বার বার ধুলেও উঠবে না। মুছতে চাইলেও সহজে মুছবে না। ভোটের পর অন্তত এক সপ্তাহ। বয়ে বেড়াতে হবে ‘কালি’-র দাগ। কিন্তু হাজার খুঁজলেও এ কালি বাজারে মিলবে না। তাহলে, প্রতি বছর কারা জোগান দেয় এই ‘ভোটের কালি’-র? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভোটের বাদ্যি বাজল বলে। ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। চারিদিকে নানা রঙের ছড়াছড়ি। ভোটের আগে পতাকায়, আর ভোটের পর আবিরে। কিন্তু এর মাঝে আরও একটা রং বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে যায় ভোটযুদ্ধে। বলা ভালো, এই রং বা কালি না থাকলে ভোটপর্ব সম্পূর্ণই হবে না।
আরও শুনুন: মজুরি কাটার ভয়! ঋতুস্রাব এড়াতে জরায়ুও কেটে বাদ দিয়েছেন মহিলারা
ঠিক ধরেছেন, কথা বলছি নির্বাচনী কালি সম্পর্কে। ভোট দেওয়ার পর যা আঙ্গুলে লেপে দেওয়া হয়। দেখে মনে হবে মার্কারের ছাপ। কিন্তু আদতে তা মোটেও সাধারণ কোনও পেন বা মার্কারের কাজ নয়। বরং এ হল এমন এক কালি যা তৈরিই করা হয় শুধুমাত্র ভোটের জন্য। কোনও ভোটার একবারের বেশি যেন ভোট না দিতে পারেন। সেই ব্যবস্থা করতেই এই কালির জন্ম। যদিও এখন সবকিছুই ডিজিটাল। সেই অর্থে এই ধরনের জালিয়াতি করা কঠিন। তবু ভোটের পর আঙুলে কালি লেপে দেওয়ার রেওয়াজ এখনও বদলায়নি। লোকসভা, রাজ্যসভা সহ যে কোনও ধরনের ভোটেই এই কালি লাগানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু গোটা দেশে হাতে গোনা দু-একটা সংস্থার এই কালি বানানোর অধিকার রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনেও গোটা দেশে ভোটের কালি-র জোগান দেবে ওই সংস্থাই। জানা গিয়েছে, মোট ২৬.৫৫ লক্ষ ভায়াল কালির বরাত দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। যার জন্য খরচ হবে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী একটি ভায়ালে কমবেশি ১০ মিলিগ্রাম কালি থাকে। যা দিয়ে ৭০০ জন ভোটারের আঙুলে কালি দেওয়া সম্ভব। চলতি বছরের ভোটারের সংখ্যা হিসাব করেই এই পরিমাণ অর্ডার দেওয়া হয়েছে। যাতে ভোটের পর কালি অতিরিক্ত থেকে না যায়। আবার কমও না পরে।
আরও শুনুন: তিন তালাকের বিরুদ্ধে প্রচারের মুখ ছিলেন, হায়দরাবাদে বিজেপির তুরুপের তাস মাধবী লতাই
কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ কালি তৈরি করে কেবল এক-দুটো সংস্থা, কেন?
আসলে, এমনটাই হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কারণটা আর কিছুই না, গোপনীয়তা বজায় রাখা। আসলে, এই কালি কোনওভাবেই সাধারণ কোনও কালি নয়। তাই এটি তৈরি জন্যও মানতে হয় বিশেষ এক ফর্মুলা। এবার একাধিক সংস্থার কাছে যদি সেই ফর্মুলা থাকত, তাহলে জালিয়াতির সম্ভাবনা থেকেই যেত। সেসব এড়াতেই এই কালি বানানোর স্বত্ব দেওয়া হয়েছে মাত্র দু-একটি সংস্থাকে। যার মধ্যে প্রধান মাইসোর পেন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেড। সংক্ষেপে ‘এমপিভিএল’। ১৯৬২ সালে ন্যাশনাল ফিজিকাল ল্যাবরেটরি কালি তৈরির সিক্রেট ফর্মুলা তুলে দেয় এই সংস্থার হাতে। যা আজও গোপনই রয়েছে। এমনকি সংস্থার সব কর্মীরাও জানেন না, আসলে ঠিক কীভাবে তৈরি করা হয় এই কালি। তবে পুরোটাই যে রসায়নের খেলা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মনে করা হয়, এর মধ্যে এমন কিছু পদার্থ থাকে যা বাইরের জল হাওয়ায় আরও পাকাপাকি ভাবে আঙুলে বসে যায়। অন্তত সপ্তাহ খানেক চেষ্টা করেও পুরোপুরি মুছে ফেলা অসম্ভব। যে রাজ্যে যেমন প্রয়োজন সেই মতো পাঠানো হয় কালি। হিসাব রাখা হয় কড়া নজরে। যদিও স্রেফ ভারতে ভোট এলেই যে এই সংস্থা কাজ শুরু করে তা নয়। বিদেশেও কালি পাঠানোর বরাত পায় এই সংস্থা। তাই একটা কথা সহজেই বলাই যায়, ভোটপর্ব সার্বিকভাবে মেটাতে এই সংস্থার ভূমিকা কোনও অংশে কম নয়।