অপেক্ষা আর একটি মৃত্যুর। তবেই নাকি উদ্ধার করা যাবে গুপ্তধন। হ্যাঁ, এমনই এক অভিশাপ জড়িয়ে আছে এই গুপ্তধনের সঙ্গে। অথচ সেই গুপ্তধন যে আসলে কী, তা আদৌ আছে কি না, কিছুই জানা যায়নি এখনও। তবু এর জন্যই হারিয়ে গিয়েছে একের পর এক প্রাণ। শুনবেন সেই গুপ্তধনের কাহিনি?
কথায় বলে, লোভে পাপ, আর পাপে নাকি মৃত্যু। মৃত্যুর কমতি নেই, তবু এই গুপ্তধনের রটনাকে ঘিরে মানুষের লোভও কমার নাম নেই। শোনা যায়, ইতিমধ্যেই এই গুপ্তধন খুঁজতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন মানুষ। তারপরেও আরও একটি মৃত্যুর আশা কিংবা আশঙ্কায় দিন গুনছেন গুপ্তধনপ্রেমীরা। কিন্তু কেন এমন ভয়ানক আশার জাল বোনেন তাঁরা? আসলে প্রচলিত বিশ্বাস হল, এই গুপ্তধনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভিশাপ। ৭ জনের মৃ্ত্যু হলে তবেই উদ্ধার হবে গুপ্তধন। তাহলে কি আরও এক প্রাণের বিনিময়ে ধরা দেবে গহ্বরে লুকিয়ে রাখা গুপ্তধন? সে উত্তর অবশ্য এখনও জানেন না কেউই।
আরও শুনুন: ঘনিষ্ঠ অবস্থায় মৃত্যু, যুগলের অতৃপ্ত আত্মা এখনও ঘুরে বেড়ায় এই পাহাড়ি রাস্তায়
কোথায় রয়েছে সেই মহামূল্য গুপ্তধন? আসলে পূর্ব কানাডার ‘নোভা স্কোটিয়া’ প্রদেশের কাছেই ‘ওক দ্বীপ’, আর যাবতীয় রহস্য এই দ্বীপের একটি গহ্বরকে নিয়ে। এখানেই নাকি লুকোনো আছে অতুল ঐশ্বর্য। লোকের মুখে মুখে সেই গহ্বরের নাম হয়ে গিয়েছে ‘মানি পিট’ বা টাকার গহ্বর। রহস্যময় গহ্বর খুঁড়ে মিলেছে সিমেন্টের তৈরি ভল্ট, কাঠের বাক্স। রেডিয়োকার্বন পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, জিনিসগুলি ষোড়শ শতকের। আর সেখান থেকেই জোরালো হয়েছে গুপ্তধনের জল্পনা। তার জন্য একাধিকবার দ্বীপের মালিকানা বদল হয়েছে, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে গুপ্তধন খুঁজেছেন উৎসাহীরা, কিন্তু লাভের ঘরে থেকে গিয়েছে শূন্যই। গহ্বর খুঁড়তে শুরু করে কিছুদূর অব্দি যাওয়ার পরই সমুদ্রের জল এসে ভরে গিয়েছে সুড়ঙ্গ। কিন্তু ভাটা পড়েনি গুপ্তধনপ্রেমীদের আগ্রহে। গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার জন্যই এহেন ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না, সেই সন্দেহে আরও শান দিয়েছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: মরণাপন্ন ব্যক্তির প্রাণ বাঁচালেন, অথচ স্বীকৃতির বদলে খোয়ালেন চাকরি, কেন?
কিন্তু কী এই গুপ্তধন, যার জন্য এত মানুষের এত উন্মাদনা? মজার কথা হল, সে কথাও ভালোভাবে জানা যায় না। কেউ কেউ মনে করেন, জলদস্যুদের লুঠপাটের মাল জমিয়ে রাখা হত সুড়ঙ্গ খুঁড়ে, আর এই গহ্বর আসলে সেই সুড়ঙ্গেরই মুখ। যে জলদস্যু এডওয়ার্ড টিচ বা ব্ল্যাকবেয়ার্ডকে বলা হত ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের ত্রাস, তিনি নিজেই নাকি স্বীকার করেছিলেন এ কথা। আবার কারও ধারণা, শেষ ফরাসি সম্রাজ্ঞী মারি আঁতোয়ানেতের গয়নাগাঁটি আর ধনরত্নই নাকি লুকোনো আছে এখানে। ফরাসি বিপ্লবের সময় ভার্সেই প্রাসাদ বিপ্লবীদের দখলে চলে যাওয়ার আগে সেসব সরিয়ে ফেলেছিলেন রানি। আর এইসব গুঞ্জন যত ছড়িয়েছে, ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের লোভ। তার কাছে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে প্রাণের ভয়ও। শেষ পর্যন্ত সাত-সাতটি প্রাণের বিনিময়েই কি খুলে যাবে গুপ্তধনের ভাণ্ডার? সেই ‘চিচিং ফাঁক’-এর অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন গুপ্তধনপ্রেমীরা।