মাঝরাতে বিপদ হতেই পারে। এমন সময় প্রতিবেশীর কাছ সাহায্য চাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। তাই বলে, মাঝরাতে কেউ যদি লেবু চাইতে আসেন, তাহলে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। এমনই এক ঘটনার জল গড়ায় আদালত অবধি। ঠিক কী ঘটেছিল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অলংকরণ- সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাড়িতে লেবু ছিল না। তাই প্রতিবেশির কাছে চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সময়টা খেয়াল করেননি। পাশের বাড়িতে যখন কড়া নাড়ছেন, তখন প্রায় মাঝরাত। এদিকে সেই বাড়িতে রয়েছেন একা মহিলা। স্বাভাবিক এহেন ‘আবদার’ শুনে তিনিও বেজায় ঘাবড়ে যান। এরপর এই ব্যাপারটা নিয়ে এতই জলঘোলা হয়, যা আদালতে গিয়ে থামে।
ভাবছেন তো, স্রেফ লেবু চাওয়ার জন্য কেন আদালতের বিচার প্রয়োজন হবে?
তাহলে খুলেই বলা যাক। ঘটনাটি কয়েক বছরের পুরনো। যার কেন্দ্রে রয়েছেন এক সিআইএসএফ অফিসার। জানা গিয়েছে, মাঝরাতে প্রতিবেশীর বাড়িতে লেবু চাইতে ওই অফিসারই গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই এত কাণ্ড। যদিও ঘটনার দুটো দিক রয়েছে। প্রথমটা অবশ্যই ওই অফিসারের। এবং দ্বিতীয়টা প্রতিবেশী মহিলার। ঘটনার পর অবশ্য ওই মহিলার কথাই সকলে বেশি করে বিশ্বাস করেছিল। কারণ তিনি যা অভিযোগ এনেছিলেন তা ফেলে দেওয়ার মতো নয় বলেই মনে করেছিলেন সকলে। মহিলার দাবি, তাঁর স্বামী সেদিন বাড়ি ছিলেন না। এবং সে কথা ওই অফিসার জানতেন। তা সত্ত্বেও মাঝরাতে তাঁর বাড়িতে আসেন অফিসার। এবং দরজা খুলতেই লেবু আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। বলাই বাহুল্য, এতে অস্বাভাবিক কিছুই নেই। প্রতিবেশীর বাড়িতে এমন দাবি বা আবদার নিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রেও অফিসারের দাবি ছিল, পেট ব্যাথার সমস্যা হওয়ায় তাঁর লেবু খাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু বাড়িতে সেদিন লেবু ছিল না। এই কারণেই প্রতিবেশীর কাছে তিনি লেবু চাইতে গিয়েছিলেন। তবে মহিলার দাবি, অফিসার মদ্যপ অবস্থায় সেই রাতে তাঁর বাড়ি এসেছিলেন। এদিকে বাড়িতে তখন শিশু কণ্যাকে নিয়ে একাই ছিলেন মহিলা। যদিও সেইসময় অফিসারকে প্রায় তাড়িয়েই দেন মহিলা। তিনিও চলে যান। কিন্ত মহিলার মনে ঘটনার রেশ থেকে যায়। এই নিয়ে অফিসারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানান মহিলা। অভিযোগ এমনই গুরুতর ছিল, নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হন তাঁরাও। ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়। এবং শাস্তি হিসেবে অফিসারের বেতন কাটা হয়। এভাবেই চলতে থাকে মাসের পর মাস। কাটে বছরও। এতদিনে বেতন বৃদ্ধিও হয়নি তাঁর। সবমিলিয়ে তিনি রীতিমতো বিরক্ত হয়ে ওঠেন।
তাঁর বয়ান নিয়ে দ্বারস্ত হন আদালতের। সেখানেই ঘটনার নতুন কর বিচার আরম্ভ হয়। অফিসার প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন, সেদিন কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ওই বাড়িতে যাননি। ফ্রেস অসুস্থ হয়ে পড়ায় নিজের প্রয়োজনের জিনিসটা চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার জন্য এত কিছু সহ্য করতে হবে বলে ভাবেনওনি অফিসার। যদিও এই ঘটনায় কার্যত তাঁর পক্ষেই রায় দিয়েছে কোর্ট। আদালতের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় অফিসারের কোনও দোষ নেই। অন্তত প্রশাসনিক কর্মী হিসেবে তিনি কোনও অপরাধ করেননি। সবমিলিয়ে ব্যাপারটা মিটমাট করেন আদালতের বিচারপতি। কিন্তু সামান্য লেবু চাওয়া নিয়েও যে আদালত অবধি যেতে হতে পারে, তা এই ঘটনা বাস্তবেই দেখিয়েছে।