উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার পর দেশের কাছে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন র্যাটহোল মাইনার শ্রমিকেরা। এবার সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনার খাতিরে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল তাঁদেরই একজনের বাড়ি। এইভাবেই কাজের পুরস্কার মেলে আমাদের, বলছেন শ্রমিক ওয়াকিল হাসান। শুনে নেওয়া যাক।
ভালো কাজ করলে নাকি পুরস্কার মেলে, নীতিকথার গল্পে তো এমনটাই বলা হয়। কিন্তু প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দেশের কাজ করার পরও যে তাঁরই বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল, তা সেই কাজেরই পুরস্কার কি না, ভেবে উঠতে পারছেন না ওয়াকিল হাসান। সম্প্রতি সরকারের এক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার দৌলতে দেখা যায়, সেই পরিকল্পনার প্রস্তাবিত ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে গিয়েছে তাঁর বাড়িটি। আর সেই কারণেই আচমকাই মাথার উপর থেকে ছাদ সরে গিয়েছে তাঁদের। বাড়িঘর খুইয়ে আক্ষরিক অর্থেই পথে নেমে আসতে হয়েছে তাঁর পরিবারকে। অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই উত্তরাখণ্ডের সেই অভিশপ্ত সুড়ঙ্গ থেকে আটক শ্রমিকদের উদ্ধার করার পর ওয়াকিল ও তাঁর সহ-শ্রমিকদের উদ্দেশে পুরস্কার ঘোষণার ঘুম পড়েছিল। ‘এইভাবেই কাজের পুরস্কার মেলে আমাদের’, ঘরছাড়া হওয়ার পর বলছেন শ্রমিক ওয়াকিল হাসান।
আরও শুনুন:
সব দেশেই অসহায় কৃষকরা! ভারত শুধু নয়, বিশ্ব জুড়েই চলছে কৃষক আন্দোলন
উত্তরাখণ্ডের সেই অভিশপ্ত সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের কাছে দেবদূতের মতো এসে দাঁড়িয়েছিলেন ওয়াকিল হাসান-রা। পেশায় তাঁরা র্যাটহোল মাইনার। ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে সুড়ঙ্গ থেকে আটক শ্রমিকদের উদ্ধার করার পথ বের করেছিলেন এই ১২ জন শ্রমিক, যে কাজ কোনও যন্ত্রও করতে পারেনি। এই কাজে বিপদের ঝুঁকিও কম ছিল না। প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকেই আটক শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার পর উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল গোটা দেশ। ওয়াকিলদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন খোদ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তবে সে সবই এখন অতীত। দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির উদ্যোগে বাড়ি ভাঙা পড়ার পরে দিশেহারা হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন হাসান।
আরও শুনুন:
বাড়ছে মুসলিম বিদ্বেষ, অভিযোগের হার বেশি বিজেপিশাসিত রাজ্যেই, বলছে সমীক্ষা
জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির খাজুরি খাস গ্রামের উন্নয়নের জন্য সরকার যে পরিকল্পনা করেছে, সেই ম্যাপের মধ্যে পড়ে গিয়েছে হাসানের বাড়ি। যদিও হাসান দাবি করছেন, ওই এলাকা আদতে একটি নথিভুক্ত কলোনি। ২০১২-১৩ সাল নাগাদ যখন সেখানে বাড়ি তৈরি করা হয়, তখন কোনও সমস্যার কথা বলা হয়নি। এমনকি বাড়ি ভাঙার আগেও কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি বলেই দাবি ওই ব্যক্তির। তিনি জানিয়েছেন, যখন বাড়ি ভাঙা হয়, সেই সময়ে তিনি বা তাঁর স্ত্রী কেউই বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ছিল কেবল তাঁর তিন সন্তান। গোটা ঘটনায় রীতিমতো ভয় পেয়ে যায় তারা। এদিকে হাসান বাড়ি ফেরার পর তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তাঁর ফোনটিও নিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও ঘটনা জানাজানি হতে স্থানীয় বিধায়ক আশ্বাস দিয়েছেন, যাতে হাসান প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সুবিধা পান সেই বিষয়টি দেখা হবে। কিন্তু আপাতত নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থাতেই দিন কাটছে ওই পরিবারের।