একটা ক্লাস করতে পেরোতে হয় কয়েক মাইল। বর্ষা এলে তাও বন্ধ। এত অসুবিধার মধ্যে কজন আর পড়া চালিয়ে যেতে পারে! তাই গ্রামের বেশিরভাগ পড়ুয়ায় স্কুলছুট হয়েছে। কিন্তু স্কুল না গেলে সবাই শিখবে কী? তাই চাঁদা তুলে গ্রামেই স্কুল বানিয়ে দিলেন গ্রামবাসীরা। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিক্ষা সকলের জন্মগত অধিকার। এমন স্লোগান রাস্তাঘাটে হামেশাই চোখে পড়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এই ধরনের দেওয়াল লিখন দেখতে পাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আদতে দেশের সব গ্রামে সমানভাবে শিক্ষার আলো কি পৌঁছেছে? বাস্তব কিন্তু নেতিবাচক উত্তরই দেয়।
আরও শুনুন: ঘুমের মাঝে ফোনের হানা! নিশ্চিন্তে ৬ ঘণ্টাও ঘুম হয় না ৬১ শতাংশ ভারতীয়র
এক্ষেত্রে দায়ী কে সে প্রশ্ন তোলাও বৃথা। তাই কাজের দিকে মন দেওয়াই ভালো। যেমনটা করেছেন কর্নাটকের ইল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দারা। স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও এই গ্রামের শিক্ষার আলো সেইভাবে জ্বলেনি। অর্থাৎ এতদিন এখানে কোনও স্কুলই ছিল না। সবথেকে কাছের স্কুলটিও ছিল ৪ কিমি দূরে। এতদিন সেখানেই যেতে হত পড়ুয়াদের। অনেকে এইভাবেই স্কুল জীবন পার করেছেন। কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়। যে পথ পেরিয়ে ওই স্কুলে যেতে হয় তা মোটেও সহজ নয়। সেইসঙ্গে বর্ষা এলেই নানা জায়গায় তৈরি হয় গর্ত। তার মধ্যে জল জমে রাস্তা বন্ধ। ইচ্ছা থাকলেও স্কুল যেতে পারত না খুদের দল। এই দেখে গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নেন কাছাকাছি একটা স্কুল না হলেই নয়। সেইমতো শুরু হয় কাজ। প্রথমেই অবশ্য নিজেরা স্কুল তৈরির কথা ভাবেননি ওই গ্রামের বাসিন্দারা। সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা হয় একটা নতুন সরকারি স্কুল গড়ার। কাজও শুরু হয় নতুন স্কুলের। কিন্তু অজানা কারণে তা মাঝপথেই থেমে যায়। বহু চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। এরপর গ্রামবাসীরা ঠিক করেন সেখানকার কমিউনিটি হল টিকেই স্কুল হিসেবে দান করা হবে। সেখানেই শুরু হয় পঠন পাঠন। কিন্তু সেও তো এক কামরার একটা ঘর। কত জনই বা একসঙ্গে পড়তে পারে! তাই এই ব্যবস্থাও যে চিরস্থায়ী নয় তা বুঝ গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। এই সময় অস্থায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঠিক করেন নিজেরাই চাঁদা তুলে নতুন স্কুল গড়বেন।
আরও শুনুন: ঘরে বাইরে সামাল দিতে গিয়েই ঘাটতি কেরিয়ারে, মত দেশের ৭০ শতাংশ নারীরই
গ্রামবাসীদের কাছে প্রস্তাব রাখতে তাঁরাও এগিয়ে আসেন। সকলের সাধ্যমতো সাহায্য মিলিয়ে জমা হয় বেশ কিছুটা টাকা। যা দিয়ে একটা স্কুল অন্তত তৈরি হয়েই যেত। বাস্তবে তা হয়ও। গ্রামবাসীদের চাঁদাতেই তৈরি হয় নতুন স্কুল। খুব বড় না হলেও, গ্রামের পড়ুয়াদের জন্য যথেষ্ট ওই স্কুল। সেখানেই নতুন করে শুরু হয় পঠন-পাঠন। পরিবর্তীকালে আরও কাজ এগোয়। স্কুলের সঙ্গে বাথরুম, রান্নাঘরের মতো অনুষঙ্গও যোগ হয়। সরকারি স্কুলের কাজ অবশ্য সেখানেই থেমে। তবু পড়াশোনা থেমে নেই। গ্রামবাসীদের তৈরি স্কুলেই রোজ ব্যাগ পীঠে হাজির হচ্ছে প গ্রামের খুদে পড়ুয়ারা।