রান্না মানেই ‘মেয়েলি’ কাজ। অথচ অর্থকরী পেশায় জুড়লে সেখানেই দেখা মেলে পুরুষের। তাহলে কাজের কি আদৌ লিঙ্গভেদ হয়? ভেবে দেখলেন শেফ রঞ্জন বিশ্বাস। শুনলেন চৈতালী বকসী।
কাজের কোনও লিঙ্গভেদ কি সত্যিই হয়? সন্তানের জন্মদান ছাড়া আর হয়তো এমন কোনও কাজই নেই যা নারী পারে আর পুরুষ পারে না। হ্যাঁ, গঠনগত কারণেই সাধারণত ধরা হয় পুরুষের শারীরিক শক্তি বেশি। কিন্তু তারপরও পুরুষের সঙ্গে ঘরে-বাইরে কাজের শরিক হচ্ছেন নারীরাও। সে স্টেশন কুলি মঞ্জু দেবী-ই বলুন বা ভারতীয় এয়ারফোর্সের ক্যাপ্টেন শালিজা ধামি, কি চন্দ্রযানের বিজ্ঞানী ঋতু শ্রীবাস্তব। এঁরা সবাই কাজ করেন, নিজেদের শ্রম, নিজেদের মেধার বিনিময়ে উপার্জন করেন। এরা সকলেই শ্রমজীবী। আর এঁরাই বারে বারে বুঝিয়ে দেন, শ্রমজীবী পরিচয়টুকু ছাড়া কাজের আর কোনও নারী বা পুরুষ পরিচয় হয় না।
ঠিক সে কথাই আরও একভাবে বুঝিয়ে দেন সেই পুরুষেরাও, যাঁরা এমন কোনও কাজের চর্চা করে চলেছেন, যা সমাজের বেঁধে দেওয়া গতে ‘মেয়েলি’। যেমন ধরুন রান্না। দেখা যাচ্ছে, রান্নার পেশাগত দুনিয়ায় বেশি অংশগ্রহণ করেন পুরুষেরাই। কিন্তু বাড়ির কাজের মতোই, অন্দরমহলে রান্নার ক্ষেত্রে লেগে যায় ‘মেয়েলি কাজ’-এত তকমা।
এই বৈষম্য নিয়েই কথা বললেন রঞ্জন বিশ্বাস, যিনি পেশাগত ভাবেই একজন শেফ। তিনি বলছেন,
রান্নাঘর যে মেয়েদেরই, এই উক্তিটাই এখন ভুল। এখন অনেক বাড়িতেই ছেলেরা রান্নার দায়িত্ব নিচ্ছেন, আর মহিলারাও বাইরেটা সামলাচ্ছেন। একজন পুরুষ যা করতে পারেন নারীও করতে পারেন। মেয়েরা একটু এগিয়ে, কারণ, একজন পুরুষকেও জন্ম একজন মহিলাই দেন। একজন পুরুষের মধ্যে তাঁর মায়ের অংশও থাকে। সুতরাং নারীর জন্য কাজ বেছে দেওয়া হবে, এ কথা আজ একেবারেই ভুল। আর সব পেশার মতোই, রান্নাটাও একটা পেশা।
শুধু পেশাই নয়, তিনি মনে করেন, এই বিষয়টি দিয়েই মানুষের পঞ্চেন্দ্রিয়কে খুশি করা সম্ভব। কাউকে খুশি করার চেয়ে আনন্দের কাজ আর কী আছে! আবার একই কারণে রান্নার পেশাও যথেষ্ট কঠিন।
শুধু অন্যকে খুশি করাই নয়, নিজের খুশিও এই কাজে খুঁজে পাওয়া যায় বলে মনে করেন তিনি। রান্নায় নিজের আশানুরূপ স্বাদ এলে তা আত্মবিশ্বাস আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। উদ্বেগের সময়ে ওষুধের মতো। যেমন কোভিডকালে বাড়িবন্দি থাকার সময় অনেক পুরুষই এগিয়ে গিয়েছেন রান্নাঘরের কাজে। আর সময়ই বুঝিয়ে দিয়েছে নারী আর পুরুষের মধ্যেকার সমতার কথা। সেই সমতাই মুছে দিতে পারে কাজের মধ্যে জারি থাকা সামাজিক লিঙ্গভেদও।