাস্তি যোগ্য অপরাধ? কী জানাচ্ছে দেশের শীর্ষ আদালত? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারত বনাম পাকিস্তান। খবরের কাগজে প্রায়শই এই শিরোনাম দেখা যায়। ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা সিনেমা, ভারত-পাক দ্বৈরথ চিরন্তন। খেলার সময় দু-পক্ষের তরফেই ভেসে আসে নানা স্লোগান। ভারতের জয়ধ্বনির মতোই পাকিস্তানের হয়েও গলা ফাটান সে দেশের সমর্থকরা। কিন্তু ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি পাকিস্তানের নামে জয়ধ্বনি দেন? শোরগোল পড়ে যায় সহজেই। যিনি এমনটা করলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত হতে হয়। কিন্তু সত্যিই কী এই কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ? আইন কিন্তু তেমনটা বলছে না।
আরও শুনুন: ভোটের বাজারে জোর ছুটছে বন্ড-এ-ভারত
পাকিস্তান নিয়ে ভারতীয়দের কৌতুহলের অন্ত নেই। বিশ্বকাপের মতো বড় খেলায় আর কোন দেশ কী করছে না জানলেও, পাকিস্তানের দৌড় কতদূর, এই খোঁজ অনেকেই রাখেন। একই ঘটনা প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রেও। সেখানেও বিরোধ কিছু কম হয় না। কখনও তা চরমে পৌঁছে যায়। আসরে নামতে হবে দুই দেশের সরকারকেও। তবে সেসব রাজনীতির ব্যাপার। দুই দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যে সম্পর্ক তা সবসময় এত গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছয় না। কিন্তু সমস্যা একটা জায়গাতেই। নিজের দেশের প্রতি প্রেম। আর সেইসঙ্গে অন্য দেশের প্রতি বিরাগ। সহজ ভাবে বললে, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের গুণগান পছন্দ করেন না বহু ভারতীয়। ব্যাপারটা অবশ্য স্রেফ পছন্দ অপছন্দের মধ্যেও আটকে থাকে না। এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের প্রবেশও ঘটে সহজেই। যিনি এমনটা করেছেন তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হবে। তা সে আইন যাই বলুক। সোশাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে তরজার অন্ত নেই। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ঠিক একদিন আগে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। সেই দিন কোনও ভারতীয় যদি পাকিস্তানকে শুভেচ্ছা জানায় তাহলে কটাক্ষের বন্যা বয়ে যায় সোশাল মিডিয়া জুড়ে। এছাড়া পতাকার ছবি দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ঘটনায় বিতর্কের অন্ত নেই। সম্প্রতি এমনই ‘অপরাধে’ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চার যুবক। সোশাল মিডিয়ায় স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন প্রতিবেশী দেশকে। এতেই এমন পরিণতি হয় ওই চারজন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য অন্যরকম ছিল। বলা হয়েছিল, তাঁরা ঘৃণা ভাষণ ছড়িয়েছেন।
আরও শুনুন: বেঙ্গালুরুর জল সমস্যা কি আমাদেরও কিছু শেখাবে?
তবে অন্যান্য ঘটনার মতো এই মামলা সহজেই মিটে যায়নি। জল গড়ায় শীর্ষ আদালত অবধি। সেখানেই গোটা ঘটনার মোড় ঘোরে। তাঁদের ‘অপরাধ’-এর যাবতীয় বর্ণনা শুনে বিচারপতি একেবারে অন্য কথা বলেন। রায়দানের শুরুতেই বিচারপতি বলেন, পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশকে শুভেচ্ছা জানানো আইনত অপরাধ নয়। তাই শাস্তির কোনও প্রশ্নই নেই। এক্ষেত্রে বাক স্বাধীনতার কথাও উল্লেখ করেন বিচারপতি। সুতরাং ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে শুভেচ্ছা জানানো বা সে দেশের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া আইনত অপরাধ নয়, একথা স্পষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যদিও এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন কোনওভাবে যদি কারও মন্তব্য সমাজে অশান্তি তৈরি করে বা এর থেকে কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে আঘাত লাগে, তাহলে তা অবশ্যই বিচারসাপেক্ষ। ওই ৪ যুবককে গ্রেফতারির ক্ষেত্রেও তেমনটাই মনে করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনায় চূড়ান্ত রায় দিয়েছে।