গাড়ি, বাড়ি কিংবা মোবাইল নয়। ভাড়ায় মিলবে প্রেম। যদিও এই প্রেমে যৌনতার নামগন্ধ নেই। ভবিষ্যৎ ভাবনাও নেই। আছে স্রেফ জমে থাকা কথা বলে হালকা হওয়ার উপায়। সম্প্রতি, এই ভাড়ার প্রেমের হাওয়াতেই গা ভাসিয়েছে তরুণ প্রজন্ম। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রেমের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেকরকম। কেউ মনে করেন, মনের মিল হওয়াটাই আসল ব্যাপার। কারও কাছে শরীরী চাহিদাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ কেউ দুই-এর ব্যালান্স রেখে চলতেই পছন্দ করেন। তবে সাম্প্রতিক এক ট্রেন্ডে এসবের কিছুই থাকছে না। অর্থাৎ প্রেম হলেও সেখানে কথা দেওয়ার বা কথা রাখার ব্যাপার নেই। এমনকি যৌনতাও নেই। আছে স্রেফ চুক্তি মেনে মনের কথা বলার মানুষ। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। ভাড়ার প্রেমিক-প্রেমিকা, এই ট্রেন্ডেই গা ভাসিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের অনেকে। আর তাঁদের কাছে পাকাপাকি প্রেম করার থেকে এই ব্যবস্থাই ঢের ভালো।
-: আরও শুনুন :-
‘কবিতা তো আর স্ন্যাক্স নয়!’ মৃদুভাষে সেদিন বলে উঠেছিলেন গুলজার
ব্যাপারটা ঠিক কী?
আসলে, ভাড়ার প্রেমিক-প্রেমিকা বিশেষ ব্যবস্থা বলা চলে। এমনিতে যেভাবে ঘর-বাড়ি বা বাইক ভাড়া দেওয়া হয়, এখানেও নিয়মটা খানিক একই। প্রথমে পছন্দ করতে হবে কেমন প্রেমিক বা প্রেমিয়কা দরকার। তারপর তাঁর সঙ্গে কতক্ষণ সময় কাটানোর জন্য কত টাকা দিতে হবে, সেই হিসাব বুঝে নিতে হবে। টাকা মিটিয়ে দিলেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই যুবক বা যুবতী হয়ে যাবেন মনের মানুষ। আপাতভাবে প্রেম বলতে যা বোঝায় এক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। মানে ঝগড়া, খুনসুটি, অভিমানের কোনও বালাই নেই। যা কিছু হবে সবটাই বেশ ভালো ভালো ব্যাপার। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই ট্রেন্ডে দেশের নামীদামী শহরের অনেকেই রীতিমতো গা ভাসিয়েছেন। একদিকে যেমন পেশা হিসেবে ভাড়ার প্রেমিক-প্রেমিকা হওয়া বেছে নিয়েছেন কেউ কেউ, তেমনই তাঁদের থেকে পরিষেবা নিতেও লাইন দিয়েছেন অনেকেই। এর জন্য বেশ কিছু অ্যাপ বা ওয়েবসাইটও রয়েছে। তবে কোনওভাবেই এই ব্যবস্থাকে এসকর্ট সার্ভিসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা চলবে না। কারণ ভাড়ার প্রেমিক-প্রেমিকা আর যাই করুন যৌন তৃপ্তিতে কোনও সাহায্য করবেন না। এমনকি এই ব্যবস্থা ডেটিং অ্যাপের মতোও নয়। অর্থাৎ পাকাপাকি প্রেমের কোনও গল্প নেই এখানে। কিন্তু তাতে কি! সংবাদমাধ্যমের দাবি, স্রেফ কয়েক ঘণ্টা কথা বলার জন্যই একজন মানুষ খুঁজে বেড়ান অনেকে। নিদেনপক্ষে একসঙ্গে কোনও ক্লাবে গিয়ে সময় কাটানো, বই পড়া এই সবই মিলবে ভাড়ার প্রেমে। এমনকি প্রিয়জনের কবরস্থানে যাওয়ার সময়ও সঙ্গ দিতে পারেন ওই ভাড়ার প্রেমিক-প্রেমিকা। বদলে দিতে হবে নির্দিষ্ট মূল্য। সে হিসাবও আগে থেকেই ঠিক করা থাকবে।
আরও শুনুন: কাজের চাপ কি এখন মাত্রাছাড়া! আগেকার কাজের হিসাব কী বলছে?
সম্প্রতি, বেঙ্গালুরুর মতো কর্মব্যস্ত শহরে এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেখানেই দেখা গিয়েছে বিভিন্ন বয়সের পুরুষ বা মহিলা এই ভাড়ার প্রেম খুঁজতে ব্যস্ত। উদাহরণ হিসেবে কয়েকজনের কথাও উল্লেখ করেছে ওই সংবাদমাধ্যম। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পেশায় ডাক্তার এক বছর ২৩ এর যুবক হাজার চেষ্টা করেও মনের মানুষ খুঁজে পাননি। ডেটিং অ্যাপে চেষ্টা করেও তেমন লাভ হয়নি তাঁর। এদিকে কর্মব্যস্ত দিনের শেষে মনের কথা বলার মতো একজন না হলে ঠিক চলছিল না। তাই তাঁর কাছে এই ভাড়ায় প্রেমিকা খুঁজে পাওয়া বেশ আনন্দের ব্যাপার ছিল। এমনিতে ব্যস্ত থাকলেও যখন সময় পান, তখন কয়েক ঘন্টার জন্য প্রেমিকা ভাড়া করে নেন ওই যুবক। তাঁর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসেন। বদলে হিসাব মতো টাকা মিটিয়ে দেন। কোনও যৌনতা নেই, মান-অভিমানের ঝঞ্ঝাট নেই, স্রেফ নিজের মনের শান্তি খুঁজে নেওয়ার উপায় রয়েছে। একইভাবে বছর ৪০এর কর্পোরেট চাকুরীজীবী এক মহিলাও ভাড়ায় বয়ফ্রেন্ড খুঁজে নেন হামেশাই। কয়েক বছর আগে স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় তিনি প্রায় হাসতেই ভুলে গিয়েছিলেন। এদিকে নতুন করে পাকাপাকি সম্পর্কে জরানোর সুযোগ হয়নি। তাই ভাড়ায় প্রেমিক মিললে আর কিছুর প্রয়োজন নেই। আর উদাহরণের এই তালিকা বেশ বড়। যদিও ভাড়ায় প্রেম বিষয়টা তেমন নতুন নয়। বহু আগে জাপানে এমন ভাড়ার প্রেমিক-প্রেমিকা পাওয়ার বিষয়টা শুরু হয়েছিল। সেখানেও যৌনতার কোনও বিষয় ছিল না। এমনকি সাধারণ কিছু বিষয় মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যও নাকি প্রেমিক-প্রেমিকা ভাড়ায় নিতেন অনেকেই। বর্তমানে সেই ব্যবস্থাই ফিরে এসেছে। তবে হ্যাঁ, ভারতের মতো দেশে এই পরিষেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয় মহিলাদের। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু ওয়েবসাইট বেশ দায়িত্ব সহকারে কোনওরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই ব্যবস্থা করে চলেছে। তবু একটু সতর্ক থাকলেই ক্ষতির আশঙ্কা কমে। আর নিশ্চিন্তে নিজের জীবনটাকে উপভোগ করার সুযোগ মেলে।