ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগে না এক টাকাও। আবার বিনিময়ে ব্যাঙ্ক থেকেও মেলে না একটিও টাকা। তবুও দিনে দিনে ভিড় উপচে পড়ছে অযোধ্যার এই ব্যাঙ্কে। কীসের আশায় এখানে ভিড় জমান সকলে? শুনে নেওয়া যাক।
টাকা গচ্ছিত রাখা, বিনিময়ে সুদ মিলিয়ে কিছু বাড়তি লাভ- এই আশাতেই তো ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখেন যে কোনও মানুষ। কিন্তু এই ব্যাঙ্কে তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই। লেনদেন হয় বইকি, তবে সেখানেও কোনও আর্থিক বিনিময় নেই। না এখানে অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনোরকম টাকাপয়সা লাগে, না এখান থেকে কোনও টাকাপয়সা ফেরত পান কেউ। আশ্চর্যের কথা হল, তারপরেও এই ব্যাঙ্কটি দাঁড়িয়ে আছে দিব্যি বহাল তবিয়তে। আর সেখানে ভিড়েরও কমতি নেই। ঠিক কী কারণে সেখানে ভিড় জমান এত উপভোক্তা?
আরও শুনুন:
মুদ্রায় খোদাই রাম-সীতার ছবি, সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছিলেন সম্রাট আকবর
সত্যি বলতে, অযোধ্যার ‘ইন্টারন্যাশনাল শ্রীরামসীতা ব্যাঙ্ক’-এর কথা শুনলে এমনই রহস্যজনক মনে হবে। কিন্তু ব্যাঙ্কের সম্বন্ধে খোঁজ নিলেই ফাঁস হবে রহস্য। আসলে রামনামই এই ব্যাঙ্কের মূলধন। কানাকড়ি ছাড়াই অ্যাকাউন্ট খোলা যায় এই ব্যাঙ্কে। আর ‘রিটার্ন’ বলতে মেলে মানসিক শান্তি। টাকাপয়সার বদলে এখানে জমা রাখতে হয় একধরনের পুস্তিকা, যার পাতায় পাতায় ‘সীতারাম’ লিখতে হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান, বিনা খরচে ভক্তদের বুকলেট এবং লালকালির পেন দিয়ে থাকেন তাঁরাই। এখানে কাউকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে ৫ লক্ষ বার সীতারাম লিখতে হয়। তবে পাসবুক ইস্যু করা হয়। ভারত ও বিদেশ মিলিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল শ্রীরামসীতা ব্যাঙ্ক’-এর ১৩৬টি শাখা রয়েছে বর্তমানে। পুণ্য সংগ্রহের আশাতেই এই ব্যাঙ্কে খাতা খোলেন দেশবিদেশের ভক্তরা। কেউ সশরীরে এখানে উপস্থিত হতে না পারলে মেল করেও বুকলেট পাঠিয়ে দিতে পারেন, আর সেভাবেই ব্যাঙ্কে খুলে ফেলতে পারেন নিজের অ্যাকাউন্ট।
আরও শুনুন:
অয্যোধ্যায় ‘অসুখ’ সারাতেও ভরসা সেই ‘রাম’, ১২০ বছর ধরে চলছে মানুষের সেবা
১৯৭০ সালের নভেম্বরে, শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের প্রধান, মহন্ত নৃত্যগোপাল দাস এই ব্যাঙ্কটি চালু করেছিলেন। ভারত তো বটেই, আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, নেপাল, ফিজি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এই ব্যাঙ্কে গ্রাহক সংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি। হিসেব বলছে, শ্রীরামচন্দ্রের ভক্তদের থেকে ইতিমধ্যেই ২০ হাজার কোটিরও বেশি ‘সীতারাম’ লেখা বুকলেট সংগ্রহ করে ফেলেছে এই ব্যাঙ্ক। বিশেষ করে অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের পর থেকে হুহু করে বাড়ছে ব্যাঙ্কের গ্রাহক সংখ্যা। ব্যাঙ্কে পুণ্য জমা রাখার তাগিদেই এখানে খাতা খুলে চলেছেন অসংখ্য পুণ্যার্থী।