রাস্তা, পার্ক কিংবা নদীর ধার নয়। প্রি-ওয়েডিং শ্যুট চলছে অপারেশন থিয়েটারে। হবে নাই বা কেন, ডাক্তারের বিয়ে বলে কথা! কিন্তু এমনটা করতে গিয়ে বিয়ের আগেই সাধের চাকরীটি হারালেন ওই চিকিৎসক। ঠিক কী ঘটেছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার চলছে। দুই ডাক্তার মন দিয়ে সেই কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ ঝলসে উঠল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। রোগীর দিকে এগিয়ে এলেন দুজন ক্যামেরাম্যান। তাদের দেখে একগাল হাসি নিয়ে উঠে বসলেন রোগীও! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি! সম্প্রতি এমনই এক ‘প্রি-ওয়েডিং’ শ্যুটের ভিডিও নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
আরও শুনুন: জয় শ্রীরাম বলতে আপত্তি কীসের! ‘সাজদা’ প্রসঙ্গ টেনে সাফ দাবি মহম্মদ শামির
শখ বড় আজব বালাই! শখ মেটাতে সারা জীবনের সঞ্চয় খরচ করতেও দু-বার ভাবেন না অনেকেই। এমনকি বড়সড় ঝুঁকিও নিয়ে ফেলেন কেউ কেউ। এক্ষেত্রেও খানিকটা তেমনই হয়েছে। তবে শখপূরণের খেসারত কী দিতে হবে, সেটা আগে থেকে বুঝতে পারেননি কর্নাটকের এই চিকিৎসক। আজকাল, প্রি-ওয়েডিং শ্যুট বিয়ের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিয়ের আগে হবু বর-কনে একান্তে খানিক সময় কাটাবেন, আর তাঁদের সেই ভালোবাসার মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি হবে। স্রেফ ছবি নয়, প্রি-ওয়েডিং ভিডিও-ও বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত সুন্দর কোনও জায়গায় গিয়ে গোটা শ্যুটিং পর্ব সারা হয়। কর্নাটকের ডা. অভিষেকও সেই প্রি-ওয়েডিং-এর ব্যবস্থাই করেছিলেন। তবে সুন্দর জায়গা হিসেবে তিনি বেছে নেন অপারেশন থিয়েটার টাকেই। দিনক্ষণ ঠিক করে সবকিছু সাজিয়েও ফেলেন। আলাদা কোনও পোশাক নয়, একেবারে অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা যেমন পোশাক পরেন, সেই পরেই ছবি তুলবেন বলে ঠিক করেন। হবু কনেকেও পরান একই পোশাক। পোজ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছকের বাইরেই ভেবেছিলেন। মানে সাধারণ প্রি-ওয়েডিং-এ বর-কনে যেমন হাত ধরে বা কাঁধে মাথা রেখে ছবি তোলে, তিনি তেমনটা করেননি। হবু স্ত্রী-র সঙ্গে মন দিয়েছিলেন অপারেশনে। মাঝে শুয়ে আছে রোগী, তাঁর শরীরে চলছে কাটাছেঁড়া এদিকে সেই অবস্থাতেই উঠছে ছবি-ভিডিও। আর সেই ভিডিও-ই ভাইরাল নেটদুনিয়ায়। অবশ্য সবটাই যে নকল তা ভিডিওতেই স্পষ্ট। কারণ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার, রোগী সকলেই একযোগে হাসতে দেখা যাবে। এমনকি অপেরেশন থিয়েটারে ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনও হাসির রোল তুলেছেন ভিডিওতেই।
আরও শুনুন: হাম ‘সাত’ সাথ হ্যায়! শুভ সংখ্যা ৭ বলেই সাত তরুণীকে বিয়ে যুবকের
এতো গেল শখের কথা। নিজের মতো করে তা মিটিয়েও ফেলেছেন ডা. অভিষেক। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। কারণ ভাইরাল ভিডিও খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি নেটদুনিয়ার একাংশ। অনেকেই দাবি তোলেন, এইভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার অপমান করা হয়েছে। যদিও হাসপাতাল তরফে জানানো হয়, ওই অপারেশন থিয়েটারটি দীর্ঘদিন অকেজো হয়েই পড়েছিল। নির্মাণের কাজ চলায় ওখানে কোনও অপারেশন হত না। তাই এই কাজের দরুণ কারও ক্ষতি হয়নি। তবু নেটদুনিয়ায় ক্ষোভের আঁচ বাড়তেই থাকে। এমনকি ঘটনার কথা কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কানেও পৌঁছয়। তিনি সরাসরি ওই চিকিৎসককে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে এই ধরনের আচরণ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যায় না বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে একটি নোটিশও জারি করেছেন তিনি, যেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে হাসপাতালের সমস্ত কর্মী যেন নিজের কাজ সম্পর্কে সচেতন হন। তাই শখ মেটাতে গিয়ে বেশ ভালো মতোই খেসারত দিতে হল ওই ডাক্তারকে।