গোবলয়ে যতই শক্ত ঘাঁটি থাক, দশ বছরের শাসনকালে দক্ষিণ ভারতে সেভাবে শক্ত জমি তৈরি করতে পারেনি পদ্মশিবির। কিন্তু এবার লোকসভা ভোটের আগে বারে বারেই দক্ষিণের দিকে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদিকে। বিজেপির এই স্ট্র্যাটেজি কি এবার দক্ষিণে পদ্ম ফোটাতে পারবে? কী বলছেন দেশের মানুষ?
‘আব কি বার চারশ পার’। সম্প্রতি সংসদে দাঁড়িয়েই চব্বিশের নির্বাচনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। অর্থাৎ ২০১৯-এর থেকে আরও অন্তত ১০০ আসন এবার বেশি পাবে বিজেপি, এমনটাই দাবি তাঁর। রাজনৈতিক মহল জানে, উনিশের লোকসভা ভোটে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ভরিয়ে দিয়েছিল পদ্মশিবিরের ঝুলি। কিন্তু আরও শতাধিক আসন বাড়ানোর লক্ষ্য থাকলে যে সেই গণ্ডির বাইরেও পা ফেলতে হবে, সে কথা ভালোই জানেন গেরুয়া শিবিরের দুঁদে কূটনীতিকেরা। তাই চব্বিশের লোকসভা এগিয়ে আসতেই বারে বারে দক্ষিণমুখী হতে দেখা যাচ্ছে খোদ নরেন্দ্র মোদিকে। কিন্তু বিজেপির এই নয়া স্ট্র্যাটেজির জেরে এবার দক্ষিণেও কি গেরুয়া রং ধরবে? আসন্ন নির্বাচনের আগে উসকে উঠেছে সেই প্রশ্নই। লোকসভার ৫৪৩টি আসন নিয়ে কী ভাবছেন আমজনতা, ইতিমধ্যেই সেই সমীক্ষাও করেছে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম। কী ভাবছেন দেশের মানুষ? শুনে নেওয়া যাক সে কথাই।
আরও শুনুন:
জয় শ্রীরাম বলতে আপত্তি কীসের! ‘সাজদা’ প্রসঙ্গ টেনে সাফ দাবি মহম্মদ শামির
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনেকেই মনে করছেন উত্তরপ্রদেশে মোট ৪০টি আসনের মধ্যে ৩২টিই আসবে বিজেপির দখলে। হরিয়ানাতে ১০ আসনের মধ্যে ৮টি বিজেপির। রাজস্থান ও গুজরাটে সবকটি আসনের দাবিদার বিজেপিই। হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও দিল্লিতেও একই হাল। মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে অধিকাংশ আসনই বিজেপি দখল করতে পারে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা। মহারাষ্ট্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই কংগ্রেস ও বিজেপির, তবে এগিয়ে হাত শিবির। উলটোদিকে কেরলে ২০টি আসনের সবকটি কংগ্রেসই পেতে পারে বলে মত অনেকের। তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনের ক্ষেত্রেও একই কথা বলছেন তাঁরা। তেলেঙ্গানার ১৭ আসনে বিজেপি মেরেকেটে ৩টি আসন পেতে পারে। তবে অন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপি ও কংগ্রেসের উভয়ের ভাগ্যেই শূন্য দেখছেন তাঁরা। দক্ষিণে একমাত্র কর্নাটকেই বিজেপির বড় জয় আসতে পারে বলে দেখা গিয়েছে সমীক্ষায়।
আরও শুনুন:
রাষ্ট্রের ‘রা’ আর মাতার ‘মা’ মিলে ‘রামা’, এই নামেই গরুকে ডাকতে চান সন্ন্যাসীরা
নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে যেভাবে তামিল ভাবাবেগের সঙ্গে জড়িত ‘সেঙ্গল’কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাতেই স্পষ্ট হয়েছিল যে মোদি এবার দাক্ষিণাত্য জয় করতে চান। বর্ষশেষের ‘মন কি বাত’-এ বলিউডকে কার্যত ব্রাত্য রেখেই দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন তিনি। রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালেও দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্যের মন্দিরগুলিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনেকের মতে, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে হিন্দুত্বের আবেগ উসকে দিতেই মোদির মন্দির সফরের ধারাবাহিকতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেই সফর কি দক্ষিণ ভারতে বিজেপির জন্য উর্বর জমি তৈরি করে দিতে পারল আদৌ? সাম্প্রতিক সমীক্ষায় যেভাবে দেশবাসীর একাংশের মত উঠে এসেছে, তা কিন্তু ঠিক সে কথা বলছে না। এর মধ্যেই আবার কেন্দ্রের বকেয়া নিয়ে দাবিদাওয়া জানাতে দিল্লিতে ধরনা দিয়েছেন দক্ষিণের তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। লোকসভার আগে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের এই পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজনৈতিক মহল। তবে একদিকে বিজেপি শিবির, আরেকদিকে ইন্ডিয়া জোট, এই দুয়ের টানাপোড়েনের মধ্যে দক্ষিণের মাটিতেও কম ভাঙাগড়া চলছে না। রাম মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে রজনীকান্ত, রামচরণ, প্রভাসের মতো একাধিক দক্ষিণী সুপারস্টারকে। এই অবস্থায় বাকি দেশের মতো দক্ষিণের রাজনীতিতেও কি বইবে গেরুয়া হাওয়া? নাকি এতদিনের মতো এবারেও পদ্মমুক্তই থেকে যাবে দক্ষিণ ভারত? সে উত্তর দেবে সময়ই।