জন্মান্তরে সবাই বিশ্বাস করেন না। অথচ কেউ কেউ দাবি করেন, পূর্বজন্মের কথা তাঁদের মনে আছে। এমনই এক খুদের দাবিতে গোটা দেশে শোরগোল পড়েছিল। স্রেফ পূর্বজন্মের কথা মনে রাখাই নয়, নিজের খুনিদেরও চিনিয়েছিল ওই খুদে। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘সোনার কেল্লা’র মুকুলের মতো এই খুদেও নিজেকে ‘জাতিস্মর’ বলে দাবি করত। তবে এক্ষেত্রে গল্পটা খানিক আলাদা। পূর্বজন্মের কথা মনে করেই নিজের খুনিদের শাস্তি দিয়েছিল এই খুদে। যা অবাক করেছিল তার পরিবার সহ সকলকেই।
আরও শুনুন: গায়ে রাজনীতির ছাপ নেই, তবু ভোট যুদ্ধে নয়া ভরসা হয়ে উঠছেন ইনফ্লুয়েন্সাররাই?
ঠিক কী ঘটেছিল?
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, এ ঘটনার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই অনেকেই ঠিকমতো বিশ্বাস করেন না। কিন্তু যারা স্বচক্ষে দেখেছেন, তাঁরা না বুঝে যান কোথায়! বেশ কয়েক বছরের পুরনো এই ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের। সেখানকার আগ্রা এবং তার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের এক গ্রামকে কেন্দ্র করেই সবকিছু। সত্যি হলেও এ ঘটনাকে অনেকেই গল্প মনে করেন। আর সেই হিসেবে এ গল্পের নায়ক টিটু ওরফে তোরণ সিং। যোগীরাজ্যের বড়া গ্রামে তার জন্ম। কিন্তু ছোট থেকে নিজেকে সেই গ্রামের বাসিন্দা মনে করত না টিটু। সবসময় তার মেজাজ থাকত সপ্তমে। কারণে-অকারণে জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছুড়ে ফেলে দিত। বেশিরভাগ সময় কথা বলত নিজের সঙ্গেই। কথা বললেও তার মধ্যে এমনই কিছু অসংগতি থাকত যা ঠিকমতো বুঝতে পারত না কেউই। ছোটবেলায় তার এই আচরণ বিশেষ এমল দিতেন না পরিবারের কেউই। কিন্তু বড় হলেও টিটুর আচরণে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বরং সেই জোর গলায় দাবি করতে শুরু করে, এই গ্রাম তার ঠিকানা নয়। এমনকি নিজের বাবা-মাকেও কার্যত অস্বীকার করত টিটু। উলটে নিজের পরিচয় হিসেবে সে বলত সুরেশ বর্মা নামে একজনের নাম। শুধু তাই নয়, টিটু দাবি করত তার দুই সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে আগ্রায়। এই ধরনের দাবি বার বার শুনে পরিবারের লোকজনও খানিক ঘাবড়ে যান। গ্রামের মধ্যে এই খবর ছড়িয়েও পরে সহজেই। তারপর সকলে মিলে টিটুর কাছে এমন কথা বলার কারণ জানতে চান।
আরও শুনুন: জিডিপি বৃদ্ধির হারে আশার আলো, কিন্তু তার নেপথ্যে কি কর্মসংস্থানের উন্নতি দেখা গেল?
এরপর আসল সত্যি সামনে আসে। ব্যাপারটা যে জন্মান্তরের ঘটনা হতে পারে, এই আন্দাজ অনেকেই করেছিলেন। তাঁদের সন্দেহই মিলে যায়। যদিও তার জন্ম টিটুর পরিবারকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। নিজের পরিচয় হিসেবে টিটু যে সুরেশ বর্মার নাম বলত, তাঁর জীবনের আরও কিছু কথা টিটু বলতে শুরু করে। তার দাবি ছিল, সুরেশ বর্মাকে খুন করা হয়েছে। আর সেই খুন কে করেছে কীভাবে করেছে সেসবও বলত টিটু। সবটাই সে বলত নিজেকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ তাকে খুন করা হয়েছে, কারা খুন করেছে এইসব। এতদিনে টিটুর পরিবারও বেশ নড়েচড়ে বসেছে গোটা ব্যাপারটা নিয়ে। টিটুর বর্ণ্না মতোই তাঁরা আগ্রা গিয়ে সুরেশ বর্মার খোঁজ শুরু করেন। আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, সেই বর্ণনা হুবহু মিলে যায়। জানা যায়, সত্যি সুরেশ বর্মা নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, যা খুন করে হয়েছিল টিটুর জন্মের কয়েক মাস আগেই। সেখানে বর্তমানে সুরেশের দুই সন্তান ও স্ত্রী থাকেন। তাঁদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় টিটুকে। একবার দেখেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাঁদের জড়িয়ে ধরে টিটু। তাকে সুরেশ সংক্রান্ত একের পর এক প্রশ্ন করে সুরেশের পরিবার। সেই সব প্রশ্নের উত্তর নাকি সঠিক ভাবে দিতে পারে টিটু। তারপর কারা সুরেশকে খুন করেছে সেই আততায়ী দেরও চিনিয়ে দেয় টিটু। আর যেভাবে খুনের বর্নণা বা যাবতীয় ব্যাখ্যা সে করে, তা অবিশ্বাস করতে পারেনি প্রায় কেউই। শোনা যায়, সুরেশের স্ত্রীও বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন, টিটুই তাঁর স্বামীর পূর্নজন্ম। তবে এইসব ঘটনার পর টিটু আবারও নিজের পরিবারের সঙ্গে বড়া গ্রামে ফিরে যায়। তারপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। সেইসময় এই ঘটনা গোটা দেশে আলোড়ন ফেললেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা চাপা পড়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে অনেকে বিশ্বাসও করেন না এমন কিছু হয়েছিল। স্রেফ এই ঘটনা যারা দখেছেন তাঁরাও এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ খানিকটা ধোঁয়াশাতেই দিন কাটান।